এক শিক্ষকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ অর্ধশতাধিক শিক্ষক, অভিযোগের পর তদন্ত শুরু
কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণার বারহাট্টায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নানা ধরনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারাও ওই শিক্ষকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক উপজেলার আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সাজ্জাদুল হক (সবুজ মাস্টার) । তার বিরুদ্ধে অগণিত অভিযোগ থাকলেও কোনভাইে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি এস এম সাজ্জাদুল হক ওরফে সবুজ মাস্টার এর বিরুদ্ধে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধীক শিক্ষক ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) অভিযোগ তদন্তে বারহাট্টায় আসেন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুর রহমান। দিনভর তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ শুনেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজ এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁকে আগে থেকেই নোটিশ করে তদন্তের বিষয়ে জানানো হলেও তিনি উপস্থিত হননি।
এদিকে দুপুরে অর্ধশতাধিক প্রধান শিক্ষক বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সামনে হাজির হয়ে সাজ্জাদুল হক সবুজের বিচার চেয়ে শ্লোগান দেন।
অভিযোগকারী শিক্ষরা বলেন, শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজ নিজে তো স্কুলে যায়ই না। নানা অভিযোগ দিয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। কখনো তিনি নিজে, কখনো অন্য কাউকে দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আমাদের নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ করেন। এসবের জবাব দিতে দিতে আমারা ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে স্কুলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। কিছু বলতে গেলে সবাইকে হুমকি দেয়। শিক্ষা কর্মকর্তাদের তিনি পরোয়া করেন না। কথায় কথায় মামলার হুমকি দেন। কিছুদিন আগে ৭০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে রিট করেছেন। সবুজের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ দিয়েছি।
তারা আরও বলেন, শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজ ধর্ষণ মামলায় জেলহাজতে গিয়েছেন। হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। একবার ঊধ্বতন কর্মকর্তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে বরখাস্ত হয়েছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। নানা তদবির করে তিনি সব ঠিক করে ফেলেন। এমনকি নিজের পিতার পরিচয় গোপন করে অন্য একজন শিক্ষকে পিতা পরিচয়নে চাকরি নিয়েছেন সবুজ। প্রতারণা, মামলা, জেলহাজত খেটেও তাঁর কিছু হয় না। আমরা তাঁর অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
উপজেলার ভাটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলানুর রহমান বলেন, শিক্ষক সবুজের অত্যাচারে উপজেলার সব শিক্ষক অতিষ্ঠ। অভিযোগ আর মামলা করাই তার কাজ। স্কুলে তো সপ্তাহে একদিনও যান না। সব শিক্ষককে তিনি মামলার ভয়ের মধ্যে রাখেন। ফোনেও নানা হুমকি দেন।
ছালিপুরা জোসনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান খান বাবুল বলেন, সবুজের চাকরি অবৈধ। নিজের পিতৃ পরিচয় গোপন করে অন্যকে বাবা বানিয়ে প্রতারণা করে চাকরি নিয়েছেন সবুজ। এলাকায় তিনি মামলাবাজ হিসেবে পরিচতি। স্কুলে তিনি কখনো যান না। প্রায় দিন তাকে কোর্ট-কাচারিতে পাওয়া যায়।
অপর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুন্নাহার বলেন, সবুজ অকারণে নানা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের হয়রানি করে। কিছু বললে হুমকি দেয় মামলার। কর্মকর্তাদের কাছে নালিশ করেলও কিছু হয় না সবুজের। উল্টো কর্তকর্তাদের কে ও ভয় দেখান সবুজ।
প্রধান শিক্ষক আবুল মিয়া ও রেহেনা আক্তার বলেন, স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন তথ্য চায় সবুজ। দিতে না চাইলে নানা হুমকি দেয়। তার অপকর্মের সহযোগীদের দিয়ে হয়রানি করে। আমরা সবুজের অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এস এম সাজ্জাদুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, তদন্তে এসে সাজ্জাদুল হক সবুজের বিস্তর অভিযোগ বিষয়ে জেনে অবাক হলাম। অবৈধ পোষ্য কোটায় চাকরি, অন্য শিক্ষকদের হয়রানি, মামলার হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ শুনলাম। তবে আগে থেকে তদন্তে উপস্থিত থাকতে নোটিশ দেওয়া হলেও অভিযুক্ত শিক্ষক সবুজ আসেননি। তদন্ত করে এ অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য- সাজ্জাদুল হক সবুজ গত বুধবার এক নির্বাচনী সভায় ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে দেখা যায়। ভোট চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁকে শোকজ করা হয়।