” *** ছিঁড়েন গিয়ে আমার” সাংবাদিকদের বললেন চিকিৎসক, দিয়েছেন দেখে নেওয়ার হুমকিও
নিজস্ব সংবাদদাতা:
নেত্রকোণা জেলার দুগার্পুর উপজেলার ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টর নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিতিৎসা নিতে গেলে রোগীর লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন ডা. জয়ন্তী রানী ধর নামে এক চিকিৎসক।
ঘটনার বিষয় জানার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকগণ ঘচনাস্থলে উপস্থিত হলে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন জয়ন্তী রানী ধর। একপর্যায়ে অবস্থিত সাংবাদিকদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবেন বলে ভয় দেখান। ক্যামেরা ধরা থাকার পরেও তোয়াক্কা করেন নি তিনি। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী ও স্বজনের সাথে খারাপ আচরণের একপর্যায়ে কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হন তিনি। এই সময় সাংবাদিকদের সামনেই রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিড়ে ফেলেন ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর।
রোগী স্বজন সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেলে সাত মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার জয়ন্তী রানীর কাছে যান দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ জামাল তালুকদার। তবে চেম্বারে দূর থেকে রোগী দেখার সময় রোগীর স্বজনরা কাছ থেকে রোগী দেখার কথা বলতেই ক্ষিপ্ত হন ডাক্তার জয়ন্তী রানী। একপর্যায়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হন স্বজনরা।
তাৎক্ষণিক স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক, ক্লিনিক মালিকের সাথে চেম্বারে প্রবেশ করতেই রীতিমতো তিনি চিৎকার—চেঁচামেচি শুরু করেন।
এ সময় তার স্বামী মন্ত্রীর কাছের লোক বলেও সাংবাদিকদের রীতিমতো ভয় দেখাতে শুরু করেন। তাছাড়াও তার স্বামীর ছোট ভাই ডিআইজি বলেও সাংবাদিকদের হুমকি দেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায় ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর তার ব্যক্তিগত চেম্বারে বসে সাংবাদিকদের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। তিনি চেম্বারে বসেই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন “বা**ল ছিঁড়েন গিয়ে আমার”। দুর্গাপুরের সব সাংবাদিকদের আমার চেনা আছে। এর আগেও ময়মনসিংহে কেউ কিছু করতে পারেনি। ডাক্তার জয়ন্তী রানীকে আপনারা চিনেন নি আমি তিন মাস থেকেই ময়মনসিং থেকে চলে গেছি। যা আর কেউ পারেনি। আপনারা আমার চেম্বারে আসার সাহস পেয়েছেন কোথা থেকে। আমি এখনই ডিইজিকে ফোন দিচ্ছি।
ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর এক সময়ে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে থাকলেও বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। প্রতি শুক্রবার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখেন। জনপ্রতি তিনি ভিজিট নেন হাজার টাকা। দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেনো গেল ৯ বছর ধরে ছুটির দিনগুলোতে শুধু দুর্গাপুরে তিনি রোগী দেখেন। পাশাপাশি আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সিজারও করেন তিনি। কারণ দুর্গাপুর তার কাছে যেন আলাদিনের চেরাগ।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর অন্তঃসত্তা নারীদের জন্য রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম। নিয়মিতই রোগীদের সাথে অশালীনভাবে গালমন্দ ও আচরণ যেন তার প্রতিমুহূর্তের চিত্র। ভালো কোন গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বাধ্য হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা তার কাছে যান। অভিযোগ রয়েছে নানা সময় চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে আসছেন তিনি। সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে রোগী ও নবজাতক হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার নামে।
২০২২ সালের ১২ আগষ্ট শুক্রবার সিজারিয়ান অপারেশনের পরপরই এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ আছে জয়ন্তী রাণী ধরের বিরুদ্ধে। এর পর তিনি টাকার বিনিময়ে তা মিমাংশা করেন। ওই ঘটনার নিহত প্রসূতির চম্পা আক্তার উপজেলার গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের ফুরকান মিয়ার স্ত্রী।
এছাড়াও এই রকম অভিযোগ অহরহই উঠে আসছে কিন্তু তিনি শক্তিধর হওয়ায় রোগীর কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পায় না।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার জয়ন্তী রাণী ধর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি উত্তেজিত হয়ে এরকম আচরণ করেছেন। এ জন্য তিনি দুঃখিত।