ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কেন্দুুয়া, জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি

প্রকাশিত: ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২৪

মজিবুর রহমানঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশছাড়াকে কেন্দ্র করে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থির অবস্থার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে নেত্রকোণার কেন্দুুয়া উপজেলা।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় সড়কে বেড়েছে গণপরিহনের উপস্থিতি। গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যা এখনো কম। খুলেছে বিভিন্ন দোকানপাট ও মার্কেট।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত কেন্দুুয়া উপজেলা ছিল প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের দখলে। যেই তাঁর পদত্যাগে খবর ছড়িয়ে পড়লো তাৎক্ষণিক হাজার হাজার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্র শিক্ষকসহ আমজনতা কেন্দুুয়া উপজেলা সদরসহ উপজেলার হাটেঘাটে মাঠে উৎসবে মেতে ওঠার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কিছু মানুষ।

ওই বিক্ষুব্ধ জনতা থানা কমপ্লেক্স, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট আব্দুল মতিনের বাসাবাড়িতে অগ্নি সংযোগসহ ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু ম্যুারাল, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স,আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়, নেতাদের ব্যক্তিগত চেম্বার, বাড়িঘর, দোকানপাটের ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ওইদিন বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দের বলিষ্ঠ ভূমিকা বিক্ষুব্ধ জনতাকে নির্বৃত্ত করতে সক্ষম হন। এরপরে রাতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এসবের খবর পেয়ে রাতেই ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে আসেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী।

পরদিন সকাল থেকে তিনিও উপজেলা প্রশাসনসহ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগসহ এইসব ঘটনা যাতে আর না ঘটে মাঠে নামেন। দুপুরে বিজয় মিছিল প্রাক্কালে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণকালে রফিক হিলালী বলেন, তিনি গায়েবি ৫৪ টি মামলার আসামী। তিন বার তাঁর বাসাবাড়িতে হামলা ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের রাতের খাবারের জন্য রান্না করা ভাত ফেলে দিয়েছিল হামলাকারীরা। আমাকে মামলা দিয়ে যারা হয়রানি করেছে তাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি। যারা আমার বাসাবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট করেছিল তাদেরকেও আমি মাফ করে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, জানি আমার মতো আপনারাও মামলা হামলাসহ নানান ভাবে স্বৈরচারী হাসিনা সরকার ও তার দল দ্বারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত। বহু কষ্টের চাপ রয়েছে আপনাদের মাঝে। নতুন দিনের প্রত্যাশায় সবকিছু ভূলে গিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়ি। আজকের এই বিজয় তাঁর পুরোটাই কৃতীত্বের দাবীদার এদেশে ছাত্রসমাজ। দেশের এই সূর্য্য সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা মুক্ত বাতাসে।

যারা এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের মাগফেরাত আর আহতদের জন্য সুস্বাস্থ্য কামনা করেন তিনি। ওই বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলালের নেতৃত্ব পৌরশহরের বিজয় মিছিল ও দোয়া অনুষ্ঠান হয়। এসয়ম তিনি নেতাকর্মীদের শান্ত ও ধৈর্যবান হতে বলেন।

তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিকে ফেরাতে একযোগে কাজ করছে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ
জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ড.রফিকুল ইসলাম হিলালী ও দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল কেন্দুুয়া বাজারের ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বলেন এবং কেউ কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা চেষ্টা বা চাঁদাবাজী করতে এলে তাদেরকে তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য বলেছেন তারা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৈঠকসহ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় মতবিনিময় করেছে ড.রফিকুল ইসলাম হিলালী। তাছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মাঠে থেকে পরিবহনে চাঁদাবাজী বন্ধসহ দোকানপাট খোলা ও নির্যাতিত মানুষের দাঁড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে।

কেন্দুুয়া বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বেশিভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মানুষও বাজারে আসছিল না। নেতাদের ভূমিকায় পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল হয়েছে। এখন মানুষজন বিভিন্ন প্রয়োজনে বাজারে আসছেন।

কেন্দুুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, এখন পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। দোকানিরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দগণও তাদেরকে অভয়বাণী দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আমারাও কাজ করছি। আশাটকরি দুইএকদিন মধ্যে সব টিকটাক হয়ে যাবে।