কবি দিলপিয়ারা খানম এঁর এক গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৩

একফালি চাঁদ
আমি আর একফালি চাঁদ দু’জনে মিলে মিতালি করেছি,
সখ্যতা গড়ে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পেয়েছি ।

নির্ঘুম রাত ভরা যুবতী পূর্ণিমা
কি যে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রেখেছে,
দু’চোখের সীমানায় সবটাই গড়াগড়ি খাচ্ছে একঅনাবিল সুখ প্রচ্ছদে।

প্রতিদিন অপেক্ষার পর আসে সেই শুভক্ষণ বন্ধু মিতালী একফালি চাঁদ হোক না অমাবস্যা,
নীরব ভাষায় দুজনেই বলে যাই না বলা হাজারো কথার রাশিমালা।
মান—অভিমানের ঝড় উঠে আমার একফালি চাঁদের সনে,
গুমরো মুখো ভাল্লাগেনা থাকি আনমনে।

অতঃপর,
তার স্নিগ্ধতার সোনালী আলো দিয়ে জোনাকীদের ছড়িয়ে রাঙিয়ে দেয় আমায়,
আমি মুগ্ধ আপ্লুত হই তার কৌশল মাখা রুপোলী ভালবাসায়।

আমাদের নীরব ভাষার এই সখ্যতার স্বাক্ষী থাকে প্রকৃতির সৃষ্টি,
উদার আকাশের নীচে নিশি ডাকা ঝিঝি পোকা কিংবা রাত জাগা পাখি।

একফালি যুবতী চাঁদের প্রভাবে জোয়ার আসে ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ে দূর দূরান্তে

তারপর, আমিও ভেসে যাই তার স্রোতের টানে অজানা কোন আবেগী মেলবন্ধনে।

একফালি চাঁদ, লীলাবতী হয়ে এক অপরুপ সাজে সজ্জিত থাকে হ্নদয়ের দু’কূল ঘেসে।
প্রভাতের আগমনে আড়ালে চলে যায় আমার মিতালী একফালি চাঁদ।

তারপর,
শুরু হয় জীবন যুদ্ধ আর দিন ভর প্রহর গুনা আমার একফালি চাঁদের প্রতিক্ষায়!!


“প্রশ্ন নহে আর”

শুনবে কি তুমি,
আমার ভাল না লাগার গল্প?
কথা নহে অল্প।
শুনার ধৈর্য তোমার হবে কি অত?
গল্পটা দীর্ঘ যত।
জানি আমি,
তোমার সময় নেই তত।

যদি শুনতে,
জানতে তুমি দেখতে তুমি,
হৃদয় মন্দিরে চলছে অবিরত মহা প্রলয়।

সে যেন এক মহা যুদ্ধ।
যার নেই কোন লয়।
আছে অগণিত ক্ষত চিহ্ন।
হৃদয়ের সাথে হৃদয় জড়িয়ে এবার শুন তুমি,
দেখ তুমি।
আমাকে প্রশ্ন নহে আর।
আমার সময় এসেছে ভুবন ছেড়ে পালাবার।


বেঁচে থাকার প্রেরণা

সৃষ্টির নিয়মে প্রতিটি দিনের শেষে রাত্রি নেমে আসে,আসে নিশি ডাকা ভোর
নতুন করে সূর্য উদিত হয়,
নতুন নামে আরেকটা দিন সূচনা হয়।
হারিয়ে যায় জীবন থেকে আরেকটা দিন,
বিলিন হয়ে যায়,জেগে থাকার ছবিটার।

মৃত্যু হয়ে যায় গোপনে দেখা সেই স্বপ্নটার।
সূর্য অস্তমিত হয়, নেমে আসে সন্ধ্যা,গোধূলি,
ধীরে ধীরে মৃতকোষের মত স্বপ্নগুলো আবার জীবীত হতে থাকে।
নতুন উদ্দ্যমে প্রাণের আনন্দে,
সারারাত স্বপ্ন বোনে বেঁচে থাকার প্রেরণা খোঁজে।


