চলে গেলেন দুর্গাপুরে শিক্ষার আলো ছড়ানো সুরত চন্দ্র দে
রাজেশ গৌড়ঃ
বয়সের ভারে সোজা হয়ে হাটতে পারেন না। তাতে কি। হেটে হেটে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি গিয়ে শিশুদের পড়িয়েছেন।অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময় ধরে নেত্রকোনার পাহাড়ি অঞ্চল দুর্গাপুর উপজেলা সদরের শিক্ষক সুরত চন্দ্র দে এলাকায় ছড়িয়ে গেছেন শিক্ষার আলো।
রবিবার সকালে শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখা সেই মানুষ সুরত চন্দ্র দে জীবনের ইতি টেনেছেন। এর আগে তিনি জীবনের ৮৫টি বছর অতিক্রম করেছেন।
দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি দিলোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, আজ সকাল ৬টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকার মানুষ সুরত স্যারকে শেষবারের মতো দেখতে তার বাসায় ছুটে যান।
তিনি বলেন, আজ বেলা ২টায় পৌরশ্মশাণে অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর সদরের সাধু পাড়া এলাকার শিক্ষক বিধু ভূষণ দে’র ঘর আলোকিত করে সুরথ চন্দ্র দে জন্ম নেন বাংলা ১৩৬০ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ। ১০ বছর বয়সে চলে যান ভারতের আসমে। যাওয়ার আগে সপ্তম শ্রেণী নাগাদ পড়েছেন।আর পড়া হয়নি। ২০ বছর বয়সে আবার ফিরে আসেন দুর্গাপুরে। বাবার শিক্ষকতার অনুপ্রেরণায় নিজে এলাকায় শুরু করেন বাসায় বাসায় গিয়ে শিশুদের পড়ানো।বিনিময়ে কারও ইচ্ছা হলে কিছু টাকা দিলে তা নেন। আবার না দিলেও তিনি কোন টাকা চান না।বেশিরভাগ শিশুকেই পড়িয়েই কোন টাকা নেন না। এভাবেই শুরু। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় মাথায় নিয়ে কাকডাকা ভোর থেকে হেটে হেটে চলেন এলাকার এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের এই অশিতীপরের শিক্ষকতার জীবন ছিল চলমান। বয়সের কারনে ন্যূজ্ব হয়ে গেছেন। কিন্তু থেমে যান নি। পরিবারের পক্ষ থেকে বৃদ্ধ বয়স হওয়ার কারনে শিক্ষকতা বাদ দেয়ার অনুরোধ জানানো হলেও মানেননি তিনি। শিক্ষকতায় এলাকাবাসির শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন এই মানুষটি।
সুরত চন্দ্র দের ছেলে সুশান্ত চন্দ্র দে বলেন, বাবার বয়স হয়েছিল। অনেক বলেছি শরীরে কুলোয় না। শিশুদের পড়ানো বাদ দিতে। কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। বাবা বলতেন, মৃত্যুর আগ নাগাদ তিনি শিশুদের পড়িয়ে যাবেন। বাবার অনেক ছাত্র রয়েছেন। যাদের সন্তানেরাও বাবার কাছে পড়েছেন। বাবা বলতেন পড়িয়েই তিনি আনন্দ পান।