নেত্রকোণায় বেড়েছে চুরির উপদ্রব: জনমনে আতংক, চোরের নাম ছাড়া মামলা নেয়না পুলিশও
এ কে এম আব্দুল্লাহঃ
নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলায় রাতে এবং দিনে ক্রমাগতভাবে চুরির ঘটনা বেড়ে চলায় আতংকে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। চুরি ঠেকাতে অনেকেই কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত।
নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার শুনই ইউনিয়নের মেঘেরকান্দা গ্রামের শান্তু মিয়ার গোহাল ঘরের তালা ভেঙ্গে সংঘবদ্ধ চোরের দল বেশ কয়েকটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়।
এছাড়া সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আব্দুস সালামের ঘরের বেড়া কেটে ডুল ভর্তি ধান, ফিসারীর জাল, নৌকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে গেলেও অদ্যাবধি চুরিকৃত মালামাল ও চোরের কোন সন্ধান পায়নি পুলিশ। স্বল্প শুনই গ্রামের সনাতন মিয়ার হ্যান্ড ট্রলিসহ হৃদয় মিয়ার একটি লড়ির পেছনের ডালা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ হ্যান্ড ট্রলি উদ্ধার করতে না পারলেও ভুক্তভোগীরা তাদের চুরিকৃত হ্যান্ড ট্রলি উদ্ধার করে চোরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এছাড়াও আটপাড়া বাজারে চোরাই গরু বিক্রি করতে এনে জনতার কাছে ধরা পড়েছে চোর। একই মাসে দিনের বেলায় মদন পৌর এলাকায় জামাল হোসেনের ঘরের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোণা পৌর এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এসব চুরির ঘটনায় কিছু সংখ্যক ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত চুরিকৃত মালামাল উদ্ধার ও চোরকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
আগেও বেশ কিছু গরু চুরি হয়েছিল কিন্তু গরু না পাওয়ায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। চোরের ভয়ে অনেকেই গরু লালন পালন বন্ধ করে দিয়েছে।
আটপাড়া উপজেলার মেঘেরকান্দা গ্রামের রোমান মিয়াসহ ভূক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগ, চোরের নাম ছাড়া মামলা নিতে চায় না পুলিশ, জিডি করতেও তাদের যেন অনীহা।
অপরাধ বিশ্লেষকদের ধারণা, কর্মসংস্থানের অভাব এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে এক বছর যাবত জেলার বিভিন্ন স্থানে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। চোরের ভয়ে জনমনে এক ধরণের আতংক বিরাজ করছে। চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পরছেন না। জানমাল রক্ষায় অনেককেই রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে।
সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায়শই চুরির ঘটনা ঘটছে, এতে আমাদের সুখে শান্তিতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। চোরের উপদ্রব বন্ধে এ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ ও সুবিচার পাইনি, থানায় মামলা করতে গেলে চোরের নাম উল্লেখ ছাড়া মামলা নিতে চায় না, পুলিশ বলে নাম ছাড়া মামলা নিলে কি হবে।
মদন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুফ্তি আনোয়ার হোসেন বলেন, দিনের বেলায় আমার ভগ্নিপতির বাসার তালা ভেঙে চোরেরা নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে। মদন পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ীতে প্রায়শই চুরির ঘটনা ঘটছে। চোর ধরা না পড়ায় পৌরবাসীর মধ্যে এক ধরণের আতংক বিরাজ করছে। পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসেও চুরির ঘটনা থামছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একটি গরু সাধারণ জনগন উদ্ধার করেছে আর আটপাড়ায় চুরিকৃত হ্যান্ড ট্রলিটি বাজারের সিসি ফুটেজ দেখে ভুক্তভোগী পরিবারই উদ্ধার করেছে। আটপাড়া থানা পুলিশ একটি লড়ি উদ্ধার করলেও এটির মালিকানা নিশ্চিত হয়নি এখনো।
চোরের নাম ছাড়া মামলা নিতে থানা পুলিশের অনিহা ও চোরদের খুঁজে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে না পারাই চুরি বৃদ্ধির কারন বলে মনে করছে ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবী চুরি প্রতিরোধে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
চুরি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি চোরদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ জনগনের।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ ফয়েজ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চুরির ঘটনা বন্ধ এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে রাতে পুলিশ টহল কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি চুরির ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।