“পূর্ণিমায় চন্দ্রভুক”
একাকার হল লোনাজলের সাথে বৃষ্টির ধারা
নিশ্বাসের লঘুচাপে মেঘমালা বরষণ ঝরাল অক্কিপল্লবে।
নিজেকে আড়ালে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা
এ যেন পূর্ণিমায় চন্দ্রভুক খোঁজা।

লাল থেকে নীল রঙে রঙিন হয়েছে হ্নদয়
কণ্ঠক শয্যায় নিপাতিত কিংবা নিশ্বেঃসিত করেছে হিদয়।

হঠাৎ বালিঝড়,
হলো এলোমেলো
সাজানো স্বপ্ন সারথি’র।
অতঃপর,
দেখা হল
অনন্তকাল পর
সেই চিরাচরিত
মেঠোপথের ধারে

দেখেছি নয়নযোগলে চকচকে জলরাশি উপচে পড়ছে।
না বলা অনেক কথাই বলা হল শুধু দৃষ্টি বিনিময়ে
পুরানো অভিপ্রায়ে।
কতপ্রহর অতিবাহিত হল জানা নেই,
কিয়ৎক্ষণ পর শুধালো
ভাল আছ তো?
ভাঙা কণ্ঠে,
বুঝলাম এখনো আছি

স্মৃতিতে অমোচনীয় হয়ে।
অবাধ্য তপ্ত জল গড়িয়ে পড়ল
আবার কি হবে দেখা?
হঠাৎ বর্ষার কোন গোধূলি লগ্নে!
নাকি
পূর্ণিমায় চন্দ্রভুক হয়ে!!


আমি নিত্য পাগল ক্ষিপ্ত
আমি নিত্য পাগল ক্ষিপ্ত শুধু তোমার জন্য।
আমি নিত্য উদাস নিরানন্দ শুধু তোমার দেখা পাওয়ার জন্য।
আমি নিত্য ব্যাকুল অতন্ত্র শুধু তোমার কথা শুনার জন্য।
আমি নিত্য নিস্তব্ধ আত্মভোলা শুধু তোমার ভালবাসার জন্য।

আমি নিত্য মাতাল উত্তাল শুধু তোমার প্রেমের জন্য।
আমি নিত্য চঞ্চল অবিচল শুধু তোমার কাছে ছুটে আসার জন্য।
আমি নিত্য চপল হেঁয়ালি শুধু তোমার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য।


“সাগর ঢেউয়ের আলিঙ্গনে ”

চল যাই প্রিয় দু’জন মিলে,
আজ গোধূলীর পরে,
দূরের ঐ লোনা জলের সাগর বালু চরে।
যেখানে রাতের আঁধারে তারারা সবে ফন্দি করে মিটি মিটি জ্বলে,
সমতালে মহা উল্লাসে চাঁদের হাঁসি অপলক চলে।
এখানে এলে তুমি,
দেখবে তুমি,
রাত আর চাঁদের চলে দারুন মিতালী।

দু’য়ের মাঝে নিরবে চলে মহা এক প্রণয় লীলা।
এ যেন মহা প্রেমের এক অপরুপ খেলা।
যেমনটা হয় তোমার আমার বেলা।
যাবে কি প্রিয় আমার হাত ধরে,
আজ গোধূলির পরে,
দূরের ঐ লোনা জলের সাগর বালুচরে?
ওখানে গেলে তুমি উদাস মনে গাইবে গান,
সাগর ঢেউয়ের আলিঙ্গনে।


“প্রশ্ন নহে আর”

শুনবে কি তুমি,
আমার ভাল না লাগার গল্প?
কথা নহে অল্প।
শুনার ধৈর্য তোমার হবে কি অত?
গল্পটা দীর্ঘ যত।
জানি আমি,
তোমার সময় নেই তত।
যদি শুনতে,
জানতে তুমি দেখতে তুমি,

হৃদয় মন্দিরে চলছে অবিরত মহা প্রলয়।
সে যেন এক মহা যুদ্ধ।
যার নেই কোন লয়।
আছে অগণিত ক্ষত চিহ্ন।
হৃদয়ের সাথে হৃদয় জড়িয়ে এবার শুন তুমি,

দেখ তুমি।
আমাকে প্রশ্ন নহে আর।
আমার সময় এসেছে ভুবন ছেড়ে পালাবার।