নেত্রকোণায় অপরিকল্পিত বাঁধে তলাবে ২৫ মৌজার ফসলি জমি বাড়িঘর ও গবাদিপশু
জাহিদ হাসানঃ
নেত্রকোণা সদর উপজেলার কালিয়ারা-গাবরাগাতি ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক একটি বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ইউনিয়ন এলাকার ২৫টি মৌজার ফসলি জমি রক্ষায় এই দাবি তাদের। একই সাথে তাদের ফসলি জমিতে মাটি কাটা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাঁধ নির্মাণের নামে ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের প্রলুব্ধ করে তাদের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ওই সব জমির টপ সয়েল বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশেরও ঘটছে মারাত্মক বিপর্যয়। এদিকে মাটির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় সরল-সহজ কৃষকরাও হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ।
জানা যায়, নেত্রকোণা জেলার অন্যতম নদী সোমেশ্বরী থেকে ধনারখাল-কুমারপুর-নওয়াপাড়া বালস খালের উৎপত্তি। খালটি সিধলী বাজার থেকে সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবড়াগাতি ইউনিয়নের মধ্যবর্তি স্থান দিয়ে ৬ কিলোমিটার পথ বহমান থেকে কংস নদে মিলিত হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর আশির দশক পর্যন্ত কৃষিতে অসামান্য অবদান রেখে আসছিলো এই কুমারপুর-নোয়াপাড়া খাল। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লেলুপ দৃষ্টি পড়ে খালের উপর। তাদের দখল-দুষনের শিকার হয়ে আড়া আড়ি বাঁধ নির্মান ও মাটি ভরাটের কারণে বিপন্ন হতে থাকে খালটি।
বিগত সরকারের আমলে খালটির সংস্কারে কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও বরাদ্দের টাকার লুটপাটের কারনে যেই সেই অবস্থায় থেকে যায় খালটি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছর খালের বিদ্যমান আড়াআড়ি বাঁধগুলো অপসারণ না করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোকের সহায়তায় জীবন রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দেয়। ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয়-বরাদ্ধেও পরিমাণ ৬ কোটি ৭২লাখ টাকা। সারোয়ার-বেলার (জেবি) ও প্রীতম এন্টারপ্রাইজ-হেলাল উদ্দীন (জেবি) নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
নেত্রকোণা সদরের কালিয়ারা গাতি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন, কুমারপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাসেন আলী ফকির, আবুতাহের, পাটলী গ্রামের শহিদুল বারেকসহ মানববন্ধনের অংশ গ্রহন করা বক্তারা বলেন, বাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কুমারপুর, পাটলি ও নাড়িয়া পাড়াসহ ২৫টি গ্রাম বর্ষার শুরুতেই পানিতে তলিয়ে যাবে।
এ ছাড়া, বোরো ও আমন উৎপাদন ব্যাহতসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে।জীবন রক্ষা বাঁধ হয়ে উঠবে জীবন-ঘাতি। সরকারের কোটি কোটি ব্যয় কোন সুফল বয়ে আনবে না। এ সব কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে খাল খনন ও খালের বাঁধগুলো অপসারণ করে খালের উভয় পাশে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। পরে তাদের পক্ষ হতে প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এদিকে কৃষকের রোপনকৃত জমির চারা ধান নষ্ট করে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল। জমির টপ সয়েলে থাকে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈবিক বস্তু।
একবার কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা আবার পূর্ণতা লাভ করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ বছর। কৃষকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের উর্বর জমির মাটি কেটে নিয়ে টপ সয়েল বিনষ্ঠ করছে ঠিকাদারের লোকেরা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষক, বিপর্যস্থ হচ্ছে পরিবেশ।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, যাচাই বাছাই ও এলাকার কৃষকদের সাথে একাধিক মিটিং করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাঁধটি নির্মিত হলে কৃষকদেও উপকারে আসবে।
সারকথা, কালিয়ারা গাবরাগাতী ইউনিয়নের শত শত হেক্টর ফসলি জমি ও কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। দেখা দিবে জলাবদ্ধতা। এই অবস্থার নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ এমনটা প্রত্যাশা তাদের।