অগ্নিযুগের র্সূয সৈনিক : বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলী

প্রকাশিত: ২:০৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৩

১৯৪১ সালে নেত্রকোণা পৌরসভার ইসলামপুরে জন্মগ্রহণ করা এই কিংবদন্তী ছাত্র ও জননেতার নাম মো: মেহের আলী, পিতা মো: আক্তার আলী, মাতা মোসাম্মৎ তুলাজান বিবি। তার স্ত্রী রওশনারা বেগম। মেহের আলী  Anjuman Adarsha Government High School -এ শিক্ষা জীবন শুরু করেন।

পরবর্তীতে  তিনি স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দত্ত উচচ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। অতপর নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এস.সি সমাপ্ত করার পর এমএসসি-র ছাত্র ছিলেন। তিনি তাদের মালনী রোডের বাসায় থেকে  তার সফল ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলেন। আয়ুববিরোধী আন্দোলন  সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে নেত্রকোণা সফরে এসে এই বাড়ীতে বসেই  গোপন মিটিং করেছেন  সর্বদলীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ। সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মনিসিংহ, আওয়ামীলগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জনাব আব্দুল মমিন, গণতন্ত্রী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব আজিজুল ইসলাম, জনাব আব্দুল খালেক, জনাব এডভোকেট ফজলুর রহমান খান , জনাব এন আই খান, জনাব আব্বাস আলী খান, জনাব মেহের আলী , জনাব এডভোকেট এ কে ফজলুল কাদের, জনাব খালেকদাদ চৌধুরী, জনাব ডা. জগদীশ দত্ত, জনাব মাওলানা ফজলুর রহমান খান, জনাব হাবিবুর রহমান খান  প্রমুখসহ অন্যান্য জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

১৯৫২ সালে ভাষার দাবীতে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তিনি দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ শে ফেব্রুয়ারী নেত্রকোণায় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন ।“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই “ শ্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। তার সহযোদ্ধা যারা ছিলেন তারা হলেন-প্রদ্যোথ নাথ ভাদুড়ী, প্রদীপনাথ ভাদুড়ী,কামাল উদ্দীন আহমেদ,কবি আল আযাদ,আব্দুল আলী তালুকদার প্রমুখ।

শহীদ মেহের আলী  শিক্ষা ও রাজনৈতিক তালিম নেন যথাক্রমে ভাষা সৈনিক সাংবাদিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী ও সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক সাহেবের কাছ থেকে। শহীদ মেহের আলীদের বাড়ী থেকেই নেত্রকোণা তেভাগা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন  তমদ্দুন মজলিসের নেত্রকোণা শাখার সভাপতি, “একুশে পদক” প্রাপ্ত সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভাষা সৈনিক সাংবাদিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী। এই বাড়ীতে তিনি ৮-১০ বছর ছিলেন। নেত্রকোণা  জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক সাহেবও দীর্ঘ ১০/১২ বছর এই বাড়ীতে ছিলেন এবং এখান থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতি হতে দলীয় রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসেন। ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া তৃতীয় বাংগালী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদও দীর্ঘ ২১/২২ বছর (১৯৪৭-১৯৬৯ পর্যন্ত)  এই বাড়ীতে ছিলেন । একুশে পদক প্রাপ্ত জাতীয় সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী ও সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক সাহেবের নেতৃত্বে মেহের আলী  বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন মিছিল    মিটিং এ অংশগ্রহন করতেন্।

জনাব নুরীর মাধ্যমে মেহের আলী যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন তারা হলেন অধ্যক্ষ আবুল কাসেম (ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক -জনাব নুরীর মামাশ্বশুর), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কবি জসীমউদ্দীন, আর্টিষ্ট কামরুল হাসান,সওগাত সম্পাদক মো নাছির উদ্দীন, ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন,ডঃ কুদরত-ই-খুদা, লাঠিবাহিনীর সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক চৌধুরী, শিক্ষাবিদ সেলিনা বাণু প্রমুখ। ঐ সকল জাতীয় ব্যক্তিদের দ্বারা মেহের আলী সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন। তার ডায়েরীর উদ্ধারকৃত কয়েকটি পাতায় লিখিত কবিতা ও গল্প  থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে অনেক প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক নেত্রকোণা সফরের সময় এই বাড়ীতে এসেছেন।

