নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
নি:সন্দেহে নামাজি-ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুনাহের কাজ। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لو يَعْلَمُ المَارُّ بيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عليه، لَكانَ أنْ يَقِفَ أرْبَعِينَ خَيْرًا له مِن أنْ يَمُرَّ بيْنَ يَدَيْهِ. قالَ أبو النَّضْرِ: لا أدْرِي أقالَ: أرْبَعِينَ يَوْمًا، أوْ شَهْرًا، أوْ سَنَةً
নামাজি-ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো। বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর!(সহীহ বুখারী ৫১০ , সহীহ মুসলিম ৫০৭)
তবে, কেউ যদি নামাজীর বরাবর সামনে থাকে, তাহলে সেখান থেকে ডানে কিংবা বামে চলে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটা নামাজের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য বিনা প্রয়োজনে এমন করা ঠিক নয়।
অনুরূপভাবে যদি নামাজরত ব্যক্তির সামনে ‘সুতরা’ থাকে তাহলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। যদিও এটাও বিনা প্রয়োজনে করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, إِذَا وَضَعَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤَخَّرَةِ الرَّحْلِ فَلْيُصَلِّ وَلاَ يُبَالِي مَنْ مَرَّ وَرَاءَ ذَلِكَ
উটের পিঠের কাষ্ঠাসনের অনুরূপ কিছু (সুতরা) যদি মুসল্লির সামনে থাকে, তবে এর বাইরে দিয়ে কারো যাতায়াতে পরওয়া করার কিছু নেই। (ইবনু মাজাহ ৯৪০, তিরমিযী ৩৩৫)
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ -بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ-حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ.
যদি কেউ নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চায়, তখন নামাযী ব্যক্তি তাকে বাধা প্রদান করতে পারবে। আর বাধা দেওয়ার নিয়ম হলো, পুরুষ হলে প্রথমে তাসবীহের মাধ্যমে বাধা দিবে। আর যদি মহিলা হয় তাহলে তাসফীহ তথা হাতের পিঠে শব্দ করার মাধ্যমে বাধা দিবে। এভাবে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যক্তি না ফিরে তাহলে নামাযী ব্যক্তি তার ডান হাত সামনের দিকে প্রসারিত করে সতর্ক করবে। এরপরও যদি সে অতিক্রম করতে চায় তাহলে নামাযী ব্যক্তি তার বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বাধা দিবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে যাবে না কারণ তাতে নামায ভঙ্গ হওয়ার আশংকা আছে।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيحُ لِلنِّسَاءِ .
১.অর্থ: সাহাল ইবনে সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, (নামাযরত অবস্থায় সতর্ক করার জন্য) পুরুষদের জন্য তাসবীহ আর মহিলাদের জন্য তাসফীহ তথা হাতের পিঠে শব্দ করবে। ( ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৩১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৩৮ হাদীসের মান: সহীহ )
حَدَّثَنَا أَبُو صَالِحٍ السَّمَّانُ، قَالَ: رَأَيْتُ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ يُصَلِّي إِلَى شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ، فَأَرَادَ شَابٌّ مِنْ بَنِي أَبِي مُعَيْطٍ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَدَفَعَ أَبُو سَعِيدٍ فِي صَدْرِهِ، فَنَظَرَ الشَّابُّ فَلَمْ يَجِدْ مَسَاغًا إِلَّا بَيْنَ يَدَيْهِ، فَعَادَ لِيَجْتَازَ، فَدَفَعَهُ أَبُو سَعِيدٍ أَشَدَّ مِنَ الأُولَى، فَنَالَ مِنْ أَبِي سَعِيدٍ، ثُمَّ دَخَلَ عَلَى مَرْوَانَ، فَشَكَا إِلَيْهِ مَا لَقِيَ مِنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَدَخَلَ أَبُو سَعِيدٍ خَلْفَهُ عَلَى مَرْوَانَ، فَقَالَ: مَا لَكَ وَلِابْنِ أَخِيكَ يَا أَبَا سَعِيدٍ؟ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَلْيَدْفَعْهُ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ».
২.অর্থ: আবু সালেহ সাম্মান (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু সাঈদ খুদরী (রা.)-কে দেখেছি। তিনি জুম'আর দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসাবে কোন কিছু সামনে রেখে নামায আদায় করছিলেন। আবু মুয়াইত গোত্রের এক যুবক তার সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখলো যে তার সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তার সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবার আবু সাঈদ খুদরী (রা.) প্রথম বারের চাইতে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবু সাঈদ (রা.)-কে তিরস্কার করে
সে মারওয়ানের কাছে গিয়ে আবু সাঈদ (রা.)-এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবু সাঈদ (রা.)-ও মারওয়ানের কাছে গেলেন। মারওয়ান তাকে বললেনঃ হে আবু সাঈদ! তোমার এই ভাতিজার কী ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,যখন তোমাদের কেউ লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে নামায আদায় করে, অতঃপর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তখন সে যেন তাকে বাধা দেয়। এরপরও যদি সে অমান্য করে, তাহলে সে ব্যক্তি (নামাযী) যেন তাকে শক্তভাবে বাধা দেয়,কারণ সে (মানুষরূপী) শয়তান। ( ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৮৫ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০১২ হাদীসের মান: সহীহ )
فَقَالَ أَبُو جُهَيْمٍ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ يَعْلَمُ المَارُّ بَيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ» قَالَ أَبُو النَّضْرِ: لاَ أَدْرِي، أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، أَوْ شَهْرًا، أَوْ سَنَةً.
৩.অর্থ: আবু জুহাইম (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় পাপ, তাহলে সে নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (বছর বা মাস বা দিন) নামাযীর সালাম ফিরার অপেক্ষা করাকে উত্তম মনে করতো। ( ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৮৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০১৫ হাদীসের মান: সহীহ )
উপরের সহীহ হাদীসগুলো থেকে একথাই প্রতিয়মান হলো যে, নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়, তখন নামাযী ব্যক্তি তাকে বাধা দিতে পারবে। কারণ নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে কেউ গেলে তার নামাজের খুশু খুজু নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়াও নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা মারাত্মক গোনাহের কাজ ৷ বিধায় সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصّ
সংকলন:
মাও: আবু তাহের নেত্রকোণী
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখক, ইসলামিক জার্নাল বিভাগ
নেত্রকোণা জার্নাল।
ইমেরিটাস এডিটরঃ দিলওয়ার খান
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
বার্তা সম্পাদকঃ শরীফা অসীম বর্ষা
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, ২৪০০
ফোনঃ ০১৭৩৫ ০৭ ৪৬ ০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫ ৮৮ ৪০ ৫০
ই-মেইলঃ netrokonajournal@gmail.com
©২০২০-২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত