টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানের ভয়াবহ শাস্তি

নামাযের ভিতরে-বাইরে সর্বাবস্থায় কাপড় টাখনুর নিচে পরা কবীরা গুনাহ

প্রকাশিত: ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২৩

ইসলামিক জার্নাল ডেস্কঃ
প্রাচীন যুগ থেকে টাখনুর নিচে কাপড় সাধারণত অহংকারবশত পরা হয়। রাসুল (সা.)-এর যুগেও এর প্রচলন ছিল। যেহেতু মহান আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না, তাই নবীজি (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।

এ শুনে আবু বকর (রা.) বলেন, আমার অজ্ঞাতে কাপড়ের একপাশ কোনো কোনো সময় নিচে নেমে যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি তো অহংকারের সঙ্গে তা করছ না। মুসা (রহ.) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবদুল্লাহ (রা.) কি ‘যে ব্যক্তি তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহ.) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৫)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আল-‘আলা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.)-কে লুঙ্গি পরিধানের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি এ বিষয়ে সম্যক অবগত লোকের কাছেই এসেছ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিমের পরিধেয় লুঙ্গি-পায়জামা নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত থাকবে, তবে টাখনুদ্বয় পর্যন্ত রাখলেও কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নিচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশে নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৩)। এর মানে এই নয় যে টাখনু কখনো ঢাকা যাবে না।

যেমন মোজা ইত্যাদি পরলেও টাখনু ঢেকে যায়; কিন্তু তার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নবীজি (সা.) নিজেও মোজা পরিধান করেছেন, শীতের দিনে তার ওপর মাসাহও করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, সাহল আস সাঈদি থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) চামড়ার মোজাদ্বয়ের ওপর মাসহ করেছেন এবং আমাদেরও মোজাদ্বয়ের ওপর মাসহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৪৭)

মানুষ যেসব কাজকে লঘু মনে করে অথচ আল্লাহর নিকটে সেগুলো খুবই গুরুতর, তন্মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা একটি। অনেকের কাপড় এত লম্বা যে, তা মাটি স্পর্শ করে। কেউবা আবার পরিধেয় বস্ত্র পিছন থেকে মাটিতে টেনে বেড়ায়। টাখনুর নিচে এভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ» قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَ مِرَارًا، قَالَ أَبُو ذَرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا، مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «الْمُسْبِلُ، وَالْمَنَّانُ، وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ»

“তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো-টাখনুর নিচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোনো কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী”।সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬; মিশকাত, হাদীস নং ২৭৯৫।

টাকনুর মধ্যে বিভিন্ন এনজাইম থাকে যেগুলা আলো বাতাস না পেলে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই পুরুষদের অবশ্যই টাকনুর উপরে কাপড় পড়তে হবে।

নারীদের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টা, নারীরা টাকনুর নিচে কাপড় না পড়লে উক্ত সমস্যা দেখা দিবে।

ইজার (লুঙ্গি/পাজামা) বা পরিধেয় কাপড়ের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে; সে অংশ জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি)

২. আল্লাহ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির দিকে (দয়ার) দৃষ্টি দেবেন না, যে ব্যক্তি অহংকার করে ইযার (লুঙ্গি/পাজামা) বা পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে (টাখনুর নিচে) পরেছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমান পুরুষদের উচিত, পায়ের গোড়ালি বা টাখনুর নিচে যে কোনো কাপড় পরা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে হাদিসে সতর্কতা ও শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

নারীরা টাখনুর নীচে কাপড় পরবে। উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মহিলারা তাদের কাপড়ের আঁচলের ক্ষেত্রে কি করবে? তিনি বললেন, তারা (মধ্যহাঁটু থেকে) এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। তিনি বললেন, এতে তো তাদের পা প্রকাশ হয়ে যাবে। তিনি বললেন, তবে তারা এক হাত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশী করবে না’ (তিরমিযী হা/১৭৩১; প্রভৃতি, মিশকাত হা/৪৩৩৫; ছহীহাহ হা/৪৬০)। আল্লাহ বলেন, আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় (নূর ২৪/৩১)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু হযম বলেন, আয়াতটি প্রমাণ করে যে, নারীদের পা ও পায়ের নলা তাদের গোপনাঙ্গের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রকাশ করা হালাল নয় (আল-মুহাল্লা, মাসআলা নং ৩৪৯, ২/২৪৭)।

বিদ্বানগণ এবিষয়ে একমত যে, গোড়ালীর নীচে কাপড় ঝুলানো পুরুষদের জন্য হারাম, নারীদের জন্য নয় (মিরক্বাত হা/৪৩১৪-এর ব্যাখ্যা)। তবে বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের পায়ে কালো মোযা ব্যবহার করা উত্তম হবে।

অনেক সময় দেখা যায় জামাত শুরু হওয়ার আগে মুসল্লীদের কেউ কেউ নিজেদের পাজামা, প্যান্ট ইত্যাদি টাখনু গিরার উপর তুলে নিচ্ছেন বা ইমাম সাহেব বলে দিচ্ছেন, কাপড় টাখনুর উপর তুলে নিন। এতে মনে হয় যেন শুধু নামাযের সময়ই কাপড় টাখনুর উপর তুলতে হবে; এ বিষয়টি শুধু নামাযের সাথে সম্পৃক্ত, আসলে বিষয়টি এমন নয়।

নামাযের ভিতরে-বাইরে সর্বাবস্থায় কাপড় টাখনুর নিচে পরা কবীরা গুনাহ। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা মেনে পোশাক পরার ক্ষেত্রে হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

সংকলন:
মাও: আবু তাহের নেত্রকোণী
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখক, ইসলামিক জার্নাল বিভাগ
নেত্রকোণা জার্নাল।