জনাব মেহের আলী পেশাগতভাবে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী হলেও রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে তিনি ঐ পেশায় কাজ করতে পারেননি । তিনি ব্যবসায় মনোযোগী হন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ মেহের আলী সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. ফজলুর রহমানের ছাত্র ছিলেন। একই এলাকায় বাড়ী হওয়ায় তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মেহের আলীর সাথে তিনি প্রথমে গোপনে ও পরে প্রকাশ্যে স্বাধিকার আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন।

তিনি ছিলেন নেত্রকোণা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য, মহেষখলা ইয়ুৎ ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য(ছাত্র ও যুবনেতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা। ১৯৫৯-৬০ সালে মার্শাল’‘ল’ বিরোধী আন্দোলনের সময় কিংবদন্তী ছাত্রনেতা জনাব মেহের আলী, সর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহমেদ, গাজী মোশারফ হোসেন, টি.এ রহমত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান খান, আব্দুস সাত্তার প্রমুখ নেতাদের নিয়ে ছাত্র সংস্থা নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন(যখন দেশে সামরিক আইনের কারনে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তখন এই গোপন সংগঠনটি গড়ে তোলা হয় যার মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হতো) । তিনি ছিলেন নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন)।

ছাত্রলীগের ঐ কমিটির অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দ যারা ছিলেন তারা হলেনঃ সর্বজনাব প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী শামসুজ্জোহা , জামাল উদ্দিন আহমেদ ( জনাব মেহের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবার পর সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়), বিপ্লব চক্রবর্তী, মতিয়র রহমান খান, শহিদ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল ওয়াহেদ, আ: মান্নান, আব্দুর রহমান, আলাউদ্দিন খান, আশরাফ আলী খান খসরু, হায়দার জাহান চৌধুরী (লেখক), ধীমান রঞ্জন বিশ্বাস (ভারত প্রবাসী)।

মেহের আলী ছিলেন জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের  অন্যতম  স্থপতি (১৯৬৪ সালে সর্বজনাব মেহের আলী, শামসুজ্জোহা, হায়দার জাহান চৌধুরী, জামাল উদ্দিন আহমেদ,মতিউর রহমান খান,আশরাফ আলী খান খসরু, গাজী মোশারফ হোসেন, হাবিবুর রহমান খান খসরু, সাখাওয়াত হোসেন এর নেতৃত্বে প্রথম শহীদ মিনারটি স্থাপিত হয়।), মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার  প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। মেলার পরিচালক হিসেবে ছিলেন জনাব এডভোকেট একে ফজলুল কাদের, আর উপদেষ্টা মন্ডলীতে ছিলেন- সর্বজনাব এন আই খান,জনাব আব্দুল খালেক, জনাব খালেকদাদ চৌধুরী, ডা. জগদীশ দত্ত, এডভোকেট ফজলুর রহমান খান,মাওলানা ফজলুর রহমান খান,হাবিবুর রহমান খান  প্রমুখ। জনাব মেহের আলী শামসুজ্জোহাকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আয়েশা খানমকে আহ্বায়িকা করে কমিটি গঠন করে দেন।

পরবর্তীতে  জনাব মতিয়ুর রহমান খানকে আহ্বায়ক ও চামেলী খুরশিদকে আহ্বায়িকা করে কমিটি গঠন করে দেয়া হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে দায়িত্বে আসেন জনাব হায়দার জাহান চৌধুরী ও খনা সেন রায় আহ্বায়ক ও আহ্বায়িকা হিসেবে । পরে আলাউদ্দীন খান ও রেজিয়া রহমান ছবি  আহ্বায়ক ও আহ্বায়িকা হিসেবে দায়িত্বে আসেন। এরপর যারা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে আসেন তারা হলেন-জনাব আনোয়ারুল হক ভূইয়া, জসিম উদ্দীন ভূইয়া, দিলুয়ারুল হক ভূইয়া, এ টি এম মঞ্জুরুল হক, বিপুল সাহা, সাকী,রবিন,ইমু।

