১
প্রিয়তমার সমীপে
হাসপাতালের শক্ত বিছানায় জবুথবু হয়ে,
দূরের প্রকাণ্ড হিজলের ডালে,
কোকিল দম্পতির খুনসুটি অবলোকনে-
ভাবোদয় হয় পৃথিবীতে এখনো প্রেম আছে।
রুটিন করে ডাক্তারের দেখাশোনা,
আত্মীয়ের বেদনাহত মুখের দর্শনে,
বুঝতে বাকি নেই-
পৃথিবীতে আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে।
মৃত্যুর অপেক্ষায় আমি,
অসংখ্য স্বজনের ভিড়ে,
চোখ যুগল জ্বলজ্বল করছে-
তুমি যে নির্ঘুম রাতের অবসান করছো।
পৃথিবীর বুকে গল্প রচাতে কত চেষ্টা,
কত রাতের নির্ঘুম কাটানোর ফলে-
স্বপ্ন সাজানো যেত পৃথিবীর আস্তরণে,
বোবা স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যাবে।
তোমার সমীপে,
আজকের অব্যক্ত কথাগুলো,
মরণের বিছানায় তোমায় বলতে পারছি-
এই হলো সুখানুভব।
ত্রিশ বছরের যাপিত জীবনে,
শত অনুযোগ, অনাহার-
এক সাথে বাঁচার স্বপ্ন বোনার ক্ষণে,
তোমার সাহচর্য শক্তি দিয়েছিলো।
জানি বোধহয় শেষ নিঃশ্বাস গুনছি,
আত্মীয়ের চোখে বিষাদ চিহ্ন,
তোমার হাতে হাত রেখে বলছি-
ভালোবাসি।
তুমি বেঁচে থেকো সুখে-
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে দেখো-
ঠিক জারুল তলায়,
মাটির বুকে মিশে রবো তোমার অপেক্ষায়।
২
সু্রূপার জন্য একগুচ্ছ কাশফুল
সুরূপার মন খারাপের দিনে,
নিজের অজান্তেই বেদনাবোধ করি-
শক্তিধর দেহটা অহেতুক অসাড় হয়ে যায়,
চেনাজানা রাস্তা বন্ধুর মনে হয়।
সুরূপার ভালো দিন গুলোতে-
কবিতার খাতায় শরত আয়োজন,
নীল আকাশের বিশাল বুকে কথা জমে-
চারদিকে শত কুজনে তোমার অনুভূতি।
আজ,
সুরূপাকে বড্ড মনে পড়ছে,
শরতের নীল আকাশের মেঘেদের বিচরণে,
শুভ্র কাশের মনোহর সৃজনে।
সুরূপার জন্য শরত নিবেদন,
এক গুচ্ছ কাশের মোলায়েম স্পর্শে-
বিমোহিত হয়ে যাক সুরূপা।
বয়সটা স্থির নেই,
কয়দিন আর রবো পৃথিবীতে বিরাজমান?
শরতের কত পালাবদল হবে-
কতক কাশের বনেতে স্মৃতিচিহ্ন পড়বে মানুষের।
আচ্ছা সুরূপা,
যদি কাশের বিলীনে উদাস হয়ে যাই,
তবে কি?
আমার দেওয়া শুকনো কাশ ফুল গুলোতে স্মৃতিরোমন্থন করবে?
যদি করো-
যতকাল রবো বেঁচে শরতের আগমনে,
তোমার জন্য শত যত্নে রাখবো-
এক গুচ্ছ কাশফুল।
৩
বিভোল নেত্র!
অজস্র কথায় স্বরচিত একটি কবিতায়-
আমার চয়িত শব্দ গুলোর নিবেদন
নিপুণা লক্ষ্মী আত্মাটার জন্য-
যাকে রূপিণী মানবী রূপে উন্মোচন করি।
বহুপক্ষীয় চিন্তার রসদে
কতক মনুষ্য সৃজিত বয়ানে-
পারিপাট্য ‘ডাগর চোখ ওয়ালী’-মনোহরা,
চোখ দু’টোতেই স্বপ্ন দেখি,জীবন-বিনিময়ে।
অকারণে আজ কথাদের নিমন্ত্রণ,
অজানা গন্তব্যে বিলিন হউক স্বপ্ন সমেত
তুমি আছো বিচক্ষণ এক কবির নয়ন জুড়ে-
আমার কণ্ঠ রুদ্ধ!
প্রতিনিয়ত স্বপ্নের সংঘাত-
ডাগর,ডাগর চোখ জোড়া-
অস্তিত্বহীন আমি!
