নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মা- ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় নেত্রকোণার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার ভোরে এই আগুনের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নেত্রকোণা সদর উপজেলার দক্ষিন বিশিউড়া ইউনিয়নের বরুনা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলের বউ নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (৩)।
দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া চারটি মৃতদেহ সকাল ৭টার দিকে ফায়ারসার্ভিস উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্রেনের তিনটি বগি।
আগুনে মা- ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি জানার পরই নেত্রকোণার গ্রামের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠে। গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
পারিবারিক সূত্রে স্থানীয়রা জানান, নেত্রকোণা সদর উপজেলার বরুনা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে মিজানুর রহমান ঢাকার কাওরন বাজারে হার্ডওয়ারে (পার্সের) ব্যবসা করেন। স্ত্রী নাদিরা আক্তার পপি ও দুই সন্তান ফাহিম ও ইয়াসিন আরাফাতকে নিয় কাওরন বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকেন। গত ১১ ডিসেম্বর স্বামীর বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন। গত রোববার নেত্রকোণা জেলা শহরের কুরপাড়ে ভাশুর আবদুল কাদিরের বাসায় মিলাদ ছিল। সন্তানদের নিয়ে ভাশুরের বাসায় যান পপি আক্তার। বেড়ানো শেষে গত সোমবার রাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকায় স্বামীর কাছে ফিরছিলেন পপি। তার আর ফেরা হল না। আদরের সন্তানসহ দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরতে হল তাকে। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা। এ সময় মা পপি তিন বছরের ছেলে ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। আগুনে মা পপি ও ছেলে ইয়াসিন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়।
এ সময় পপির ভাই হাবিবুর রহমান ভাগ্নে ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে রক্ষা পান।
মঙ্গলবার সকালে এ দুর্ঘটনার খবর নেত্রকোনার বরুনা গ্রামে পৌছলে নিহতের পরিবার এবং এলাকায় শোক দেখা দেয়। নিহত পপির বাবা ফজলুল হক, শাশুরী মেহের বানু, শশুর আবদুল মজিদসহ আত্মীয় স্বজনরা শোকে কাতর হয়ে পড়েন। শাশুরী শহর বানু ও বাবা ফজলুল হক কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা আহাজারি করছিলেন। মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত নেত্রকোনার বরুনা গ্রামে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন লোক নিহতদের বাড়িতে যেতে দেখা যায়নি।
শহর বানু বারবার বলছিলেন- “কি দোষ করেছিল আমার বৌমা ও ছোট্টা নাতী। কেন তাদের আগুনে পুড়ে মরতে হল। আমি আর আমার দাদা ভাই সোনাকে দেখতে পাইতাম না। দাদা ভাই যাওনের সময় আমাকে বলে গিছিল- দাদু যাই। আবার আইবামনে। বৌমা বলেছিল- মা শরীরের খেয়াল রাইখেন। আর কোন দিন তাদের ফিরে পাইতাম না। আগুন যারাই দিয়া থাকুক তাদের বিচার চাই”।
নাদিরা আক্তার পপির বাবা নেত্রকোণার পূর্বধলার আলমপুর গ্রামের ফজলুল হক খবর শুনে জামাইয়ের বাড়িতে যান এবং আহাজারি করছিলেন। তিনি বলেন, আমি কি অপরাধ করেছিলাম। কি দোষে আমার নিস্পাপ নাতী ও মেয়েকে আগুন দিয়ে পুড়ে মরতে হল। আমি আমার মেয়ে ও নাতীকে আর ফিরে পাব না। যারা আগুন দিয়েছে তাদের বিচার চাই।
জানা গেছে, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে সোমবার রাত ১১টায় ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশন এসে থামলে তখন কিছু যাত্রী সেখান থেকে নেমে যায়। এসময় তাদের পেছনের ছিটে থাকা দুই ব্যক্তিও নেমে যায়। এরপর পিছনের ছিট থেকে আগুন জ্বলে উঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ট্রেনের বগীতে থাকা হাবিবুর রহমান ও ফাহিমসহ অন্য যাত্রীরা নামতে পারলেও ভিতরে আটকা পড়েন ছোট ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা আক্তার। তারা কোনভাবেই ট্রেন থেকে বের হতে পারেন নি। পরবর্তিতে ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ বের করেন। নিহত নাদিরার স্বামী মিজানুর রহমান মিজান কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়ারের ব্যবসা করেন। তিনি তেজগাঁও তেজতুরি বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ঢাকায় ট্রেনে আগুনে কয়েকজন মারা গেছে শুনেছি। এ ব্যাপারে কেউ থানায় জানায়নি। আমাদের অবহিত করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোণা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া তাবাসসুম বলেন, নিহতদের লাশ এখনও গ্রামের বাড়িতে পৌছে নি। নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
ইমেরিটাস এডিটরঃ দিলওয়ার খান
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
বার্তা সম্পাদকঃ শরীফা অসীম বর্ষা
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, ২৪০০
ফোনঃ ০১৭৩৫ ০৭ ৪৬ ০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫ ৮৮ ৪০ ৫০
ই-মেইলঃ netrokonajournal@gmail.com
©২০২০-২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত