অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
ইসলামিক জার্নাল ডেস্কঃ
জালিম শব্দটি আরবি। ‘আজ-জুল্মু’ মাসদার বা শব্দমূল থেকে উদ্গত। যার আভিধানিক অর্থ ‘অত্যাচার করা, উৎপীড়ন করা, নিপীড়ন করা, নির্যাতন করা, দুর্ব্যবহার করা।’ পরিভাষায় : যেসব মানুষ কারো প্রতি অত্যাচার, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে জালিম এবং যাদের প্রতি তা করা হয় তাদেরকে মাজলুম বলে।
ইলমুছ-ছরফ বা আরবি শব্দ প্রকরণ অনুসারে ‘আজ-জুল্মু’ শব্দটি ক্রিয়াবাচক, জালিম শব্দটি কর্তৃবাচক এবং মাজলুম শব্দটি কর্মবাচক হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। কারো কারো মতে- জুলুম শব্দের অর্থ আল-জাওরু (অত্যাচার করা) বা আদামুল ইনসাফ (অবিচার করা)। পরিভাষায় কোনো বস্তুকে তার উপযুক্ত স্থানে
সাধারণত বড়রা ছোটদের ওপর, শক্তিশালীরা দুর্বলদের ওপর, ধনীরা গরিবদের ওপর, মালিকরা কর্মচারীদের ওপর, শাসকরা জনগণের ওপর জুলুম করে থাকে। যে ব্যক্তি জুলুম করে তাকে বলা হয় ‘জালিম’ আর যার প্রতি জুলুম করা হয় তাকে বলা হয় ‘মাজলুম’।
কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা জালেম ও জুলুমের এসব পরিণতি ও প্রতিদানের কথা যেমন তুলে ধরেছেন আবার তা থেকে ফিরে আসার বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাষায় উল্লেখ করেছেন এভাবে-> کَیۡفَ یَهۡدِی اللّٰهُ قَوۡمًا کَفَرُوۡا بَعۡدَ اِیۡمَانِهِمۡ وَ شَهِدُوۡۤا اَنَّ الرَّسُوۡلَ حَقٌّ وَّ جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ, অর্থাৎ কেমন করে আল্লাহ সে কওমকে হেদায়াত দেবেন, যারা ঈমান আনার পর কুফরি করেছে, আর তারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, নিশ্চয়ই রাসুল সত্য এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। আর আল্লাহ জালিম কওমকে হেদায়াত দেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৬)
اُولٰٓئِکَ جَزَآؤُهُمۡ اَنَّ عَلَیۡهِمۡ لَعۡنَۃَ اللّٰهِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ
‘এরাই তারা, যাদের প্রতিদান হলো- নিশ্চয়ই তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৭)
> خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ۚ لَا یُخَفَّفُ عَنۡهُمُ الۡعَذَابُ وَ لَا هُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ
‘তারা তাতে (আল্লাহর অভিশাপে) স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আজাব শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৮)
> اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ وَ اَصۡلَحُوۡا ۟ فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘কিন্তু তারা ছাড়া যারা এরপর (জুলুমের বিষয়টি বুঝার পর) তাওবা করেছে এবং (নিজেদের ভুল) শুধরে নিয়েছে। তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৯)
> اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بَعۡدَ اِیۡمَانِهِمۡ ثُمَّ ازۡدَادُوۡا کُفۡرًا لَّنۡ تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ ۚ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الضَّآلُّوۡنَ
‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে ঈমান আনার পর, তারপর তারা কুফরীতে বেড়ে গিয়েছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই পথভ্র২ য় খন্ড
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
পরিশেষে, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
সংকলন:
মাও: আবু তাহের নেত্রকোণী
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখক, ইসলামিক জার্নাল বিভাগ
নেত্রকোণা জার্নাল।