তাই,
কবিদের দরবারে বিচারের অপেক্ষারত,
যে চোখ স্বপ্নে-স্মরণে,
শান্তির বারতা বয়ে আনে,
সেই চোখ একান্ত আমারই-উপমায় সাজাবো!
প্রাণ-স্পন্দনে,কবিতার খাতায়,
আমি সাক্ষী রবো-সহস্র বছর!
ডাগর চোখ যুগল-
নিরীহ আমাতে ঘুমহীন রাতের নির্বাসন।
৪
আজও ভালোবাসি!
বছর তিরিশ!
মনে হয় দিন কয়েক,ঋতুবদল হয় হয় ভাব,
শীতার্ত মানুষের মতোই জবুথুবু অবস্থা-
প্রথম প্রসবকাল!
কেরোসিনের বাতিটা নিবুনিবু করছে,
দূরের পাড়া থেকে দাত্রী’র আগমন,
অসহায়!
ক্ষণিক পর পর অসহ্য চিৎকার-
নামাজের ঘরে মায়ের অসহায় আর্জি,
নাতি,বউ যেন বেঁচে ফিরে-খোদা দয়াময়।
ঘন্টা দুই যন্ত্রণাক্লিষ্টে জর্জরিত হয়ে-
নতুন প্রাণে জননীর প্রথম বলিদান।
অভাবের সংসার,
কত কিছুই কেনা হয়নি,দু’বেলার ভাত জুটেনা মাঝেমাঝে!!
বেড়ার ঘরেতে আমার সুখের বসবাস-
ভালোবাসায় আবেশিত প্রতিক্ষণ।
আজো মনে পড়ে,
কত বোকা বোকা আবদার,হাত শক্ত করে ধরে রাখা,
ওগো,
মরণের পরে তুমি ভুলিও না আমায়-
কেয়ামত দিবসে খুজে নিও,
আজ তিরিশ বছর পরে,
ষাটোর্ধ বৃদ্ধার পাশে তুমি-
ষোড়শী বালিকার ন্যায়-চঞ্চল,মনোহরা।
যদি….
আরো শতেক বসন্ত বেঁচে থাকার অনুমতি পেতাম-
নতুন স্বপ্ন সাজাতাম মহাত্মা সৃজনে।
আজো ভালোবাসি!
তোমার জন্য চর্চিত কয়েক লাইন…
চলে যাওয়ার নিমন্ত্রণে,
মরণ দূতের সাড়ায় বাকহীন পরে রবো,
তোমার পানে তাকিয়ে-
অসহায় চোখের ভাষায়,
বলবো,খুব ভালোবাসি আজও!
খু্ব ভালোবাসি!!
৫
লক্ষ্মীটির অসুখ বেঁধেছে
বসন্তের বিদায় কিংবা পাতা ঝরা শীতে,
আমি একটুও মন খারাপ করি না,
নতুনত্বের সৃজনে হারানোতে সুখ-
পৃথিবীর গল্প গুলো এভাবেই চলছে।
সেদিন শুনেছি আমি,
কথাদের সাথে মনোমালিন্যে যুবকের আত্মাহুতি,
পৃথিবীতে ঝরে এমনই কত প্রাণ-
ভাবি,মন খারাপ করি না।
তবে আজ স্থির নেই,
মানস থেকে কথাদের জড়তা,
খারাপত্ব নিরূপনযোগ্য কিনা বুঝছি না-
পৃথিবীটা অন্যরকম লাগছে।
আগেই বলেছি আমি,
নিত্যকার মায়াকান্নায় জড়াই না,
সেই শীতের রিক্ততা কিংবা বসন্ত বিদায়ে-
নতুনত্বের আমেজে ভুলে যাই।
তবে আজ পারছি না,
অলক্ষ্যে তাকিয়ে চৈতন্য হারাচ্ছি,
কারণ-
আমার লক্ষ্মীটির অসুখ বেঁধেছে।
শেষ আলাপনে তার করুণ অভিব্যক্তি,
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে,
সমস্ত শরীর যেন অবসাদে আঁকড়ে ধরেছে-
আমার লক্ষ্মীটির অসুখ বেঁধেছে আজ।
বসন্তের বিদায় কিংবা পাতা ঝরা শীতে,
আমি একটুও মন খারাপ না করলেও,
আজ স্থির নেই,বেদনাহত-
আমার লক্ষ্মীটির যে অসুখ বেঁধেছে।
পৃথিবীর বুকে নতুনা সৃজন হউক,
গল্প বলার মানুষের সংখ্যা বাড়ুক,
আমার লক্ষ্মীটি সুস্থ হয়ে যাক-
তবে আমার মন ভালো হবে জানি।
আহমেদ হানিফ
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।