নেত্রকোণায় ব্রি ধান৯২ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৮ এর নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
মোঃ আমিনুল ইসলাম মন্ডলঃ
নেত্রকোণায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয় নেত্রকোণার আয়োজনে ও এলএসটিডি প্রকল্পের অর্থায়নে ব্রি কতৃক উদ্ভাবিত ধানের উফশী জাত ব্রি ধান৯২ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৮ এর নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (০৭ মে) দুপুরে জেলার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের দেওটুকোণ গ্রামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নেত্রকোণা জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে ও ব্রি, নেত্রকোণা আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: খালিদ হাসান সৌরভ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এলএসটিডি প্রকল্পের পরিচালক ড. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্বধলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জোবায়ের হোসেন, ব্রি নেত্রকোণার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান মো: খালিদ হাসান তারেক।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে ময়মনসিংহ স্যাটেলাইট স্টেশন এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান নিমফিয়া পারভীন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হুর-ই-ফেরদৌসী তাজিন সহ কৃষি সম্প্রসারণ ও ব্রি নেত্রকোণা’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুধী সমাজ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ স্থানীয় শতাধিক কৃষক-কৃষাণীগণ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রি নেত্রকোণা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেত্রকোণা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্বাবধানে ব্রি’র অন্যান্য উফশী ধানের জাতের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন কৃষকের মাঝে গবেষণা ট্রায়ালের জন্য উফশী ও ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় জাত সমূহের চাষ হয়েছে। এ বছর ধানের রোগবালাই ও পোকামাকড় কম থাকায় আশানুরূপ ফলনও হয়েছে।
স্হানীয় কৃষক মো: নূর উদ্দিন জানান, তিনি এবার এক একর জমিতে ব্রি ধান৯২ চাষ করেছেন । অন্য ধানের তুলনায় অনেক বেশী ফলন হয়েছে। ব্রি নেত্রকোণার কর্মকর্তাগণ সকল ধরনের পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ধান ও চাল বিক্রির পাশাপাশি বীজ সংরক্ষণ করবেন। অন্যান্য কৃষকদেরও তিনি এ ধানের জাত চাষ করার আহ্বান জানান।
আরেক কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, তার ব্রি হাইব্রিড ধান৮ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। হাইব্রিড সত্ত্বেও চাল চিকন হওয়ায় এর আলাদা কদর রয়েছে। শতাংশ প্রতি এক মণের বেশি ফলন হওয়ায় তার কাছে অন্যান্য কৃষক আগ্রহী হয়ে ভবিষ্যতে এ জাত চাষ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে কৃষক নূর উদ্দিন ও আমিনুলে’র জমিতে নমুনা শস্য কর্তন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরে তা মাড়াই করা হয়। সেখানে ব্রি ধান৯২ এর প্রদর্শনীকৃত জমিতে শতাংশ প্রতি প্রায় ১ মণ ও হাইব্রিড ধান৮ এর প্রদর্শনীকৃত জমিতে ১ মণের বেশি ফলন পাওয়া যায়। তারা সহ উপস্হিত কৃষকগণ এ ফলন দেখে আগামীতে উফশী এ জাতসমূহ চাষে আগ্রহী হন এবং ব্রি’র কর্মকর্তাগণকে ধন্যবাদ জানান।
ব্রি নেত্রকোণার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান খালিদ হাসান তারেক জানান, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ব্যপক পরিসরে উফশী জাতসমূহ চাষাবাদ প্রযোজন। আর এ জাতসমূহ কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ব্রি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রি, নেত্রকোণা আঞ্চলিক কার্যালয় এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য কিছু গবেষণা ট্রায়াল স্থাপন করেছে যাতে কৃষকরা ধানের নতুন জাতসমূহের বৈশিষ্ট্য ও ফলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
পূর্বধলা উপজেলা কৃষি অফিসার মো: জোবায়ের হোসেন ধানে উচ্চ ফলন পেতে সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা প্রদান করেন ও কৃষকদের ধানের চারা লাইন ও লঘুতে রোপণ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি ড. মোফাজ্জল হোসেন তার বক্তব্যে রোগ ও পোকামাকড় চিহ্নিতকরণ, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, নতুন জাতসমূহ ও এর উৎপাদনশীলতা সহ স্থানীয় পর্যায়ে ধানের বিভিন্ন জাতের উপযোগীতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও উপস্থিত কৃষক কৃষাণীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান সুষম সার প্রয়োগ কি, এর প্রয়োগ মাত্রা, লাভ ও ফলনে প্রভাবের বিস্তারিত আলোচনা করেন পাশাপাশি উফশী ধানের নতুন জাতসমূহ যাতে সকল কৃষকের দোড়গোরায় পৌঁছে দেয়া যায় সে লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ব হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।