নেত্রকোণায় পরিবার পরিকল্পনা ডিডির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কর্মকর্তা কর্মচারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

এ কে এম আব্দুল্লাহঃ
নেত্রকোণার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর গত ২৮ আগস্ট কতিপয় কর্মচারী জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান খান ও হিসাব রক্ষক আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পরদিন ২৯ আগস্ট জেলা কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সিসি) ডাঃ মোঃ ফিরোজ খান পাঠানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে বেশীরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত ছিল। প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ১০৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৮ আগস্টের ঘটনাকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।

অপরদিকে ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ডিপ্লোমা এসোসিয়েশন নেত্রকোণা শাখা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক প্রতিবাদ সভা করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর মদন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাসিক সভায় ডিডি’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের নিন্দা জানান।

ডিডির বিরুদ্ধে কতিপয় কর্মচারীদের গণস্বাক্ষরের বিষয়ে কয়েক জনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কতিপয় পরিদর্শক মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের স্বাক্ষর নেয়। ডিডি স্যারের বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। হিসাব রক্ষক কাইয়ুম খান টাকা ছাড়া কোন কাজ করে না। তারা অবিলম্বে কাইয়ুম খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবী করেন।

দুর্গাপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাসিক সভায়ও এ ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। নেত্রকোণা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু বিষয় নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করতে গেলে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সিংহভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলের বিধি লঙ্ঘন করে জেলা শহরে বসবাস করে।

এদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামীলীগের ক্ষমতা এবং সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের সুপারিশ নিয়ে নিজ কর্মস্থলে সংযুক্ত না থেকে তাদের পছন্দ মাফিক ক্লিনিকে প্রেষণে বছরের পর বছর চাকুরী করে আসছে। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ে জনগন স্বাস্থ্যসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত অফিস করেন না। ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, নমিতা চক্রবর্তী নামে একজন (এফডব্লিউএ) কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

ঐদিন একই ইউনিয়নের রায়পুর ইউনিয়ন ক্লিনিকে গিয়ে একজন আয়াকে পাওয়া যায়। সাংবাদিক এসেছে শুনে অফিসের (এফডব্লিউবি) রুনা বিশ্বাস ও একজন অফিস সহায়ক কিছুক্ষণ পর অফিসে আসেন। ১৭ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে রুনাকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু অফিসে কর্মরত কে কখন কোথায় যাচ্ছেন এবিষয়ে মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করা হয় কি না, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি গত মার্চে বদলী হয়ে এসেছি, এখন থেকে মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করব।

সদর উপজেলার সিংহের বাংলা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত এফডব্লিউএ তানিয়া সুলতানা বলেন, আমার চাকুরীর গ্রেড পরিবর্তনের সময় নিরুপায় হয়ে ডিডি অফিসের আব্দুল কাইয়ুমকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে, কিন্তু ডিডি স্যারের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই।

১৯ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের পৌরসভার পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আবীর হাসানকে মাতৃসদনের অফিসে পাওয়া যায়নি।পরে তার মোবাইলে প্রথম রিং হলেও বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, সে ২০১৪ সালে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুর্বধলার উপজেলার হোগলা ইউনিয়ন থেকে সদর উপজেলার পৌরসভার পরিদর্শক পদে বদলী হয়ে আসে।

এসব বিষয় নিয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি সর্বদা নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে নিয়মিতভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য চাপ দিলেই তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালায়। মাঠ পর্যায়ে কর্মস্থলে যাদের পাওয়া না যাবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।