গানই তাঁর জীবন গানেই জীবিকা

প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪

রাজেশ গৌড়ঃ
এক হাতে একতারা আরেক হাতে খঞ্জনী। সঙ্গী বা ভঙ্গি কিছুই নেই। আছে শুধু শ্রুতিমধুর কন্ঠ। আর সেই শ্রুতিমধুর কন্ঠকে একতারার সুরের সাথে মিলিয়ে গাইছে গান। এই গান শুনে জড়ো হয় ঘুরতে আসা লোকজন। গানে মুগ্ধ হয়ে ১০-২০ টাকা করে বকশিস দেন তারা। দিন শেষে যা পায় তা দিয়েই চলে আরজ আলী বাউলের সংসার।

প্রতিদিনেই আরজ আলী বাউলের দেখা মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দরে‌্যর লীলাভূমি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে যা কোহিনুর টিলা নামে পরিচিত। ওই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনেই হাজারো পর্যটকের আনাগোনা। আর ঘুরতে আসা ওই পর্যটকদের গান শুনিয়ে মাতিয়ে তুলাই হচ্ছে আরজ আলীর পেশা।

দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বালিচান্দা গ্রামের বাসিন্দা আরজ আলী। একমাত্র স্ত্রীকে নিয়েই ৬২ বছর বয়সী আরজ আলীর বর্তমান সংসার। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অনেক কষ্টেশিষ্টে দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছে। ছেলেও বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে চলে গেছে। তাই ছেলে মেয়েরা তেমন খোঁজ খবর নেয় না।

গতকাল বিকেলে বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে গেলে দেখা যায় আরজ আলীকে। তার গান শুনতে চারপাশ ভীড় জমিয়েছে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। আসরও জমিয়েছে বেশ। গান শেষ হতেই এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় আরজ আলীর।

আরজ আলী জানান,‘নবীর দিক্ষা-করিওনা ভিক্ষা। আমাদের নবী ভিক্ষা পছন্দ করতেন না। তাই আমিও ভিক্ষা করি না। আল্লাহ গলায় ভাল কন্ঠ দিয়েছে। তাই কন্ঠ বিক্রি করেই বাঁচি। মানুষ আমার কন্ঠে গান শুনে খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই আমার সংসার চালায়।’

তিনি আরো বলেন,‘ জন্মের আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। কিছু বুঝে ওঠার আগে হারিয়েছি মাকেও। তাই জন্মের পর থেকেই আমি হতভাগার মতো। জীবনে বেশী কিছু চাওয়া নাই আমার। বাকি জীবনটা গান গেয়েই কাটাতে চাই।’

ঘুরতে এসে গানের আসরে অংশ নেওয়া ফয়েজ আহম্মদ হৃদয় বলেন,আমরা চিনামাটির পাহাড়ে ঘুরতে এসে গান প্রেমি আরজ আলীকে পেলাম। যারা যারা এখানে ঘুরতে এসেছে সবাইকেই ওনি গান শুনিয়ে আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। আমরাও ওনার গান শুনে আনন্দ পেয়েছি। আমি মনে করি এই সৌন্দর্যসময় স্থানকে ওনি গানে গানে আরও ফুটিয়ে তুলেছে।

দুর্গাপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক তোবারক হোসেন খোকন বলেন,আরজ আলী খুবই প্রতিভাবান শিল্পী,সে যে কারো নাম বা স্থান যে কোনোকিছু নিয়েই তাৎক্ষণিক গান বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে আরজ আলীর সংস্কৃতিক প্রতিভা। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই কেবল তার প্রতিভা রক্ষা করা সম্ভব। আমি চাই সরকার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হোক তাতে তার প্রতিভা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন,জানতে পেলাম বাউল আরজ আলী পর্যটকের গান শুনিয়ে আনন্দ দেন। তার সঙ্গে আমার এখনো পরিচয় হয়নি। তবে তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবো। অন্যদিকে পর্যটন এলাকাগুলো নিয়ে আমাদের নানামূখী পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ তারিখ বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ” ইত্যাদি” অনুষ্ঠানে আরজ আলী সাত হাজার টাকা পুরুষ্কার পেয়েছেন। তাছাড়াও তার গান শুনে বিমোহিত হয়ে জেলা প্রশাসক নতুন একটি বেহালা উপহার দিয়েছিলেন তাকে।