গোলাম কবিরের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ২:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৫


পারলে একদিন এখানে এসো

পারলে একদিন এখানে এসো –
তোমাকে চিনিয়ে দেবো হৃদয়ের নীল সরোবর, দ্যাখাবো আমার হৃদয়ের
গভীর ক্ষত হতে সৃষ্ট রক্তপ্রপাত।

পারলে একদিন এখানে এসো –
তোমাকে শোনাবো কোনো একজনকে
না পাওয়ার কষ্টে এখানে কেমন করে
সকালসন্ধ্যা কষ্টের সানাই বাজে অবিরাম!

পারলে একদিন এখানে এসো –
তোমাকে দ্যাখাবো কেমন করে
কেটে যাচ্ছে তুমিহীন রাত্রিদিন
খসে পড়া বিষণ্ণ নক্ষত্রের মতো।

পারলে একদিন এখানে এসো –
তোমাকে শোনাবো আমার একাকীত্বের
তীব্র যন্ত্রণার জল ভেজা গান,
পরিযায়ী পাখির ফেলে যাওয়া পালকের মতো
নাহয় নিজেকেই ফেলে চলে যাবো দিকশূন্যপুরে,
তাও যদি একটুখানি হলেও ভালোবাসো!


ভালোবাসার ফসিল

সারারাত প্রসবের তীব্র যন্ত্রণা শেষে
অবশেষে সে এলো বিষণ্ণ মৌনতার
কাশ্মীরি শাল গায়ে চড়িয়ে
আমার ধূসর পাণ্ডুলিপির পাতায়!

কে সে? কবিতা?
না, কোনো কবিতা নয়!

যে এলো তার নাম তুমি
দিতে পারো আউলা ঝাউলা বাতাসে
উড়ে আসা একদল মেঘের সারিতে
ভেসে বেড়ানো ভালোবাসার ফসিল!


পাহাড়ি নদী

হৃদয়ের খুব কাছেই থাকে সে!
তাকে আমি কী নামে যে ডাকি!

আসলে একটা তীব্র স্রোতস্বিনী কোনো
পাহাড়ি নদীর নামে তাকে ডাকলেই
মানায় ভালো ; যে তার উতরোল জলে
আমাকে কাঁদায়, ভাসায় আনন্দের স্রোতে ,
ডোবায় গভীর গোপন অনুভবের
খেয়ালিপনায় ইচ্ছে হলেই তার যখনতখন!


সুন্দর

না চাঁদ কিংবা নদী!
না সাগর অথবা অরণ্য,
না পাহাড় কিংবা শৈলপ্রপাত,
তবে কী ফুল অথবা পাখি?

না, এসবের কেউই নয়!
এই পৃথিবীতে সুন্দর
বলতে যা কিছু বুঝি,
তার সবকিছুই আমি তোমাতেই খুঁজি!


আদিগন্ত বেদনার নীল জলরাশি

আদিগন্ত বেদনার নীল জলরাশিতে ডুবে যাচ্ছি,
আমাকে বাঁচাতে এসো না কেউ!

যদি পারো আরো কিছু বেদনা দিয়ে যেও,
যা ছিলো তোমার একান্ত আপনার!
তোমার দেয়া বেদনার নীল জলরাশি
এসে আছড়ে পড়ছে আমার বুকে!

আমি ঘুমভাঙা চোখে তাকিয়ে দেখি –
এ হৃদয় যেনো হয়ে গেছে
কোনো বিধ্বংসী ঝড়ের তাণ্ডব শেষে
ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের কোনো এক
উপড়ে পড়া গাছের ডালে লেগে থাকা
বাসা ভেঙে যাওয়া পাখিদের পড়ে থাকা
পালক ও নিয়োলিথ নদীর সরু রেখা ধরে
খুঁজতে থাকা হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার চিহ্ন!

আদিগন্ত বেদনার নীল জলরাশিতে ডুবে যাচ্ছি!
দোহাই ঐ সাত আসমান জমিনের মালিকের,
আমাকে বাঁচাতে এসো না কেউ!