নেত্রকোণায় মহিলা পরিষদের উদ্যোগে কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ সভা

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২৩

নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
নেত্রকোণায় নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রদূত জননী সাহসিকাখ্যাত, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামাল এর ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার (২০ নভেম্বর) এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেত্রকোণা জেলা শাখা।

পরিষদের নেত্রকোণা জেলা শাখার সভাপতি রেহানা সিদ্দিকার সভাপতিত্ব ও ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শিপ্রা সিংহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম এনি।

এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা অধ্যাপক নেলী বড়ুয়া, সহ সভাপতি পারভীন সুলতানা, আন্দোলন সম্পাদিকা সৈয়দা শামসুন্নাহার বিউটি, লিগেল এইড সম্পাদিকা মঞ্জু সরকারসহ জেলা শাখার সদস্য বৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শরীফা অসীম বর্ষা, শাম্মি আক্তার, কোহিনূর বেগম প্রমুখ। স্মরণ সভায় কবিতা পাঠ করেন তৌফিকা আজাদ।

উল্লেখ যে, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দেলনে ভূমিকা পালনকারী কবি সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের এই দিন (২০ নভেম্বর) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত হয়।

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।

সুফিয়া কামালের লেখা কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, দিওয়ান, অভিযাত্রিক, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি। ‘কেয়ার কাঁটা’ নামে একটি গল্পগ্রন্থ ছাড়াও তিনি ভ্রমণ কাহিনী, স্মৃতি কথা, শিশুতোষ এবং আত্মজীবনীমূলক রচনাও লিখেছেন। সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।

সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক। প্রতিবছর এ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।