কবি এম এইচ মুকুল এর একগুচ্ছ কবিতা
১
বিবাগী মন
হয়তো আর কোনোদিনও
আসবোনা এই পথে,
যে পথে ছিলো প্রণয় চিন্হ
তোমার আমার মতে।
ধূলোর ঝড়ে মিলিয়ে যাবে
যুগল পায়ের ছাপ,
হয়তো এক বিরহী দিনে
বেড়ে যাবে অনুতাপ।
শতবার যে এসেছে দ্বারে
চিননিকো কভু তারে,
প্রণয় খুনে স্বার্থের ভিড়ে
হারিয়েছো বারে বারে।
কিযে খরান বুক জমিনে
বুঝানোর সাধ্য নাই,
ভুল প্রণয়ে বিবাগী আমি
বিরহের গান গাই।
তবুও আসি মায়ার টানে
ভুল করে এই পথে,
তবুও যাচি তোমার হিয়া
এই আমি দূর হতে।
২
নয়া পানির ঢল
বৃষ্টি ভীষণ মুশলধারে
বিলে অথই জল,
রাস্তাঘাটও যাচ্ছে তলে
বইছে পানির ঢল।
জওয়ান বুড়ো ছুটছে সবে
হাতে নিয়ে জাল,
হই হুল্লোড়ে মেতেছে সব
দেখে মাছের ফাল।
জালের ভিতর ট্যাংরা পুঁটি
করছে রে ঝিলমিল,
ক্ষণেক্ষণে ছোঁ মারে ওই
শূন্যে উড়া চিল।
সারস পাখি মগ্ন ধ্যানে
দাঁড়িয়ে এক ঠায়,
ধরবে পুঁটি লম্বা ঠোটে
সুযোগ যদি পায়।
তাধিন তাধিন নেচে বেড়ায়
খোকাখুকির দল,
বাধ ভেঙেছে নিষেধ মানার
দেখতে পানির ঢল।
৩
আদব
আদব কাকে বলে জানো?
বলছি তবে শোনো,
স্রষ্টার বিধান চলবে মেনে
মিথ্যে নয় তা কোনো।
গুরুজনকে ভক্তি শ্রদ্ধা
করবে উঠতে বসতে,
কর্মের আগে ভুলবে নাকো
সঠিক হিসাব কষতে।
সত্যবাদীর নাই পরাজয়
সত্যে মিলে মুক্তি,
মিথ্যের সাথে করবেনা বাস
থাকনা যতোই যুক্তি।
হালাল হারাম করবে যাচাই
গ্রহণ করার আগে,
মন্দের দায়ভার কেউ নিবেনা
থাকবে তোমার ভাগে।
তোমার কোমল দিলটা যেনো
কাঁদে দুখীর দুখে,
ন্যায়ের পথে কষ্ট হলেও
থাকবে হাসি মুখে।
সবার আপন হবে তোমার
আদব কায়দা দিয়ে,
তবেই তুমি সার্থক হবে
ধরায় জন্ম নিয়ে।
৪
বরষার দুরন্তপনা
ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি ঝরে
গুড়ুম ডাকে দেয়া,
জলে থৈথৈ ধলা বিলে
ঘাটে বাঁধা খেয়া।
জলে ভিজে ছেলেমেয়ে
কাদায় মাখামাখি,
খেয়ায় ভাসে দুরন্ত মন
যেনো মুক্ত পাখি।
খেয়া চলে গড়গড়িয়ে
বিলের মধ্যখানে,
লম্ফঝম্ফ সারাবেলা
নিষেধ না তো মানে।
তাদের পেয়ে ফুটতে থাকে
শাপলা রাশিরাশি,
তাদের হাসি ফুলের হাসি
থাকে পাশাপাশি।
৫
এ কেমন দায়বদ্ধতা?
প্রতিটি রাতের আঁধারে দীর্ঘশ্বাস ফণা তোলে
একেকটা ছোবলে নীল হয় মাটির বুক।
গহীন থেকে গহীনে যায় অদেখা বিষ।
ছটফটানির স্বাক্ষী হয়ে রয়
অন্ধকার আর জীর্ণ বিছানা।
পাশে থাকার কথা ছিলো যার
সে আজ মুক্ত বিহঙ্গ।
রোজ মৃত্যুর ছবি আঁকি গাঢ় কালোয়,
চিত্র প্রদর্শনীর প্রধান অতিথি যমদূত।
তার আগমনের তারিখটা জানা নেই,
আমারও মনে চায় মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে শূন্যে উড়তে,
কিন্তু কী এক অজানা দায়বদ্ধতা আঁকড়ে ধরে!
দংশিত শরীরটা নিয়েই প্রহর গুনি
আমার একক চিত্র প্রদর্শনীর।
বুকে বিষের যন্ত্রণাটা রয়েই যায়, তবুও ছবি আঁকি
কখনো এই দায়বদ্ধতার কখনো মৃত্যুর।