গোলাম কবিরের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৪


শুধু একটিবার আমাকে ডাকুক

আবারও যদি ডাকে কবিতা
আমাকে তার লম্বা বেনী দুলিয়ে,
সেই অপূর্ব ভ্রুভঙ্গিমায় কাছে ডাকে,
দুরন্ত অজগর সাপের মতো করে
পেঁচিয়ে ধরে শব্দের মালা গেঁথে!
তখন আমি কিন্তু তার আগের
সব উপেক্ষা আর অবহেলা ভুলে গিয়ে
কবিতার বাহুডোরেই খুঁজে নেবো
আমার সুখের অসুখ ভীষণ উল্লাসে!

যে কবিতা আমাকে রাত্রিদিন
রাখে উন্নিদ্র ঘোলাটে চোখে,
প্রেমিক মজনুর মতো সর্বক্ষণ
তার ভালোবাসার অতল জলে
ডুবিয়ে রাখে, ওর জন্য আজ আমার
সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে
নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করবো!
ও শুধু একটিবার আমাকে ডাকুক!


আমি এবং একটা মৃতপ্রায় নদী

একদিন কালো মেঘপুঞ্জেরা জোট বেঁধে
প্রায় গিলে ফেলেছিলো একটা পুরো
একাদশী জ্যোৎস্না রাতের চাঁদকে,
সেদিন হঠাৎ করেই মনে হলো
একটা খসে পড়া নক্ষত্রকে শেষ হাসি
হাসতে দেখলাম ধানের খই এর মতো
কাঠের চুলার আগুনে কড়াইয়ে
যেভাবে হেসে ওঠে ঠিক তেমনি করে!

সেদিন বিনিদ্র একাকী নিবিড় রাতে
বাড়ির ছাদের ওপরে হাঁটতে হাঁটতে
এইসব দেখতে দেখতে নীচে রাস্তায়
নেমে এলাম একটা মৃতপ্রায়, নিদারুণ কষ্টে
ধুঁকতে থাকা একসময়ের ভীষণ ব্যস্ত
নির্জন নদীর ধারে ; যেখানে এখন শুধু
শ্মশানে শব দাহ করতেই আসে সবাই !

ওর সাথে একলা দাঁড়িয়ে থেকে
কথা বলতে বলতে কখন যে
ভোর হয়ে নতুন দিনের সূর্য হেসে
উঠলো নিজেও বুঝতে পারিনি!

আমি ছিলাম তখন গভীর মগ্ন
সেই মৃতপ্রায় নদীর সাথে কথা বলার
ঘোরের মধ্যে! নদীর সাথে কথা বলে
মনে হলো আমার চেয়েও ওর দুঃখ ভীষণ,
আমার চেয়েও নদীটা ভীষণ একলা,
ঢেউহীন, স্রোতহীন প্রায় মুছে যাওয়া
স্লেটের লেখার মতো!

তখন আমার নিজের বিনিদ্র একাকী
নিবিড় রাতের কষ্টকে আর তেমন
কোনো কষ্ট বলে মনে হলো না কিন্তু
সেদিনের সেই নদীর একলা হবার,
মরে যাবার গল্প শুনে নদীটার জন্য
আমার হৃদয়ের গহীনে
এখনো কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট হয়!


প্রেম নয়, অন্য কিছু

ভালোবাসার নামে নিখুঁত ছদ্মবেশে
নানা ছুঁতোয় শরীর ছুঁয়ে, ছেনে, সেঁচে
যৌনতায় অবাধ সাঁতার কেটে
খেললে কতো যে খেলা
হৃদয় হরণের সুযোগ নিয়ে!

কিন্তু তারপর? তারপর এভাবে
সব জানা হয়ে গেলে একদিন
সব ফুট্টুস হয়ে উড়ে যায়
পরিযায়ী পাখির মতো
আকাশে ডানা মেলে।

একবার দ্যাখো না কেমন না দেখে,
শুধু তার কথা শুনেই
ভালোবাসতে পারো কি না?
তোমার বুকের গহীনে তার জন্য
সর্বদাই পাগলা ঘন্টা বাজে কি না?
ভালোবেসে তাকে না পাওয়ার
বেদনায় তোমার চোখ বেয়ে
জল নেমে আসে কি না!

যদি পারো কিংবা সেই
পাগলা ঘন্টা বাজতে থাকে সর্বদাই
তবেই জেনো
তুমি সত্যিই তার প্রেমে পড়লে!
তা না হলে ওটা প্রেম নয়, অন্য কিছু!


