অজানা রোগে ভুগছে শিশু সুরাইয়া: সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের আকুতি স্বজনদের

প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

মোঃ নুর উদ্দিন মন্ডল দুলালঃ
মাত্র ৬ বছর বয়স সুরাইয়ার। দেখতে অন্য দশটা মেয়ের মতো দেখা গেলেও তার শরীরে বাসা বেঁধেছে এক অজানা রোগ। নিজের হাঁটু ও হাত দিয়ে নিজেই সজোরে আঘাত করে তার শরীরে ও মুখমন্ডলে। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে প্রায়ই শরীর থেকে রক্ত বেয়ে পরে। জন্মের ২ দিন পরেই সুরাইয়ার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এর কয়েকদিন পর থেকেই অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয় তার মাঝে। এমনই এক দুর্বিঃসহ জীবন পার করছে শিশু সুরাইয়া।

বলছি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলাধীন বিশকাকুনী ইউনিয়নের কোণাডহর গ্রামের মোঃ সুহেল ও লাকি দম্পত্তির বড় মেয়ে সুরাইয়ার কথা। তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান সুরাইয়া ও সুমাইয়া, সুহেল ও লাকি অভাবের তাড়নায় ঢাকার বসুন্ধরায় থাকেন। সেখানে সুহেল ফিকআপ ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ যোগাচ্ছেন। তাদের সাথে থাকে আড়াই বছর বয়সী ছোট মেয়ে সুমাইয়া। বড় মেয়ে সুরাইয়ার এমন রোগের জন্য তাদের কাজের অসুবিধা হবে, সেজন্য নানার বাড়ি রেখে গেছেন সুরাইয়াকে। ৩ বছর ধরে নানা-নানীর যত্নেই বড় হচ্ছে সুরাইয়া। এদিকে সুরাইয়ার নানা-নানীও বৃদ্ধ এবং অসহায়। নিজেদের ভরণ-পোষণেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। সব মিলিয়ে অসুস্থ সুরাইয়াকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে উভয় পরিবার।

সুরাইয়ার মা লাকী ফোনের মাধ্যমে জানান, অভাবের সংসারে আলোকিত করে আসে তাদের প্রথম কন্যা সন্তান সুরাইয়া। কিন্তু জন্মের দু’দিন পর দেখা দেয় নিউমোনিয়া, তাড়াতাড়ি স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আবার পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পরে কিছুটা স্বাভাবিক হলে চলে আসি নিজ বাড়িতে। কিছুদিন যেতেই সুরাইয়ার এই অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। দিন যত যাচ্ছে আমার মেয়েটি নিজেকে ততই বেশি আঘাত করছে , নিজেই নিজেরে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। তার পাশে একজনকে সবসময় থাকতে হয়। তাছাড়া সে কথাও বলতে পারে না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। দেশবাসীর কাছে শুধু চিকিৎসা সহায়তা চাই যেন আমার মাইয়্যাটা সুস্থ হয়ে উঠে। মাইয়্যাটা সুস্থ হলে আর কিছু লাগবো না জীবনে।

সুরাইয়ার নানা আঃ রহিম বলেন, ৩ বছর ধরে আমি খুব কষ্ট করে পালতাছি। ওর মা বাবা ঢাকায় থাহে। আমরা গরীব মানুষ কামাই নাই। খুব কষ্ট করে চলতাছি। নাতনীর কষ্ট দেইখ্যা সহ্য হয়না। দশের সাহায্যে যদি নাতনী ডা বালা হয় তাইলে আমরা অনেক খুশি হইতাম। মেয়েডা সবার মতো ইস্কুলে যাইতে পারবো।

এলাকাবাসী জানান, সুরাইয়া তার নানার কাছে থাকে। আমরাও প্রতিবেশী হিসেবে দেখছি মেয়েটার কি পরিমাণ কষ্ট হয়। হাতে ও হাঁটুতে ক্ষতের চিহ্ন দেখা যায়। কি রোগ হয়েছে তা জানিনা। এর আগেও পূর্বধলার লেটিরকান্দায় এমন একটি রোগী দেখেছি। শুনেছি পূর্বধলার ইউএনও স্যার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আমরা চাই সুরাইয়ার ও ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা হউক এবং সে সুস্থ হয়ে উঠুক।