জনাব মেহের আলী ছিলেন যুবজাগরণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি(মালনী রোড-বর্তমানে সমিতি ঘরটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে) এবং জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক’৭১ পর্যন্ত (ষাটের দশকে ছাত্রদের পর শ্রমিক ও কৃষক গোষ্ঠী সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এই দুটি গোষ্ঠী নেত্রকোণায় স্বাধিকার আন্দোলন,সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে)।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন মেহের আলী বঙ্গবন্ধুর সাথে একই মঞ্চে বহুবার বক্তব্য প্রদান করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে ভারতের মহেশখলা যাওয়ার পথে মধ্যনগর থানার দুগনৈ গ্রামে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মধ্যনগর সহ আশপাশ এলাকার ছাত্র যুবকদেরকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করবার জন্য। শহীদ মেহের আলী বীর মুক্তিযোদ্ধা  মোঃ আকিকুর রেজা ভুইয়াকে সভাপতি ও জনাব আব্দুল আওয়ালকে সহ-সভাপতি এবং বাদল চন্দ্র দাসকে সাধারণ সম্পাদক  করে মধ্যনগর থানা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে দেন। এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে মেজর মোত্তালিব (পরবর্তীতে যিনি সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন)  ও ক্যাপ্টেন গণীর নেতৃত্বে কয়েকশ সামরিক কর্মকর্তা ও ই পি আর সদস্য  দুগনৈ গ্রামে আসলে মেহের আলী উনার শ্বশুর বাড়ীতে কয়েকদিনের জন্য তাদের  সকলের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং নিরাপদে ট্রেনিংয়ের জন্য ইন্ডিয়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও শহীদ মেহের আলী উনার শ্বশুর  রহমত আলী তালুকদারের বাড়ী থেকে শত শত মণ ধান, চাল, অন্যান্য সামগ্রী মহেষখলা ক্যাম্পে পাঠান যাহা ক্যাম্প পরিচালণায় অত্যন্ত গুরুত্বর্প্ণূ ভুমিকা পালন করে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলী ছিলেন নেত্রকোণার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে একমাত্র শহীদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে অন্যতম (সরকার নির্ধারিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা অনুযায়ী) যিনি বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৭ই মে মহেষখলা ক্যাম্পের নিকট দায়িত্ব পালন কালে আততায়ীর গুলিতে শহীদ হন ।

জনাব মেহের আলী নিহত হওয়ার পরপরই মহেষখলাতে জয় বাংলা বাহিনীর নেত্রকোণা শাখার প্রধান,কোম্পানী কমান্ডার,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি,সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১, নেত্রকোণা জেলার – সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা  মো: শামছুজ্জোহা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মাহমুদ(বুলবুল)সহ প্রমুখকে গ্রেফতার করে হত্যা করার জন্য কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যায়। উল্লেখ্য যে,মুক্তিযুদ্ধের খরচ ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে জাতীয় প্রয়োজনে বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুজ্জোহার নেতৃত্বে বীরমুক্তিযোদ্ধা  বুলবুল ইপিআর সদস্যসহ অন্যান্যদরকে নিয়ে পুলিশের অস্ত্রাগার ও নেত্রকোণার ন্যাশনাল ব্যাংকের ঠড়ষঃ ভেঙ্গে টাকা পয়সা , সোনা  লুট করেন যে ঘটনাটি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে।(“মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণা” বইটিতে  সাবসেক্টর কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা  হায়দার জাহান চৌধুরী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন)। নেত্রকোণাবাসী শহীদ মেহের আলী-র হত্যাকারীদের ক্ষমা করেননি। স্বাধীনতা লাভের অল্প কয়েকদিন পর তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম এরশাদুর রহমানের নেতৃত্বে সেইসব ঘাতকদের জনসম্মুখে হত্যা করা হয়েছিলো।