চার পনেরো ষাট বছরের অভিজ্ঞান

কতো কিছুই তো দেখলাম
এই চার পনেরো ষাট বছরের জীবনে!
রাজনীতি, অর্থনীতি, বিশ্ব সংসারের
কতো কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন,
রূপান্তর এবং বিলীন হয়ে যাওয়া!

দেশপ্রেমিক নেতাকে দেশদ্রোহী
আখ্যা নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কিংবা
গুলি করে হত্যা করার সংবাদ
শোনারও দূূর্ভাগ্য হয়েছে আমার এই
চার পনেরো ষাটের বয়সী জীবনে!

সাধারণ মানুষের জীবনেও এরকম
কতো কিছু বদলে যেতে দেখেছি
এই চার পনেরো ষাট বছরের
জীবনে, মন্দ – ভালোয়!

আরও যে কতো কিছু
দেখতে হবে এই চার পনেরো ষাট
বছর বয়সী জীবনে
কে জানে! হয়তোবা
এমনও তো হতে পারে,
যা কখনো হতে পারে বলে কল্পনাও
করিনি তাই দেখতে হলো!

যেমন – জীবনানন্দ বাবুর
প্রিয় ধানসিঁড়ি নদীটাকে
সত্যিই এখন আর
তেমন করে খুঁজে পায় না মানুষ!

তাই এখন বেঁচে থেকে বড্ড ভয় হয়
আর কোনো অমন দূঃসংবাদ
যেনো না শুনতে পাই,
যেনো কোথাও কোনো অঘটন
না ঘটে, সারা বিশ্ব জুড়ে যেনো
কেবলই শান্তি বিরাজমান থাকে!


দুঃখের গাছ

প্রত্যেক মানুষেরই একটা
নিজস্ব দুঃখের গাছ আছে!

কেউ কেউ গাছটাকে প্রতিদিন
যত্ন করে জল ঢেলে সতেজ রাখে,
মানুষের আদর পেয়ে গাছটা
পত্রপল্লবে ছেয়ে যায়,
শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে,
এমনকি সুন্দর ফুলও ফোটে
সাদা পপি ফুলের মতো!

তারপর? তারপর সেই মানুষটা
ঐ দুঃখের গাছটা থেকে
যে ফুল ফোটে তাতেই
ভ্রমরের মতো মাতাল থাকে!

কেউ কেউ এমনও আছে,
দুঃখের গাছ দেখলেই
আগাছা মনে করে
উপড়ে ফেলতে গিয়ে পারে না।

কী এক অদৃশ্য মায়ার মোহনজালে
আঁটকে গিয়ে দুঃখের গাছটাকে
বনসাইয়ের মতো করে সংরক্ষণ করে!

মানুষ কেনো যে এমন দুঃখের গাছ লাগায়,
যত্ন করে বেড়ে ওঠার জন্য
জল ঢালে হৃদয়ের গহীনে
তা সে নিজেও হয়তো জানে না!


প্রিয় শুক্রবার

সপ্তাহের সাত সাতটা দিনের মধ্যে
আমার প্রিয় দিন হলো শুক্রবার।

দিনটা আসলেই আমার মন সর্বক্ষণ
শুধু তুমি, তুমি, তুমি করে কেটে যায়!

তারও আগে বৃহস্পতিবার
দিনগত রাত থেকেই হৃদয় আমার
তোমার জন্য দুপুরবেলা ঘুঘু পাখির
একলা ডাকতে থাকার মতো
কাঁদতে থাকে! আমার মন কেমন করে!
মনেহয় এই বোধহয় তুমি আমাকে
ডেকে নিচ্ছো তোমার কাছে!

কখনো আবার মনেহয় নিজেই
নাহয় চলে যাই তোমার কাছে
কিন্তু তা তো তোমারই নিষেধ আছে
তাই আর যাওয়া হয়ে ওঠে না!

শুক্রবার আসলেই আমার আর
কিচ্ছু ভালো লাগে না!
সারাটাক্ষন মনে হয় কখন যে
তুমি আমাকে কাছে ডেকে নেবে,
কখন তোমার কাছে যাবো,
সেই ভাবনায় সারাক্ষণ
মন আমার ফুরফুরে থাকে!

শুক্রবার চলে গেলেই আমার ফুরফুরে
মেজাজে থাকার বেলুন ফেটে যায়,
চুপসে যায় আমার ভালো থাকা!
আবারও অপেক্ষায় থাকি
প্রিয় পরবর্তী শুক্রবারের জন্য!