কেন্দুয়ায় তরমুজ চাষে উচমানের বাজিমাত আড়াই কাটা ক্ষেতে ২ লাখ টাকা আয়
মজিবুর রহমান:
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় আড়াই কাটা (২৫শতাংশ) জমিতে তরমুজ করে ২ লাখ টাকা আয় করেছেন আলী উচমান নামে এক কৃষক। কৃষক আলী উচমানের গ্রামের বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউপির গড়াডোবা গ্রামে। কৃষক আলী উচমান এলাকার একজন বড় সবজিচাষী। প্রায় ৪০ কাটা ( ৪০০ শতাংশ) জমিতে সারাবছরই তিনি নানারকমের সবজি আবাদ করে থাকেন। কৃষিকাজে তাকে সর্বাত্মক সাহায্য করেন তাঁর কলেজ পুড়ুয়া ছেলে সারোয়ার আহমেদ।
কৃষক আলী উচমান জানান, কয়েকবছর ধরে সৃজন বুঝে ৪০০ শত শতাংশ জমিতে ঝিঙ্গা, লাউ, মরিচ,মুলা,বেগুন, কপি,শিম,কুমড়া, ও ডাটাসহ শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকি। গত আষাঢ় মাসে ছেলের পরামর্শে আড়াই কাটা (২৫ শতাংশ) জমিতে ব্লাক কেনডি-১ হাইব্রীড জাতের তরমুজ চাষ করি। ছেলে মোবাইলে দেখে তরমুজ চাষ বিষয়ে ধারণা নেয়। ইনশাল্লাহ! কোন সমস্যা হয়নি। আষাঢ় মাসে ৮ তারিখে বীজরোপণ করি ভাদ্র মাসে ১২/১৩ তারিখেই তরমুজ বিক্রয় শুরু করি। যতোটুকু আশা ছিল তারচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে।
এই কয়দিনে কেন্দুয়া,নান্দাইল, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তে ৩৫/৪০ টাকা কেজি ধরে তরমুজ বিক্রি করেছি। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও দিয়েছি। এরপরেও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ বিক্রয় করতে পেরেছি। বাড়িতে এখন কিছু তরমুজ রয়েছে । ২৫ শতাংশ জমিতে তরমুজ আবাদ করতে খরচ হয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
তরমুজের পাশাপাশি এক একর জমিতে ঝিঙ্গা, ৩০ শতাংশ জমিতে লাউ, ৩০ শতাংশ জমিতে কুমড়া, ৩০ শতাংশ জমিতে বেগুন, ২০ শতাংশ জমিতে শশা আবাদ করেছিলেন। সব ফসলের আবাদ ভাল হয়েছে, তবে তরমুজ আবাদে তিনি খুবই খুশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন,এই ফসলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ ও মজুরি কম লাগে। দেখতেও ভাল লাগে। আগামীতে তিনি এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
সারোয়ার আহমেদ জানান,তিনি কেন্দুয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার কৃষিকাজে সাহায্য করেন। কৃষি অফিসের লোকজনকে তো সবসময় পাওয়া যায় না। তাই মোবাইল ফোনে ইউটিউব চ্যানেল দেখে সবজি চাষ করি। তিনি আরো বলেন, শুনি অনেকেই মোবাইল ফোনে বাজে কাজে আসক্ত হয়ে বিপদগামী হয়। কিন্তু এটাকে যদি আমরা সঠিককাজে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের জীবনে বড় উপকার বয়ে আনতে পাড়ি। যেমন,অন্যদের জমির ফসল থেকে আমাদের জমির ফসল ভাল হয়। এর একমাত্র কারণ হলো আমি ইউটিউব দেখে সময়মত জমিতে স্যার কীটনাশক ব্যবহার করি। আমরা যেহেতু সারাবছর সবজি চাষ করি। তাই নতুন কি আবাদ করা যায় চিন্তাভাবনা শুরু করি। তখন ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে দেখি তরমুজ চাষটা মোটামুটি সহজ আছে। তখন বাবার সাথে পরামর্শ করে আষাঢ় মাসে মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামুলক ইস্পাহানী কোম্পানির ব্লাক কেডনি-১ হাইব্রীড জাতের বীজ সংগ্রহ করে রোপন করি। ইউটিউব দেখে সময়মত স্যার,কীটনাশক ও পরিচর্যা করতে থাকি। যতই দিন যায় ততই আগ্রহ বাড়তে থাকে। মাশাল্লাহ! ভাদ্র মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহেই তরমুজ পরিপক্ব হয়। তরমুজের স্বাদ যতেষ্ট সুস্বাধু হয়েছে। অল্প জমিতে তরমুজ চাষ করে ২ লাখ টাকার উপরে লাভবান হয়েছি। আগামীতে ১০ কাটা (এক একর) ক্ষেতে তরমুজ চাষের পরিকল্পনা নিচ্ছেন বলেও জানায় সে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, আলী উচমান সাহেব অনেক জমিতে নানারকমের সবজি চাষ করে থাকেন। এবার তিনি তরমুজ চাষেও সফল এবং ভাল লাভবান হয়েছেন শুনেছি। ইচ্ছা করলে অন্যরাও তরমুজ চাষ করে লাভবান হতে পারেন।