শহীদ মেহের আলীর  সুযোগ্য সন্তান এম কে জামান  অস্ট্রেলীয়াতে একজন সফল  ইঞ্জিনীয়ার  এবং অধ্যাপনায় নিযুক্ত আছেন। বিশ্বমানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থা  Amnesty International and Green Peace -এর সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। Bangladesh Martyrs Memorial Research Center and Bangladesh Muktijudho Research Institute-প্রতিষ্ঠান দুটির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, জাতির বীর সন্তানদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কাজ করে যাচ্ছেন । ইঞ্জিনীয়ার  জামানকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য “বিজয় একাত্তর সম্মাননা-২০২২” , “বীর মুক্তিযোদ্ধা মালিক খসরু মিলেনিয়াম সম্মাননা ২০২২“ এবং ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমি সম্মাননা স্মারক ২০২২ প্রদান করা হয়। ইঞ্জিনীয়ার  জামান বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ইন্সটিটিউট সিলভার এওয়ার্ড পদক-নামে একটি পদক চালু করেছেন। শহীদ মেহের আলীর আরেক সন্তান এডভোকেট।

ষাটের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদান ও মুক্তিযু্দ্ধে জীবন বিসর্জনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিক্রমে নেত্রকোণা পৌরসভা ১৯৯৮ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে অজহর রোডের মোড় থেকে পূর্বদিকে ইসলামপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটির নামকরণ করেছে – মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী সড়ক। স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদান ও মুক্তিযু্দ্ধে জীবন বিসর্জনের জন্য “বিজয় একাত্তর সম্মাননা-২০২২”  এবং ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমি সম্মাননা স্মারক ২০২২ প্রদান করা হয়। মাননীয় সংসদ সদস্য  হাবিবা রহমান খান(শেফালী) ২০১৫ সালে  নেত্রকোনা চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের একটি গেইটের নামকরণ করেন “বীর মুক্তিযোদ্ধা  মেহের আলী  গেইট”, শহীদ মেহের আলী স্মৃতি পরিষদ ও শহীদ মেহের আলী স্মৃতি যুব জাগরণ সমিতি, মালনী রোড(বর্তমানে সমিতি ঘরটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে) নামে দুটি সংগঠন গড়ে তোলা হয় । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে শহীদ মেহের আলীর পরিবারের জন্য এক হাজার টাকা সম্মানী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল।

লেখকঃ অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার, সভাপতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, নেত্রকোণা।

[লেখাটি নেত্রকোণার অহংকার জাতীয় সাহিত্যিক বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,মহেষখলা ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য জনাব খালেকদাদ চৌধুরীর অমরগ্রন্থ “শতাব্দীর দুই দিগন্ত“, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক  অধ্যাপক ননী গোপল সরকারের প্রবন্ধ অগ্নিযুগের সূর্যসৈনিকঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলী, মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক : ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী , প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা, মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনী, হায়দার জাহান চৌধুরীর প্রবন্ধ “শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস ,“মহেষখলা ক্যাম্প ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খালেকদাদ চৌধুরী এবং মেহের আলী প্রসঙ্গ“, “ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ,নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু, নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীঃ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ইনস্টিটিউট, অস্ট্রেলিয়া, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমানের মুক্তিসংগ্রামে নেত্রকোণা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসানের গ্রন্থ “ মুক্তিযুদ্ধে মোহনগন্জ-মহেষখলা ক্যাম্প ও ডাঃ আকলাখ হোসেন আহমদ “, ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “,অসমাপ্ত গল্প” , প্রখ্যাত সাংবাদিক কুন্তল বিশ্বাসের প্রবন্ধ “ নেত্রকোণায় ভাষা আন্দোলন”-ভাষা সংগ্রামে নেত্রকোণা ২০০৮ স্মারকগ্রন্থ, ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলো”-আমাদের ময়মনসিংহ জনুয়ারী ২০১৬, জাতীয় সাহিত্যিক একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক সানাউল্লাহ নূরী  সাহেবের বিবৃতি “ নেত্রকোণায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেহের আলীর স্মরণসভায় সানাউল্লাহ নূরী-  ২৬-০৬-১৯৯৪ দিনকাল,  মধ্যনগর থানা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের  সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আকিকুর রেজা ভূইয়ার বই “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা”(যিনি বাংলাদেশ সচিবালয়ের আমলা হিসেবে অবসর গ্রহন করেন।),বিভিন্ন জাতীয় ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎাকার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎাকার, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা,টিভি সংবাদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও,অডিও ও মেহের আলীর ডায়েরী অবলম্বনে লেখা হয়েছে।]