এক গুচ্ছ কবিতা : মহসিন আলম মুহিন

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫


ভণ্ডুল

অনেক দিনের অনেক আশা,
যায়না বলা, হারিয়ে যায় ভাষা।
মন বাগানে ফোটেনা আর ফুল,
শুরুতেই শেষ-সব কিছু ভণ্ডুল।।

আশা ছিলো করবো ভালোবাসা,
হেথায় মন্দ ভাগ্য-মিললো ভাঙাবাসা।
পাইনা কিনারা, পাইনা কোন কূল,
হিসাব ছিল ভুল-সব হলো ভণ্ডুল।।

ব্যবসাতে খোঁয়া গেলো বড় মূলধন,
লোকসানের পাল্লা-ভারী যে ভীষণ।
থামলো গতি-চলে না আর একচুল,
ব্যর্থতায় এলোমেলো সব কিছু ভণ্ডুল।।

নামী হবো, দাম পাবো, মানবে সবাই,
সেখানে লেগে গেলো শুধুই কাই কাই।
মানেনা কেউ, অবহেলা-বোঝে সবাই ভুল,
এভাবেই পণ্ড হলো, সব হলো ভণ্ডুল।।

কি যে করি, ভেবে মরি, ভাবি শুধুই ভাবি,
কেমন করে এঁকেছিলাম, স্বপ্নে দামী ছবি।
আজ চক্ষু মেলে দেখি-সবই নয় নির্ভুল,
আফসোস, হেরে গেলাম-সব কিছু ভণ্ডুল।।


অবক্ষয়

মনুষ্যত্ব ঘুমিয়ে পড়েছে, বিড়াল খামচি মারে বাঘের গালে।। মাগনা আলকাতরা মাখে ধবধবে পাঞ্জাবি,
নাচতে না জানলেও দেখায় নাচি খেমটা তালে!
স্বজন প্রিয়তা, দূর হয় না কেমন যেন লাইন যায় বেলাইনে, সদাই আঁকাবাঁকা পথে হাঁটে আস্থার কর্ণধার! পথে উঠাবার শক্তির বড়ই অভাব অবক্ষয়ে!
সেবার হীনতা এমন করে ঘটে কি তাহলে?
শিক্ষক শাসনে মানুষ করে শিষ্যকে জ্ঞানদানে,
অথচ ছাত্রই শিক্ষক মেরে ফেলে অজ্ঞতা আর ভুলে!
বিদ্যার্থীদের হাতে নিরাপদ হবে পৃথিবীর সব স্থান,
কিন্তু দুর্ভাগ্য এদের হাতে খুন হয়, লাঞ্চিত হয় সমাজ!
ধর্ষিতার বিচার নীরবে নিভৃতে কাঁদে অফিসে অফিসে,
ধর্ষক বুক ফুলিয়ে চলে পকেট ভারী হয় অসৎ আইনজীবির।। ধর্ষকের ছবি খুঁজে পায় না সাংবাদিকের নেট-ক্যামেরা, হেথায় ধর্ষিতারা ভাইরাল হয়-সর্বস্বান্ত হালখাতার ছবি! নামকাওয়াস্তে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা আসে, তাতে, স্বস্তির নিঃশ্বাস অসম্ভব! তেজী হয় ফটকাবাজে! নেতার শপথ ছিল জনগণের সেবা আর উন্নতি, তারা কাছা খুলে মালছামানা পোটলায় বাঁধে, করে মহাদূর্নীতি! রক্তের বিনিময়ে ফিরে পাওয়া পরাধীন মসনদ আবার কেঁপে কেঁপে উঠে! মসনদ ঘিরে থাকে লোভ, লালসা, স্বার্থন্বেষী অযোগ্যরা! মা-মাটি-মানুষের হাহাকারের ধ্বনি থামে না, ম্লান হয় যোগ্যদের অর্জন আর পরিকল্পনা! হতাশার কালো মেঘ উড়তে থাকে আকাশ জুড়ে। রহমতের বরিষণ আটকে যায় কুকর্মের ফলে!
ধর্মের নামে অধর্ম করে অজ্ঞ-জ্ঞানহীন কিছু লোক,
ধর্মের করে হানি! আর এতে ধর্ম বিদ্বেষীরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, কয় বাজে শ্লোক! কারো পানে তাকাবার সময় নেই কারো, জবরদস্তিদের আনাগোনা,
নিজেও মরে জাত-জাতি মারে আঁকে অবক্ষয়ের আল্পনা।।


সৃষ্টির মাঝে সুখ

সৃষ্টির মাঝে পাওয়া যায় স্রষ্টা,
রবের গুণ মিটায় মনের তেষ্টা।।

কি সুন্দর চন্দ্র, গ্রহ, সূর্য, নক্ষত্র,
স্বচ্ছ জল, নির্মল বায়ু, সর্বত্র।।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তাই মন হাসে,
হঠাৎ নব সৃষ্টিতে স্বপ্নেরা’ ভাসে।।

প্রভুর যে কত মায়া, বান্দার তরে,
তারই দানে সৃষ্টিরা উল্লাস করে।।

আল্লাহর জ্ঞান থেকে ‘কিছুটা দেয়,
তাই পেয়ে মানুষের সব ভালো হয়।।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভরে যায় বুক,
স্রষ্টার সৃষ্টিতে ডুবে দেখো-পাবে’ সুখ।।


