এক গুচ্ছ কবিতা : মহসিন আলম মুহিন

প্রকাশিত: ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫

এক গুচ্ছ কবিতা : মহসিন আলম মুহিন


মায়ের ভাষা আমার ভাষা

তেরোশত আটান্ন বাংলা, তারিখ আট ফাল্গুনের-
ভাষার জন্য জীবন দিলো শ্রেষ্ঠ সন্তান বাংলা মায়ের।।

সে দিন ছিলো উনিশ শত বায়ান্ন সাল, ফেব্রুয়ারীর একুশ দিন,
রক্তের দামে বাকস্বাধীনতা, কেমনে ভুলিব ভাইয়ের ঋণ।।

একুশ আমার গর্ব, একুশ আমার অহংকার,
একুশের জন্য প্রাণ দিয়ে গেলো-সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার।।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
শফিউরের আত্মত্যাগ ভুলিতে নাহি পারি,
ছোট্ট মনি ওহিউল্লাহ সহ আরও ভাষা শহীদরা রক্ত দিলো ঢালি, তাইতো শুয়ে মায়ের কোলে মাকে “মা” বলি।।

রবির কপালে আউয়ালের খুন, প্রতিদিন দেখি পূর্বাকাশে,
শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরীতে, ছেলে হারা মায়ের অশ্রু ভাসে।।


কবি নজরুল

দুই বাংলার প্রাণের কবি
যেন গোলাপ ফুল,
তুমি সবার নয়নের মনি
প্রিয় কবি নজরুল।।

পশ্চিম বাংলায় জন্ম তোমার
গ্রামের নাম চুরুলিয়া,
গরীব ঘর অভাবের সংসার
ডাক নাম দুখু মিয়া।।

দুরন্ত স্বভাব পয়সার অভাব
জীবন বাঁচাতে নিয়া,
রুটির দোকানে কাজের প্রস্তাব
লেটোর দলেও গিয়া।।

অভাব যে কত ছিল অবিরত
কহিতে অশ্রু ঝরে,
কড়ির কারণেই কবি আহত
বুলবুল, অকালেই ঝরে পড়ে।।

বুলবুল শান্ত ঘুমায় দুয়ারে-
কাফনের হয় না যোগাড়,
মেলে না অর্থ ঘুরে দ্বারে দ্বারে
বলে-কবিকে, গান গাহিবার।।

গান গেয়ে কবি টাকা আনে-
তাতে হয় দাফনের সমাধান,
অথচ কবির রচিত গানে-
‘কতজনে হয় ধনবান।।

পুত্রের শোক বসে যায় বুকে
বলিতে পারে না কথা,
বড় অসুখে ধরে কবিকে
মাথাতে চরম ব্যথা।।

সাম্যের কবি দ্রোহের কবি
কণ্ঠ মাঝে শত সুর,
শিকল ভাঙ্গার জলন্ত রবি
প্রেম ভালবাসায় ভরপুর।।

ঘুমন্তরে কবি জাগ্রত করে
ভাঙ্গা দেহে আনে প্রাণ,
অসি নিয়ে কবি সম্মুখ সমরে
মসিতে তোলে স্বাধীনতার গান।।

নবী প্রিয় কবি বিশ্ব ভুবনে
কে তার সমতুল্য,
হামদ-নাত-ইসলামি গানে
তারই লেখা অমুল্য।।

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-
সকলের কাছে কবি প্রিয়,
সাহিত্যঙ্গনে কবির অবদান
তুলনার বাহিরে অতুলনীয়।।

অল্প সময় কবিত্ব জীবন
কত কিছু তার লেখা,
পক্ষাঘাতে কবি, কবির ‘ভুবন-
থেমে গেলো কথামালার রেখা।।

তোমার স্তুতি কি গাহিব লিখে
আমি জ্ঞানহীন নাদান,
দোয়া করি, প্রভু রাখুন মহাসুখে-
জান্নাত করুন দান।।


খটকা

হঠাৎ কথা মটকা, তখনই খটকা,
সত্যের পরাজয়, শয়তানি টাটকা।।
সমোত্ত ললনা, বাকি নেয় কথা কয়,
ফুসুরফাসুর’ করে খটকা ভারী হয়।।
‘বলে যায় আসি, আসা’ হলে বাসি,
আশঙ্কা জাগে আসলে কি দোষী।।
কথাবলে ঝটপট, দাঁত করে কটমট-
খটকা লাগে মনে-খাবেই বুঝি কট।।
যা ওজনে ভারী, তাই খায় গড়াগড়ি,
নেই তাতে খটকা, নেই ‘আহাজারি।।
সত্যের দরজায় খটকা নাহি রয়-
অসত্যের মাঝে-আশঙ্কা আর ভয়।।


ছবির মতো ভালবাসা

নড়ে না, চড়ে না, কেবল তাকিয়ে থাকে-
পলক ফেলে না শুধু দেখে আর দেখে।
মনে হয় আর নেই আপন যে কেউ তার-
যাকে দেখে তাকেই শুধু দেখে বারংবার।।


যখন তুমি

যখন তুমি, তুমিই শুধু আমার-
ভয় নেই কোনো পথ হারাবার।
বৃষ্টি ভেজা তনু যখন কাঁপে-
ছাতি ধরা তোমার ছোঁয়া মাপে।
ঝড়ো হাওয়ায় যখন জড়সড়,
দৌড়ে এসে তুমিই যে হাত ধরো।
আঁধার কালো অমানিশার রাতে,
তোমায় পেয়ে অভয় নামে তাতে।
ব্যথায় ভরলে, রিক্ত জীবন তরী-
তোমারই পরশে নতুন জীবন গড়ি।।