আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা : কবর, মাজারে সিজদায়ে তা’জিম, ইসলাম কি বলে? 

প্রকাশিত: ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৩

ইসলামিক জার্নাল ডেস্কঃ
কবর জিয়ারত মুসলমানের জন্য সুন্নত। কিন্তু কবরকে সেজদা করা যাবে না। কবরকে উদ্দেশ্যে করে নামাজ পড়তে পারবে না। চাই মৃত ব্যক্তি যতো বড় অলী-বুজুর্গ হোন না কেন। ইসলাম আল্লাহকে ছাড়া কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দেয়নি। সৃষ্টিকে সেজদা করা হবে হারাম বা কুফরি। একইভাবে কবরের ওপর পাকা করা, কবরকে কেন্দ্র করে ঘর বা মাজার নির্মাণ করাও ইসলাম সমর্থিত নয়।

কবর সেজদাকারীর প্রতি আল্লাহর অভিশাপ : কবরকে সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। কবরে সেজদাকারীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিশম্পাত দেন। কারণ, ইহুদি-খ্রিস্টানরা নিজেদের নবীর কবরকে সেজদা করত, যার ফলে তারা অভিশপ্ত হয়েছে। সুতরাং একজন মুসলমানের পক্ষে কখনও কবরকে সেজদা করা সম্ভব নয়। এ শিরক কাজে লিপ্ত হতে পারে না।

এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন ‘সাবধান! তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের নবীগণ ও সৎ ব্যক্তিদের কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত করা হয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি।’ (মুসলিম : ১২১৬)। আরও বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যে রোগ থেকে সেরে উঠেননি, সে রোগে (জনৈক ইহুদি নারী কর্তৃক বিষ প্রয়োগে) আক্রান্ত অবস্থায় বলেছেন আল্লাহর অভিশাপ হোক ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি। কেননা, তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত করেছে।’ (বুখারি : ১৩৪৩; মুসলিম : ১২১২)

কবরের ওপরে বাতি জ্বালানো নিষেধ : কবরের ওপর বাতি জ্বালানো হারাম। কবরের ওপর পুষ্পস্তবক প্রদান করাও ইসলাম সমর্থন করে না। মৃতের কবরে বাতি জ্বালানো বা বৈদ্যুতিক লাইট দ্বারা সজ্জিত করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন ওই সব স্ত্রী লোকের প্রতি যারা কবর জিয়ারত করতে যায় এবং ওই সব লোকের প্রতি যারা কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করে ও বাতি জ্বালায়।’ (আবু দাউদ : ৩২৩৮; তিরমিজি : ৩২১; নাসায়ি : ২০৫৫)। হাদিসে আরও আছে, হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কবরে চুনকাম করতে, এর ওপর ঘর তুলতে এবং এর ওপর বসতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম : ২২৮৯)

ইসলামে কবর পূজার স্থান নেই : প্রাক ইসলামী যুগে বিভিন্ন দেব-দেবী, গাছ, পাথর ইত্যাদির পূজা করা হতো। তখন ধর্মের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যার দরুন তারা ধর্মহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। বর্তমানেও অনেকটা সে অবস্থায় বিরাজমান। এর মধ্যে কবর বা মাজার পূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অলী-বুজুর্গদের কবরকে কেন্দ্র করে মাজার গড়ে ওঠেছে। আবার সেখানে সেজদা দেওয়ার প্রথাও চালু রয়েছে। অথচ এ সেজদা প্রথা শিরক। এটাকে হাদিসের ভাষায় ‘প্রতিমা পূজা’ বলা হয়েছে। এ প্রতিমা পূজা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম।

যারা কোরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সমূহের কোন ব্যাপারে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করে বা সমকক্ষ করে বা সামঞ্জস্য করে তারাই মুশরিক। হতে পারে তা অন্তরের বিশ্বাসে বা কথায় বা কাজে। যারা মুশরিক অবস্থায় মারা যাবে আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তারা চিরকাল জাহান্নামে বসবাস করবে।

নিশ্চয়ই সেজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না।’ (সুরা জিন : আয়াত ১৮)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরিনে কেরাম বলেছেন, ‘উল্লেখিত আয়াতে সেজদার স্থান বলতে সেজদার সময় ব্যবহৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বুঝায়। আর আল্লাহ তাআলাই এগুলোর একমাত্র মালিক। অতএব এ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সেজদা করা যাবে না।’ ইবনে কাসীর, কুরতুবী, রুহুল মাআনী)

‘আল্লাহ তাআলার অভিশাপ ইয়াহুদি ও নাসারাদের ওপর। তারা তাদের নবীগণের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছে।’ (বুখারি)

হজরত জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর ইন্তেকালের তিনদিন আগে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি।’ (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসদ্বয়ে প্রিয়নবি যেখানে নবীদের কবরকে সেজদার বানানোর কারণে প্রিয়নবি ইয়াহুদি ও নাসারাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। কবরকে সেজদার স্থান বানাতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। সেখানে বর্তমান সময়ে পীরের পায়ে, আসনে এবং কবরে সেজদা করাকে কল্যাণ লাভের উপায় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অথচ তা কতটা মারাত্মক তা ঈমানদার মুসলমান মাত্রই অনুমেয়। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বুঝা যায় যে, পীর বা মাজারে যে কোনো ধরনে সেজদা করা হারাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কারো জন্য (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সেজদা করা বৈধ নয়। যদি কারো (অন্যকে সেজদা করা বৈধ হতো তবে আমি স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের সেজদা করার আদেশ করতাম। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীর উপর স্বামীর অনেক বড় হক ন্যস্ত করেছেন।’ (ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ)

পরিশেষে…সেজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে সেজদা করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। আর গাইরুল্লাহকে সেজদা করা কুরআন-হাদিসে অকাট্য হারাম প্রমাণিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুধুমাত্র তারই সেজদা করার তাওফিক দান করুন। গায়রুল্লাহর সেজদা থেকে হেফাজত করুন। শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন।

 

সংকলন:
মাও: আবু তাহের নেত্রকোণী
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখক, ইসলামিক জার্নাল বিভাগ
নেত্রকোণা জার্নাল