১৯৪৩ সাল থেকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের (হাসিম—সোহরাওারদী) সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
১৯ বছর বয়সে ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর হিসেবে তিনি ১৯৪৫ ও ১৯৪৭ সালে দিল্লী কনভেনশনে যোগ দেন। এই কনভেনশনে শেখ মুজিবুর রহমান ও কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।(বিস্তারিত জানতে অসমাপ্ত আত্মজীবনী দেখতে পারেন।)
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৮ সালেই তাজউদ্দীন আহমদ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। তাজউদ্দীন ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তাদের অন্যতম। ১৯৫৪-৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ছাত্র তাজউদ্দীন সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ এর পিতা ফকির আবদুল মান্নানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯,০৩৯ এবং ফকির আবদুল মান্নান ৫,৯৭২ ভোট পান।
তাজ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার কারণে তার এমএ পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমএলএ নির্বাচিত হয়েও তিনি আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে নিয়মিত ক্লাস করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে তিনি আইন শাস্ত্রেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পেশায় তিনি আইনজীবী ছিলেন।
১৯৫৯ সালে এপ্রিলের ২৬ তারিখে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সৈয়দা জোহরা খাতুনের বিয়ে হয়।
১৯৫৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৮ সালে তাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দলের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যও সফর করেন। এ দলে শেখ মুজিবও ছিলেন।
১৯৬৪ সালে তিনি পুনরিজ্জিবিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালে তিনি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনেই শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফা উত্থাপন করেন।
৬ দফার কট্টর সমর্থক এ বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
ছয় দফার প্রচারাভিযানের সময় ১৯৬৬ সালের ৮মে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। মুক্তি পাওয়ার পর তাজউদ্দীন শেখ মুজিবের মুক্তির দূতিয়ালি করেন নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ আর খানের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেন এবং কারাগারে শেখ মুজিবের সাথে বৈঠক করে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
এরপর ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়ন বোর্ডের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ওই নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২৫ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হওয়া অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলনে নিজেকে উজার করে দেন। এই অসহযোগ আন্দোলনে সাংগঠনিক দিকগুলো পরিচালনা ও জনগণের কর্তৃত্বের ৩৫ দফা নির্দেশাবলি প্রণয়নে তাজউদ্দীন আহমদ অতুলনীয সাংগঠনিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালেই পাকিস্তানের সামরিক শাককদের সঙ্গে ঢাকায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়। ১৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই আলোচনায় শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন সহযোগী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ অতুলনীয় বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার পরিচয় দেন।
শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের মূল দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দীন আহমদের ওপর। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং ওই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা স্থানীয় জনগণ এবং শত শত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি সংসার সেই সময়ের জন্য ত্যাগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, সেই মন্ত্রিসভায় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের সমাজতন্ত্রীরা তাকে নতুন দলে আমন্ত্রন জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৪ সালে দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অপ্রিয় সত্য কথা বলে দলে অবস্থান দুর্বল করে ফেলেন। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী ঋণ ও সাহায্য নিতে অস্বীকৃত হন।
১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিত্বের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলকারী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। একই দিন সকালে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দী করা হয় এবং পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দী অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩ সভেম্বর কারাগারের সব নিয়ম ভঙ্গ করে বর্বরতার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলে অপর তিন জাতীয় নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান সহ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, নেত্রকোণা - ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার মোড়, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা-২৪০০। ফোনঃ ০১৭৩৫-০৭৪ ৬০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫-৮৮ ৪০ ৫০, ই-মেইল: netrokonajournal@gmail.com
সম্পাদক কর্তৃক এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত..... [সর্বাধিক পঠিত নেত্রকোণার একটি আঞ্চলিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম]