আমার জানা মতে সে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল

কেন্দুয়ায় দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে প্রশংসাপত্রে অধ্যক্ষ লিখলেন ‘সে শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল'

প্রকাশিত: ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ‘গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান ভূইয়া তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিশোধ নেন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ওই শিক্ষার্থীর ওপর। পরীক্ষা পাশের পর ওই শিক্ষার্থীর প্রশংসাপত্রে অধ্যক্ষ লিখে দেন ‘আমার জানা মতে সে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল’।

নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করে। শুরু হয় মানববন্ধন। প্রতিবাদের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। চারদিকে সমালোচনা শুরু হলে এক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে টাকা নেওয়া বন্ধ করে। টাকা নেওয়া বন্ধ হলেও ঘটনার রেশ রয়ে যায়। যা থেকে অধ্যক্ষ এমন কাজ করেছেন।

এমন প্রশংসাপত্র হাতে পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শিক্ষার্থী রাকিব হাসান। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে নানা সমাোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

রাকিব হাসান উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে। সে এবার গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডে জিপিএ ৪.৩২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

বিষয়টি জানিয়ে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষাথী রাকিব হাসান।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরি জালাল অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগে শিক্ষাথী রাকিব হাসান জানায়, গত এপ্রিলে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রবেশপত্র বিনামুল্যে বিতরণ করার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবেশপত্র বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এমন অনিয়মের প্রতিবাদ জানাই। আমার সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরাও যোগ দেয়। এক পর্যায়ে মানববন্ধ শুরু হয়। গণমাধ্যমে সেই প্রতিবাদ প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে টাকা নেওয়া বন্ধ হয়। এসব ঘটনায় অধ্যক্ষ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হন। পরীক্ষার খাতায় অনেক বিষয়ে প্র্যাকটিক্যাল মার্ক আমাকে নামমাত্র দেওয়া হয়। দুই-একটি বিষয়ে প্র্যাকটিক্যাল নাম্বার একেবারেই দেওয়া হয়নি।

এসএসসি পাশ করার পর শেরপুর কৃষি ইন্সটিটিউটে ভর্তির সুযোগ পাই। ভর্তির জন্য মার্কশিট ও প্রশংসা পত্রের প্রয়োজন হয়। গত সেপ্টেম্বরে মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র আনার জন্য গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যাই। অফিস সহকারী আমাকে দু’দিন ঘোরানোর পর মার্কশিট দিয়ে বলেন, অধ্যক্ষ প্রশংসাপত্র দিতে নিষেধ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কয়েকজন জানালেন, অধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে তার পা ধরে ক্ষমা চাইলে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। কারণ প্রবেশপত্র বিতরণের সময় প্রতিবাদের কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন। সেকারণে ক্ষম চাইলে প্রশংসাপত্র মিলতে পারে।

শিক্ষাথী রাকিব হাসান আরও জানায়, ১ অক্টোবর শেরপুর কৃষি ইন্সটিটিউটে ভর্তি হওয়ার শেষ সময় ছিল। প্রশংসাপত্র না পেলে ভর্তি অনিশ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে ২৭ সেপ্টম্বর ইউএনও’র কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগ দেওয়ার পর আমাকে প্রশংসা দেওয়া হলো। কিন্তু প্রশংসাপত্রে অধ্যক্ষ লিখে দেন-‘আমার জানা মতে সে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল’। প্রশংসাপত্র হাতে পাওয়ার পর মনে করছিলাম হয়তো প্রিন্টে ভুল হয়েছে। অধ্যক্ষ স্যারের কাছে গিয়ে বললাম স্যার প্রিন্টিংয়ে ভুল হয়েছে। জবাবে তিনি বললেন, ভুল হয়নি, যা দিয়েছি সেটাই ঠিক আছে। এমন ঘটনায় ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবার অভিযোগ দিয়েছি।

রাবিকবের প্রশ্ন- অনিয়মের প্রতিবাদ করা তো কোনো অন্যায় নয়। শিক্ষক বাবার মতো তিনি কিভাবে সন্তান সমান শিক্ষার্থীকে প্রতিপক্ষ মনে করে এমন প্রতিশোধ নিলেন।

এ বিষয়ে গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, প্রত্যয়ন যেমন ভালো দেওয়ার সুযোগ আছে, তেমনি খারাপ দেওয়ারও সুযোগ আছে। দুর্নীতির প্রতিবাদের কারণে এমনটা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন শোনার পর- আমার পায়ে একটু ব্যথা পরে কথা বলব বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কেন্দুয়া উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান ভূইয়াকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরাই তো অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করবে এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শিখে বড় হলে দেশ একদিন দুর্নীতি মুক্ত হবে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে অনিয়মের প্রতিবাদ করার জন্য প্রশংসাপত্রে এমনটা লিখে থাকলে এটা খুবই দুঃখজনক ও বিব্রতকর।

এ বিষয়ে কেন্দুয়ার ইউএনও কাবেরি জালাল বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ দিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় একজন অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমনটা করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।