দুবাই থেকেও বারহাট্টায় নাশকতা মামলার আসামি হলেন হাবিবুর

প্রকাশিত: ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টায় উপজেলার নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে মো. হাবিবুর রহমান (৪১) নামে এক দুবাই প্রবাসীর নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে সর্বত্রই নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৩০ নভেম্বর বারহাট্টা উপজেলার কদম দেউলি এলাকায় বিষ্ফোরক দ্রব্য, ককটেল, মশাল নিয়ে পুলিশ বক্সে হামলা ও রেল লাইনের ক্ষতিসাধনের চেষ্টার অভিযোগে বিএনপির ৯৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ।

এরমধ্যে বারহাট্টা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিক আহমেদ কমলকে প্রধান আসামি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা এটিম আব্দুল বারী ড্যানীসহ ৬৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ মামলায় ৩৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে মো. হাবিবুর রহমানকে। হাবিবুর রহমান বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত দুঃখু মিয়ার ছেলে।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, হাবিবুর ১৬/১৭ বছর ধরে দুবাই থাকেন। হাবিবুর শেষবার ২০২০ সালে দেশে এসেছিলেন। ছয়মাস দেশে ছুটি কাটিয়ে ফের দুবাই চলে যান। এরপর আর দেশে আসেননি পরিবারের লোকজন সহ এলাকাবাসী জানান। হাবিবুর কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। হাবিবুরদের ছয় ভাইয়ের মধ্যে পাঁচজনই প্রবাসী। ভাইদের মধ্যে সবার বড় হাবিবুর। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।

বিদেশে থাকা হাবিবুরের নামে নাশকতা মামলা হওয়ায় ঘটনায় এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি একটি গায়েবি মামলা। বিদেশ থেকে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া দেশে এসে নাশকতা করে আবার চলে গেলেন কেমনে?

এ বিষয়ে হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জোৎস্না আক্তার জানান, আমার স্বামী হাবিবুর রহমান ১৭ বছর ধরে দুবাই থাকেন। ২৫/২৬ মাস আগে শেষবার দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে দুবাই গিয়েছেন। বিদেশে থেকে বারহাট্টায় আসলেন কিভাবে ? আর এসে ককটেল ও বিষ্ফোরক দ্রব্য নিয়ে নাশকতা করতে গেল কিভাবে ? সে তো কোন রাজনীতিও করে না। তাহলে বিএনপি নেতাদের সাথে তার মামলায় আসলো কিভাবে বুঝলাম না এলাকাবাসী জানান।

বিদেশে থাকা হাবিবুরের নামে নাশকতার মামলা হওয়ার খবর শুনে হতবাক হন তার মা মহিলা খাতুন। তিনি বলেন, আমার ছেলে দেশেই থাকে না তাহলে বারহাট্টায় নাশকতা করবে কিভাবে। ১৭ বছর ধরে বিদেশে থাকে। দেশে থাকাকালেও কোন দলের রাজনীতি করেনি। এমন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

হাবিবুরের চাচাতো ভাই মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাবিবুরদের পরিবারের কেউ রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়। তারা ছয় ভাইয়ের পাঁচজনই প্রবাসী। এটি একটি মিথ্যা ও মনগড়া মামলা।

বাউসী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আইনুল হক বলেন, হাবিবুর রহমান দুবাই থাকে দীর্ঘ বছর ধরে। কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিল না। তার একজন প্রয়াত মামা বিএনপির নেতা ছিলেন। হাবিবুর শেষবার প্রায় আড়াই বছর আগে দেশ থেকে গিয়েছে। দুবাই থাকা অবস্থায় দেশে নাশকতা করা সম্ভব না। এটি একটি মিথ্যা মামলা। মামলা রেকর্ড করার আগে বিষয়টি তদন্ত করা দরকার ছিল।

হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই বউ দুলেনা আক্তার বলেন, আপনাদের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য মামলার সংবাদ শুনলাম। তবে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। আমাদের পরিবারের সবাই সহজ সরল। ধরনের মিথ্যা মামলা কি করে হলো আমাদেরও প্রশ্ন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বারহাট্টা থানার উপপরিদর্শক(এসআই) মো. সোহেল খাঁন মোবাইল ফোনে বলেন, ঘটনাটি শতভাগ সত্য। তবে আসামির বিষয়টি তদম্ত করে পরে বাদ দেওয়া হবে। সাক্ষাতে বিস্তারিত কথা হবে বলে সংযোগ কেটে দেন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ডা. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, বিদেশে থাকা ব্যক্তিকে আসামি করা পুলিশের কাছে এটা তো তেমন কিছু না। এর আগে মৃত মানুষের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে। মামলা যখন গায়েবি তখন সবকিছুই সম্ভব।