ছোট গল্প : ছায়ার ছন্দ|| অ ভি ষে ক
ছোট গল্প : ছায়ার ছন্দ
অ ভি ষে ক
রাত বারোটা। কলকাতার এক প্রাচীন লাইব্রেরির অন্ধকার কক্ষ। সেখানে আলো-আঁধারির মাঝে বসে আছে স্নিগ্ধা, হাতে তার পুরোনো একটা ডায়েরি। ডায়েরিটির হলুদ পৃষ্ঠাগুলোতে লেখা কাহিনিগুলো যেন সময়ের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই এক লাইন স্নিগ্ধার হৃদয় হিম করে দিল- “যে ছায়া তোমার চারপাশে ঘুরছে, সেটা নিছক ছায়া নয়।”
হঠাৎই স্নিগ্ধা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে কী যেন নড়ানড়ি করছে। স্নিগ্ধা আতঙ্কে পেছনে ঘুরে দেখল—কেউ নেই। তার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি যেন পুরো লাইব্রেরি জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
স্নিগ্ধা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক। সম্প্রতি তার হাতে এসে পড়েছে শতাব্দী প্রাচীন একটা ডায়েরি। ডায়েরিটি নাকি এক রহস্যময় প্রেমের গল্পের চাবিকাঠি। সেই গল্পে জড়িয়ে আছে অভিশপ্ত ভালোবাসা এবং অদৃশ্য এক ছায়ার উপস্থিতি।
ডায়েরির সূত্র ধরে স্নিগ্ধা পৌঁছায় পুরনো এক বাগানবাড়িতে। বাড়ির মালিক, রহস্যময় সৌম্য, যে ডায়েরির গল্পের চরিত্র হয়েও আজও জীবন্ত। সৌম্য স্নিগ্ধার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করে। স্নিগ্ধাও টের পায়, কিন্তু তার মনে জন্মায় সন্দেহ।
বাড়ির গোপন ঘরে পাওয়া যায় একটি পোর্ট্রেট, যেখানে স্নিগ্ধা আর সৌম্যর মতো দেখতে দুটি মানুষ আঁকা। আর পোর্ট্রেটের পেছনে খোদাই করা একটি নাম- “মায়া”।
এরপরই ঘটতে থাকে অদ্ভুত ঘটনা। ছায়ারা যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। স্নিগ্ধা অনুভব করে, ছায়াগুলি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। কিন্তু সৌম্য তাকে আশ্বস্থ করলো এগুলো তার নিছক কল্পনা।
এক রাতে স্নিগ্ধা আবিষ্কার করে, ডায়েরির শেষ কয়েক পৃষ্ঠায় লেখা গল্প ঠিক তার জীবনের মতোই। আর তাতে লেখা, “তোমার ছায়াই তোমার শেষ।”
স্নিগ্ধা সিদ্ধান্ত নেয় ডায়েরিটিকে পুড়িয়ে ফেলার। কিন্তু ঠিক সেই সময়, সৌম্য তার সামনে এসে দাঁড়ায়। তার চোখে এক অচেনা ঝলক।
-“তুমি জানো না, স্নিগ্ধা, মায়া কে ছিল।”
-“কে মায়া?” স্নিগ্ধা ভয় মেশানো কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করে।
সৌম্য শান্ত গলায় বলে
-“মায়া আমিই। আর সেই ছায়া তুমি। আমরা আবার এই গল্পের নায়ক-নায়িকা হয়েছি। অভিশাপ এখনও ভাঙেনি।”
হঠাৎই সৌম্যের শরীর থেকে ছায়া আলাদা হয়ে যায়। ছায়াটি স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে আসে, আর স্নিগ্ধার চোখের সামনে সৌম্য ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ডায়েরির শেষ লাইনটি স্নিগ্ধার মনে বাজতে থাকে
-“ছায়ার ছন্দ কখনও থামে না। এটা শুধুমাত্র একটা নতুন শুরু।”
স্নিগ্ধা ডায়েরি হাতে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে ভোরের আলো, কিন্তু তার জীবনের গল্পে সেই মুহুর্তের পর থেকে এক নতুন রাতের শুরু হয়েছে;
এ এক অদ্ভুত রাত। স্নিগ্ধার শরীর জুড়ে এক অদৃশ্য কম্পন। বিন্দু বিন্দু ঘামে ভিজে গেছে কপাল।
এরপর স্নিগ্ধার সাথে কী ঘটবে বা ঘটতে চলেছে সে নিজেও জানে না।