নেত্রকোণায় চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন, ২৬ কোটি টাকা বিক্রির আশা কৃষি বিভাগের

প্রকাশিত: ৬:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২৪
চলতি রবি মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ২ শত ৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে

এ কে এম আব্দুল্লাহ্ঃ
নেত্রকোনা জেলায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনায় নানাবিদ কারণে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদী বা পড়া থাকতো।

‘এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না’, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনা, কৃষি বিভাগের নানা রকম প্রচার প্রচারণা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রদর্শণী, যান্ত্রিকী করণ, প্রণোদনা, কৃষি খাতে বিপ্লব এবং সময়ে চাহিদা পূরণে কৃষকরা অনাবাদী পতিত জমি চাষাবাদে ক্রমশঃ উৎসাহিত হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় নেত্রকোনার ২ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

চলতি রবি মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ২ শত ৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় জেলায় এ বছর চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষীরাও বেশ খুশি। কীটনাশকমুক্ত এই চাল কুমড়া স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশা করছে, জেলায় এ বছর আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৬ কোটি টাকা।

সরেজমিনে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার হীরাকান্দা, হাতিমঞ্জি, রহিমপুর, চান্দুয়াইল, বাদাম তৈল, পাল পাড়া, ধোপা পাড়া, চন্ডিগড়, বেলতলী কোণা পাড়া, বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর, সিংধাসহ ৩০টি গ্রামে এবার রবি শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান চাষের চেয়ে শাক-সবজির চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই তাদের জমিতে চাল কুমড়া, লাউ, টমেটো, ফুল কফি, বাধাঁ কফি ও ডাটাসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করেছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ২৬ মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, প্রতি ১০ শতক বা এক কাঠা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতিটি চাল কুমড়া গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এক কাঠা জমি থেকে কৃষকের আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

কলমাকান্দা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী নরল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল আলম জুঁই বলেন, এক সময় এ সমস্ত সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকায় শত শত একর জমি অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া অবস্থায় পড়ে থাকতো। ফলে এলাকার মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব লেগে থাকতো। এলাকার হত-দরিদ্র কেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষ একটু স্বচ্ছল স্বাভাবিক জীবন ধারনের জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যেতো। আবার অনেকেই কাজ না পেয়ে সীমান্তে চোরাকারবারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকতো। বর্তমানে অনাবাদী, পতিত বা পড়া জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসায় ধান সহ নানা ধরণের শাক-সবজির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা বাড়ীর আঙ্গিনায় বা আবাদি, অনাবাদি জমিতে লাউ, শসা, বেগুন, জিঙ্গে, কফি, টমেটো, চাল কুমড়া সহ নানা ধরণের রবিশষ্য আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, গত বার দেড় একর জমিতে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ও ফুল কপির আবাদ করে ৯ লক্ষ টাকা আয় করেছিলাম । এবার আড়াই একর জমিতে চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন ও বাদাম চাষ করেছি। গতকাল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন বিক্রি করেছি। আশা করছি, এবছর ২০ লক্ষ টাকা আয় হবে।
রংছাতি ইউনিয়নের কালিহালা গ্রামের কৃষক সায়েদুর রহমান জানান, আমি ৫কাটা জমি বর্গা নিয়ে কুমড়া চাষ করেছি। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি।

বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, আমার অনেক জমি পতিত বা পড়া থাকতো। এই বছর ৩০ কাটা জমিতে চাল কুমড়া করছি। ভাল ফলন হয়েছে। স্থানীয় পাইকাররা জমি থেকেই মন প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বসত বাড়ির আশপাশের জমি এবং অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদের নানা ধরণের পরামর্শ, প্রনোদনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কৃষি যান্ত্রিকী করণ ও প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে। পতিত জমিতে ভাল শাকসবজি উৎপাদিত হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন শাকসবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে নেত্রকোয় ২ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।