আন্দোলনে নিহত দুর্গাপুরে জাকিরের উপার্জনে কেনা জমিতে ঘর পাচ্ছে গৃহহীন মা

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২৫

রাজেশ গৌড়
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত জাকির হোসেনের কেনা জমি ও তার কবরের পাশে একটি ঘর নির্মাণ করছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এই ঘরে থাকবেন তার গৃহহীন মা।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে বাকলজোড়া ইউনিয়নের পূর্ব বাকলজোড়া গ্রামে জাকিরের মায়ের কাছে ঘর নির্মাণসামগ্রী তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর।

এ সময় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মাশুল তালুকদার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি তোবারক হোসেন খোকন, সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি দিলোয়ার হোসেন তালুকদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল খান রুদ্র, হীরা আব্বাসীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জাকির মৃত ফজলু মিয়া ও মিছিলি বেগমের একমাত্র ছেলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন জীবিকার তাগিদে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় কাজ করতে চলে যান মিছিলি। মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন তিনি। জাকির ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের কাঁচপুর সেতুর কাছে ঠিকাদারের অধীনে ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ করতেন।

ছেলের উপার্জনের টাকা একটু একটু করে জমিয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে কিনেছিলেন জমি কিন্তু সেখানে করা হয়নি কোনো ঘর নির্মাণ। কোটা আন্দোলনে ২১ জুলাই বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জাকির।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে না থাকায় কষ্টে দিন কাটছে মিছিলির। নিজের ঘর নেই, রাতে থাকতে হয় স্বজনদের বাড়িতে। ছেলের উপার্জনে কেনা জমিতেই দাফন করা হয়েছে জাকিরকে। সেই কবরের পাশেই একটি ঘরে করে থাকার ইচ্ছে মায়ের। অবশেষে পূর্ণ হচ্ছে সেই ইচ্ছে।

মিছিলি বেগম বলেন, ‘আমি এখন ঘর পাইতেছি, কিন্তু ছেলে তো নাই আমার। ভিটেমাটি না থাকায় ছোট জাকিরকে নিয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম।

মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে বড় করেছি, কাজ শিখিয়েছি। ছেলের কাজের টাকা দিয়ে গ্রামে ঘর তৈরির জন্য জমি কিনেছি। কিন্তু ঘর নির্মাণের আগেই আমার ছেলে দুনিয়া থেকে চলে গেল।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ জাকিরের মায়ের বসবাসের জন্য ঘর নেই, তার মায়ের করুন অবস্থা জানতে পেরে মান্যবর জেলা প্রশাসক স্যার তাকে একটি ঘর দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে আজকে ঘর নির্মাণসামগ্রী হস্তান্তর করেছি। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের কাজ সম্পূর্ণ হবে।