কবি মোঃ শাহিন আলমি এর এক গুচ্ছ কবিতা
শরৎ
শরৎ এসেছে বলে,
কংস নদীর তীরে
কাশফুলের মেলা।
শরৎ এসেছে বলে,
স্নিগ্ধ শিশিরভেজা
সবুজ ঘাসের মাঠ।
শরৎ এসেছে বলে,
ফুটেছে শিউলি।
শরৎ এসেছে বলে,
ফুটেছে বেলি।
শরৎ এসেছে বলে,
বিলের জলে
লাল-সাদা পদ্মের খেলা।
শরৎ এসেছে বলে,
উদাসী হাওয়ায় ঢেউ খেলে
সবুজ আমন ধানের চারা।
শরৎ এসেছে বলে,
নীল আকাশে
শুভ্র মেঘের ভেলা।
শরৎ এসেছে বলে,
মা বানায় তালের পিঠা।
২
আগন্তুক
আমি যদি হারিয়ে যাই,
কেউ আমায় খুঁজবে না ।
বিশ্বাস হচ্ছে না তো ,
তবে হারিয়ে দেখো !
তুমি অবাক হয়ে দেখবে ,
তোমাকেও কেউ খুঁজছে না !
তুমি আনমনেই বলে উঠবে –
কেউ কি নেই আমাকে খোঁজার?
এদিকে -সেদিকে তাকাবে ,
চোখ গুলো মরীচিকা দেখবে –
এই বুঝি কেউ এলো !
বিশ্বাস করো কেউ আসবে না..!
তবে, কোন এক অন্ধকার রাতে
আলোর মশাল হাতে
তোমায় খুঁজতে আসবে, এক আগন্তুক !
তুমি হতভম্ব হয়ে দেখবে ,
আগন্তুক স্বয়ং তুমি….
সময় বড় হয়ে গেছে
পূর্ণিমা রাতে ট্রেনের ছাদে চড়ে,
আর মোহনগঞ্জ যাওয়া হয় না।
পূর্ণিমা রাতে ট্রলারের ছাদে করে,
আর টাঙ্গুয়ার হাওর ঘোরা হয় না ।
পূর্ণিমা রাতে বাংলা গিটার হাতে,
আর সারারাত গানের আড্ডা হয় না।
পূর্ণিমা রাতে ধোয়া উড়িয়ে-উড়িয়ে ,
আর ক্ষেতের আইলে হাঁটা হয় না।
পূর্ণিমা রাতে লেঙ্গুড়া গারো পাহাড়ে ,
আর সেন্টু গেঞ্জি পরে বসা হয় না।
পূর্ণিমা রাতে তোমায় মনে করে ,
আর চাঁদের সঙ্গে কথা হয় না ।
পূর্ণিমা রাতে তোমায় ছাড়বো বলে ,
আর ফানুস উড়ানো হয় না।
পূর্ণিমা রাতে মগড়া নদীর তীরে,
আর মধ্যরাতে আড্ডা হয় না।
এইতো সেদিন মধ্যরাতে,
চাঁদ জিজ্ঞেস করেছিল-
কেন?
উত্তরে বলেছিলাম-
সময় অনেক বড় হয়ে গেছে !
বোঝার চেষ্টা করো
আমি এখনো সেই
ছোট্ট আমিই রয়ে গেছি।
চারপাশ কত বদলে গেছে,
অথচ আমার অবুঝ মন
বুঝতেই চায় না।
আশেপাশের মানুষগুলো
কী অদ্ভুতভাবে বদলেছে,
অথচ আমার অবুঝ মন
বুঝতেই চায় না।
কাছের মানুষগুলো
কী অদ্ভুতভাবে স্বার্থপর হয়ে গেল,
অথচ আমার অবুঝ মন
বুঝতেই চায় না।
দেখতে দেখতে জীবনের
চলে গেল ২৭ বছর,
কিন্তু কী অদ্ভুত!
মনে হয়, এই তো সবে সাত বছর।
মনে হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি এখনো,
মনে হয়, কবে যে বড় হবো!
অথচ চলে গেল অর্ধেক জীবন।
মাঝে মাঝে অবুঝ মনটাকে জিজ্ঞেস করি,
তুমি কি উন্মাদ?
অবুঝ মনটা মুচকি হেসে
উত্তর দেয়—
বোঝার চেষ্টা করো!
কে তিনি
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
আমার নয়, সমগ্র মনুষ্যের!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
পৃথিবীর নয়, সমগ্র সৌরমণ্ডলের!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
সূর্যের নয়, সমগ্র নক্ষত্ররাজির!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
মিল্কিওয়ের নয়, সমগ্র ছায়াপথের!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
গায়া বিএইচের নয়, সমগ্র কৃষ্ণগহ্বরের!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
এক আকাশের নয়, সাত আকাশের!
যেমন সূচনা হয়েছিল,
তেমন ইতি হবে।
মালাক আল-মাউতের নয়, সমগ্র ফেরেশতার!
তবে কি কিছুই থাকবে না?
থাকবে এবং থাকবেই..!
যিনি সমগ্র সৃষ্টির পূর্বেই ছিলেন,
যিনি সমগ্র সৃষ্টির সৃষ্টি করেছিলেন।
কে তিনি?
তিনি এক অদ্বিতীয়,
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
ঠিকানা: পঞ্চাননপুর, নেত্রকোনা সদর
ইমেইল: shahinyy9@gmail.com