আমায় মুক্তি দাও

আমায় মুক্তি দাও! কান্না হারিয়ে ফেলেছি জ্যৈষ্ঠের উত্তাপে! মায়ের জঠর থেকে পড়েই
দুধের চিৎকারে মুখে তুলেছি বেঁচে থাকার প্রথম স্বাদ!
তিল তিল করে বড়ো হতে কতো আঘাত লেগেছে বুকে-
থেঁতলে গেছে নরম মাংস পিণ্ড সহ কোষ-কলা! আমি নির্বাক তাকিয়ে তাকিয়ে চুষেছি আগামীর সব দুঃখ!
বড় না হতেই কাঁধে এসে চেপেছে কতো চাওয়া পাওয়া; দায়িত্ব বোধ! যদিও অপারগ আমি! তবুও তুলে নিয়েছি হাতে কাস্তে, কোদাল, মৌলিক চাহিদা নিবারণে! আবার নিয়েছি শাবল-হাতুড়ি কেটে স্বচ্ছতা এনেছি সভ্যতার!
আমাকে নিঃশেষ করে জ্বেলেছি আলোর শোভা!
আবার একটু স্বাধীন চলতেই অপশক্তিকে করেছি পরাজিত! ছিনিয়ে এনেছি বুকের তাজা রক্তে স্বাধীনতার লাল সুর্য! হারিয়ে ফেলেছি তরতাজা হাত,
পায়ে চলার গতি! কখনো বুলেট, কখনো বেয়নেট, আমাকে করেছে আলিঙ্গন! সংসারের প্রয়োজনে দাপিয়ে বেড়িয়েছি কত বন্ধুর পথ-কতো প্রয়োজন, কতো ঘাম, ঝড়েছে অজান্তে! সারা দুনিয়ার নর-নারী ভালো থাকুক, মানুষের মত থাকুক; কত সভা, কত সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় এঁকেছি! আজ আমার আমিকে বহিবার শক্তি কর্জ করতে হয়! ধার দেনায় ভরে উঠতে চায় স্বাধীন জীবন! না-না এ অসম্ভব! আমি এ দান পারবো না গতরে মাখাতে! ভালো থাকো পৃথিবী, ভালো থাকো আগত-অনাগত উত্তরাধিকার! আমায় মুক্তি দাও, মুক্তি দাও, নীল আকাশের ওপারে চলে যাবো! মেঘের কোল ঘেঁষে ঘুমের দেশে! বিদায়! বিদায়! বিদায় অবশেষে।।


প্রার্থনা

সমস্ত প্রশংসা হে মহান মনিব-তুমি আমাদের রব,
বড় দাতা দয়াময়-আল্লাহ, তুমিই আমাদের সব।।

বিচার দিনের মালিক তুমি-তুমিই আমাদের পালক,
বান্দার তরে অসীম করুণা-রাখো যে তোমার পলক।।

আমরা তোমার এবাদত করি-তোমার আদেশ মত,
আমাদের যা দরকার-দিও প্রভু হাজত আছে যত।।

সঠিক পথে চালাও-যে পথে ছিলো তোমার প্রিয়জন,
সহজ রাস্তা দেখাও প্রভু-তুমি যে মহান, তুমিই আপন।।

সে পথে নহে যে পথ কাঁটার-যে পথে আছে ভ্রান্তি,
সেই পথে চালাও-যে পথে চললে শান্তি আর শান্তি।।


শুভ সকাল

সারটা দিন কাটুক ভালো-
দূর হোক সব আঁধার কালো,
সুখে শান্তিতে ভরে থাক তনু মন-
জীবনটা হোক সুখী ও উন্নত জীবন,
কেটে যাক যত আঁধার, যত অশুভ কাল-
জানাই তোমায় “শুভ সকাল”- “শুভ সকাল”।।

পাখীর গানে নাচুক তোমার মন-
ফুলের ঘ্রাণে সুভাষিত হোক ভুবন,
আসে না যেন বিষাদের কোনো কাল-
জানাই তোমায় মধুমাখা “শুভ সকাল”-
“শুভ সকাল”।।

নতুন সুর্যের আলো আসুক নীড়ে-
কালো গুলো সব সরে যাক বহু দূরে,
সুন্দর সব লাভ করো চিরকাল-
তোমায় জানাই মায়াভরা “শুভ সকাল”-
“শুভ সকাল”।।

রাতের আঁধার ফুরিয়েছে কিছু আগে-
নতুন প্রভাত এসেছে তোমার ভাগে,
এমন করে আসুক চকচকে সকাল-
তোমার তরে “শুভ সকাল”-“শুভ সকাল”।।

শুরু থেকে শেষ থাকে যেন বেশ-
মেঘ কেটে যাক হেথায় রোদেলা আবেশ,
সুখ শান্তির ঢেউ উঠুক সাফল্যে ভরে থাক-
ভালো চাওয়া পাওয়া গুলো সবই পূর্ণতা পাক,
মিষ্টি সুর বাজুক, না কাটে জীবনের সুর তাল-
তোমায় জানাই প্রীতি পূর্ণ “শুভ সকাল”-
“শুভ সকাল”-শুভ সকাল-“শুভ সকাল”।।