কবি জেনিফা জামান এর এক গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪

আত্মতৃপ্তি

জলের আড্ডার কলকল শব্দ ধ্বনি,
একাকার সে সুরে শৈশবের ডাক শুনি।

হোক সে ছলনা,তবুও এক আত্মতৃপ্তি।
হোক সে উপমা,তবুও এক স্মৃতিময় দীপ্তি।

জলের ধারায় মধুমায়া,
জলের উপর মনের ছায়া।

আমি ছুটে যাই শান্ত নদীর ডাকে,
যেথায় বনলতার গুল্ম মেশে বনের শাখে।

আমি ছুটে যাই চিরচেনা স্নেহের সে ডাকে।
ঘাসের সবুজ গালিচা যেথায় দিগন্তে মেশে।

আমি আনমনে হাসি, যেথায় সংকর
শিশুর দল খিলখিলিয়ে হাসে।

নবজাতকের হাই তোলা ঘুমের দেশে,
মিশে যাই তার তুলতুলে নিঃশ্বাসে।

শহুরে কংক্রিটের শোরগোল ঠেলে,
আঁচল পাতি সূদুর অতীতের আশ্বাসে।

বুনো সুখ ফুলের সুঘ্রাণে মিশে যাই,
সেই চিরচেনা আবহমান বাংলার বিশ্বাসে।

স্নিগ্ধ সুধা সমীরণে,ভালোবাসি বাংলা তোমায়,
নিঃস্বার্থ প্রলভনে,নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে।


অনাথ শিশু

আজ সকালে পথের ধারে
কাঁদছিলো এক অনাথ শিশু,
দেখে তারে ভাবলাম আমি
হতো যদি আমার মিশু।

চোখে তার ক্ষুধার জল
ছলছল টলমল,
তার নয়নে আকঁছি আমি
মিশু যেনো অবিকল।

হাতটা তার মাথায় বুলাই
বাঁকা দৃষ্টি হেলাই ধুলাই,
সব শিশুকে মিশু ভেবে
নেই না মোরা কাছে টেনে।

সারাদিন কতো কাজে
নষ্ট করি অর্থ বাজে,
অনাথ শিশুর চোখের মায়ায়
আমরা যদি তনয় কে সাজাই।

স্নেহ মায়ায় অনাথ তুষ্টি
হ্নদয় চোখে শান্তির দৃষ্টি
মিশুর টিফিন দিলাম তারে,
দিন টি ছিলো শনিবারে।


কবি হেলাল হাফিজ স্বরণে

শীত আসে নিয়ম করে
চারিদিকে কুয়াশার প্লাবন।
শীতের কনকনে নিষ্ঠুর বাতাসে
বিচ্ছেদের সুর।মন ভারাক্রান্ত,
নিথর, থমথমে কুয়াশার জট।
কুয়াশার ঘোরে নিস্তব্ধ মন ।

নিস্তব্ধ, নিথর কবির দেহ।
মন কেঁদে যাই আকুল হয়ে
দ্রোহের কবি,
প্রেমের কবির নিরবতায়।

একটা জীবন পার করেছেন স্বর্গীয় প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্তে।এমন প্রেমের বীর কে হতে পারে?
শ্রদ্ধা কবি উষ্ণ পানির অভ্যর্থনায়।

একাকিত্বের গম্ভীর নির্যাস পান করে,
প্রশস্ত হ্নদয় নিয়ে অন্তিম যাত্রায়,
শিখিয়ে গেলেন কবির ভালোবাসা মহত্বে পরিপূর্ণ। কবির ভালোবাসা অনন্ত,অসীম।যে ভালোবাসার শুরু আছে শেষ নেই।
অনন্ত, অবিনশ্বর প্রেম কবি চরিত্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

মহাবিশ্বের এই মহাযাত্রায় ধ্রুব তারায় অমরত্ব লাভ করুক কবির প্রেম।


মায়ের হাসি

পৃথিবীর মোড়ে মোড়ে
কতো হাসির জোয়ার,
মাগো!তোমার হাসি সেরা লাগে।
পূর্নিমার ঐ হাসিযাত্রায়
তোমার হাসিতে চাঁদ জাগে।

তোমার হাসিতে সুর্য হাসে,
ফুল পাখিরা জাগে।
তুমি হাসো বলেই মাগো
গোধূলি লাল রাগে।

চেনা অচেনার ভীড়ে
কতো মানুষ আপন সাজে,
তোমার মতো এতো আপন
পাইনা খুঁজে ভূবন মাঝে


অভিমান

অভিমানের সংগা জানো প্রিয়?
একটু একটু করে জমানো অভিমান ভারী হয়ে হ্নদয়ে বিলিরুবিনের বৈরিতা তৈরী হয়,হলুদ হ্নদয়ে পৃথিবীকে অনুজ্জ্বল মনে হলো আমার।

অভিমানের সংগা জানো প্রিয়?
সুর্যের পাঠানো আলোকরশ্মির ট্রেনে চড়ে সূর্যের পরিবার কে অপরিচিত অস্বচ্ছ মনে হলো আমার। অভিমানে মহাকাশ কে গ্রহ, উপগ্রহ, ধুমকেতু বিহীন বিরাণ শ্বশান মনে হলো আমার।

অভিমানে আত্মা ছুঁয়ে যায় মেঘ।মন খারাপের নিমগ্নতায় প্রমত্তা মেঘ যেনো মর্গের আশ্রম।সে আশ্রমে অসংখ্য সাদা কাফন পরা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।আকাশ টাকে থমথমে নিথর মনে হলো আমার।

অভিমানের সংগা জানো প্রিয়?
বিশ্বস্ত কারন কই বলো অভিমান না করার।অভিমানে হ্নদয়ের ব্যবচ্ছেদ হলো,হ্নদয়ের ময়না তদন্ত সম্পন্ন না করেই কি নিদারুন নিরাগ্রহ নিয়ে পৃথিবীর বুকে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো বোবা, বধির বৃক্ষ। প্রাচীন সুবিন্যস্ত বৃক্ষকে পাথর বৃক্ষ মনে হলো আমার।