নেত্রকোণায় মহিলা পরিষদের উদ্যোগে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত
শরিফা শহীদ বর্ষাঃ
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোণায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রকোণা জেলা কার্যালয়ে বিকাল ৩টায় ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৪’ এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রকোণা জেলা শাখা।
পরিষদের সভাপতি রেহানা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ফাহমিনা সুলতানা তোতার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা শাখার উপদেষ্টা অধ্যাপক নেলী বড়ুয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক উষা রানি, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা চৌধুরী, তরুনী সদস্য শরীফা শহীদ বর্ষা প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর জন্যই তাদের উপার্জনক্ষম হতে হবে। নারী মুক্তির দিশারী বেগম রোকেয়ার যখন জন্ম হয় তখন এদেশের নারীদের প্রকৃতপক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না। ঘরের বাইরে যাওয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সে সময়ে বেগম রোকেয়া নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া করে নিজেকে তৈরি করেছেন। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আমৃত্যু লড়াই করেন। বেগম রোকেয়া তার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পে সেই সময়েই বাল্যবিয়ে বন্ধ করার আইন প্রণয়নের গুরুত্বের কথা ভেবেছেন। শতবর্ষ পূর্বের তার সেই মহান ভাবনাকে সামনে রেখে আজকে আমরা সবাই মিলে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ যে, নারীর অধিকার আন্দোলন ও নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। মুক্তচিন্তার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯০৯ সালে তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে একটি স্কুল স্থাপন করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে এই স্কুল ইংরেজি গার্লস স্কুলে এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন।
বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আর মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
বাঙালি মুসলমান সমাজে নারী স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বেগম রোকেয়া বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণের সূচনায় প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন। বাঙালি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকার এবং নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন।
বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী প্রভৃতি।