দুর্গাপুরে হাজংদের চরমাগা উদযাপন উপলক্ষে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়ণ

প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫

রাজেশ গৌড়ঃ
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেল এর আয়োজনে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চরমাগা উদযাপন উপলক্ষে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়ণ হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলার সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ চত্বরেএ পালা হয়।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন , বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক এস এম শামীম আকতার,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজং, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কুল্লাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, ডন বস্কো কলেজের পরিচালক ফাদার ফাদার পাওয়েল কোচিওলেক,বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী অনিমেষ হাজং, চিত্রশিল্পী রুপক হাজং , গাঁও মোড়ল হরিদাস হাজং,সহ আরো অনেকে।

চিত্রশিল্পী রুপক হাজং বলেন, চরমাগার বাংলা অর্থ হলো সংগ্রহ করা৷ চরমাগা আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । কালী পূজার অমাবস্যা তিথি থেকে এই উৎসব শুরু হয়। চলে ১০/১২ দিন পর্যন্ত। এ সময় আমরা আমাদের পাড়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ধান চাল ডাল অর্থ সংগ্রহ করি। এগুলো সংগ্রহ শেষে সংগ্রহিত জিনিসগুলো দিয়ে গ্রামের সকলে মিলে একটি ভোজের আয়োজন করি। বর্তমান সময়ে আমাদের এ সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে শিল্পকলা একাডেমি থেকে আড়াপাড়া স্কুল মাঠে এ আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানটা করতে গেলে আমাদের অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। যদি আমরা সরকারিভাবে সাপোর্ট পাই তাহলে আমাদের এই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব।

প্রধান অতিথি ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিকশিত করার লক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সেগুলো রক্ষার জন্য কাজ করছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এ প্রত্যন্ত গ্রামে মহিষাসুরবধ পালা মঞ্চায়ণ করার আয়োজন করা হয়৷ মানুষের মাঝে নতুন নতুন চিন্তার বীজ বপন করতে হবে এ ভিন্ন ভিন্ন শিল্পচর্চার মাধ্যমে। সকলে মিলে দেশের মহিষাসুর ধ্বংস করে নতুন বাংলাদেশ যেনো গড়তে পারি আমরা।

এরপর সন্ধ্যায় হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চরমাগা উৎসব নিয়ে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির শিল্পীগণ বিভিন্ন নৃত্য পরিবেশন করে। শেষে বগাউড়া গ্রামের হাজং সাংস্কৃতিক দল ঐতিহাসিক ‘‘মহিষাসুর বধ’’ ও ‘‘কালী যুদ্ধ’’ পালা নান্দনিক অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরে।