জলমহাল শুকিয়ে মাছ শিকার : বোরো জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে কৃষক
জাকির আহমেদ:
নেত্রকোনার মদনে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৩০ একর বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বার বার প্রশাসন ও পুলিশকে অবগত করলেও কোন রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
স্থানীয় লোকজন ও স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মদন সদর ইউনিয়নের মদন গ্রামের পাশে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে বাইনবিল নামের একটি জলমহাল রয়েছে।
সরকার থেকে ৩ বছরের জন্য জলমহালটি ইজারা নেয় হাওর বাংলা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। সমিতির সভাপতি উলাদ মিয়া নামের এক ব্যাক্তি। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ পুরো জলমহালটি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন মদন পৌর বিএনিপর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাইনবিলের পানি দিয়ে আশপাশের প্রায় ৩০ একর বোরো জমির সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু মাছ ধরার জন্য বিলটির পানি মেশিন দিয়ে শুকানো হয়েছে। এতে করে আশপাশের জমিগুলোতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে।
পানির অভাবে ফসলহানির শঙ্কায় ভুকছেন অর্ধশত কৃষক পরিবার। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক রহিছ উদ্দিন প্রশাসনের কাছে বার বার ঘুরেও কোন পতিকার পায়নি। অবশেষে তিনি সেচের পানির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় শাখা নং-০৭, সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ অনুচ্ছেদে ২২ নং প্যারাতে উল্লেখ আছে, যে সকল জলমহাল থেকে (নদী, হাওর, খাল ইত্যাদি) জমি সেচ প্রদানের সুযোগ রয়েছে, সেখান থেকে সেচ মৌসুমে সেচ প্রদানের বিঘিœত করা যাবে না। অথচ বাইনবিল জলমহালের ইজারাদাররা জলমহাল নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা করেনি।
গতকাল রবিবার সরেজমিন গেলে দেখা যায়, বাইনবিল জলমহাল শুকনো। সেচ দেওয়ার মতো কোনো পানি নেই।
এ সময় স্থানীয় কৃষক আজিম উদ্দিন, সুলতানসহ কয়েকজন কৃষক জানায়, ‘বাইনবিল যারা ইজারা নেয় তারা প্রতি বছরই বিল শুকিয়ে মাছ ধরে। এতে করে প্রতি বছরই সেচের পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
আর খরা দেখা দিলে তা তীব্র পানি সংকটে পরিণত হয়। ফসল উৎপাদনে চরম ব্যাহত হয়। এ বছর পানি শুকিয়ে ফেলায় বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে।’
কৃষক রহিছ উদ্দিন জানান, গত ০৯ মার্চ মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির “বাইনবিল” শুকিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সেচ মেশিন চালু করে। বিষয়টি আমি মদন থানার ওসি মহোদয়কে অবগত করি। তার পরামর্শে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাইনবিল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পায় আব্দুল কাদির। একদিকে বিলের পাড়ের জমি সেচ পানির সংকটে পড়লো এবং অন্যদিকে দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি হুমকির মধ্যে পড়লো। আদালতের দারস্থ হয়েও বিলের সেচ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির জানান, ‘বিলের মালিক উলাদ মিয়া। রহিছ উদ্দিন মেম্বার উলাদ মিয়ার কাছে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না পেয়ে সে এমন করছে। এছাড়াও বিলের পানি শুকাইছে কৃষকরা। আমার তো এখানে কোনো ফাংশন নাই।’
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসনান জানান, ‘বাইনবিল জলমহাল সেচের বিষয়ে রহিছ উদ্দিন মেম্বার যতবার আমাকে জানিয়েছে ততবার আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। আমি নিজেও এই জলমহালে একাধিকবার গিয়েছি। তারপরও যদি পুলিশকে দোষ দেয় কিছু বলার নাই।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, এ বিষয়ে আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে রহিছ উদ্দিন মেম্বার আমাকে মোবাইলে অবগত করলে সাথে সাথেই লোক পাঠিয়ে সেচ বন্ধ করিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিতে ওসিকে অবগত করেছিলাম।’