নেত্রকোণার কৃষিখাতে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা

হাওরে জলজ বনায়ন পুনরুদ্ধার করা জরুরী, হিজল, করচ, বরুন, জারুল গাছ লাগিয়ে পাখি বসা জায়গা করে দিতে হবে

প্রকাশিত: ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৩
ছবি- প্রতিকী

নেজা ডেস্কঃ
নেত্রকোণার অবস্থানঃ
মগড়া, কংস, ধনু ও সুমেশ্বরী বিধৌত হাওর-বাওড় ও নদী-নালা বেষ্টিত গারো পাহাড়ের পাদদেশে নেত্রকোণা জেলা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার। পাহাড়, সমভূমি ও সমুদ্র সমেত সুবিশাল হাওর বিশিষ্ট মিনি বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

কৃষির সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সমূহঃ
  জমির উপযোগিতা ।
 আগাম বৃষ্টি এবং নাবী বৃষ্টি
 ফ্লাশ ফ্লাড
 আগ্রহী কৃষকের অভাব
 বাজার লিংকেজ।
 কৃষি শ্রমিক সংকট
 কৃষি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা
 কৃষি সমবায় না থাকা
 উপযুক্ত দাম না পাওয়া।
 উৎপাদন পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
 বাধ ভাঙ্গা
 চাহিদামাফিক পর্যাপ্ত লোনের অভাব।

সম্ভাবনা ও সুযোগঃ
 ধান ফসলের বিচিত্রতা আনা সম্ভব।
 উচ্চ দামের ফসল আবাদ।
 তেল ফসল সরিষা, তিল , চীনাবাদাম সুর্যমুখী চাষের  সুযোগ আছে।
 মসলা ফসল মরিচ, পেয়াজ, রসুন ও আদা চাষের সুযোগ আছে।
 ভাসমান ফসল
 কমিউনিটি রেডিও ও ডিজিটাল কৃষি
 চাহিদাভিত্তিক উন্নয়ন কর্মসূচি
 প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোড়দার
 পুষ্টি বাড়ি
 কৃষি যন্ত্র সেবা কেন্দ্র

মৎস্য চাষীদের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সমূহঃ
 প্রকৃত জেলে চিহ্নিত করণে আইডি কার্ড ব্যবস্থা নেই।
 দেশীয় মাছের উৎপান বৃদ্ধির জন্য কোন অভয়াশ্রম নেই।
 ইজারাদারগণ বিল সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরেন ।
 মাছ প্রক্রিয়াজাত করনের সুব্যবস্থা নেই ।
 শুটকী প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা নেই ।
 অপ্রতুল হ্যাচারীর সংখ্যা ।
 ক্ষুদ্র চাষীদের অনেকে ইজরা বা  বর্গা ভিত্তিতে মালিকের পুকুরে মাছ চাষ করেন । এমন চুক্তিভিত্তিতে মালিক পক্ষ ক্ষতির দায় নেয় না ।
 ক্ষুদ্র চাষীদের পুঁজি কম বলে মাছ চাষের উপকরণের জন্য সহজ শর্তে ঋণ লাভের সুযোগও কম
 মাছ চাষের ঞ্জান ও প্রযুক্তির অভাব ।
 প্রকৃত পুকুর মালিকদের মাছ চাষের আগ্রহ কম ।

সম্ভাবনা ও সুযোগঃ
 প্রকৃত জেলে চিহ্নিতকরণ ও জলমহাল ইজারা দেওয়া
 হ্যাচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা
 খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
 শুটকী ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা

পরামর্শঃ
হাওরে জলজ বনায়ন পুনরুদ্ধার করা জরুরী, হিজল, করচ, বরুন, জারুল গাছ লাগিয়ে পাখি বসা জায়গা করে দিতে হবে । প্রতি বছর বজ্রপাতে আমাদের হাওরে লোক মারা যাচ্ছে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানান, খাঁচায় মাছ চাষের ব্যবস্থার দাবী করেন । প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে, ভূমির উপরের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। ধনী ব্যক্তিরা শত শত বিঘা জমি কিনে রেখছেন, চাষাবাদ করছেন না ।

সমতলের চাষীদেও সমস্যা তুলে ধরেন । আমরা জমি দূষিত করছি । রাসায়নিক সার, কীটনাশক যা মানসম্মত না । পরিবেশ নষ্ট করছি, কৃষকের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হচ্ছে, অনেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হিেচ্ছ । তিনি বলেন আমরা ফসলে এতসব দিচ্ছি কিন্তু কাজ হ্েচছ কম । আমি মনে করি শক্ত নিয়ম করতে হবে যেন কেউ ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া ফসলের ঔষধ কিনতে না পারে। এছাড়া মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । কেঁচো সার উৎপান করছি কিন্তু মূল্য পাচ্ছিনা, ৭-৮ কেজি বেচতে হয়, আমাদেও বাজার ধরার ব্যবস্থা করে দেন । ব্যাংক থেকে লোনের ব্যবস্থা করে দেন । পাহাড়ী ঢলের কারণে চাষের জমিতে বালি পড়ে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে, সেচের পানির অভাব, উপজেলা থেকে গ্রাম দূরে হওয়ায় কৃষি বিষয়ক পরামর্শ পেতে অসুবিধা হয় ।

কৃষক প্রতিনিধিদের সাথে সরকারের প্রতিনিধিদের আরও বেশী কথা বলার পরিবেশ তৈরী করা দরকার যাতে কৃষক তাঁদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারেন । শিক্ষিত যুবকদের কৃষি কাজের প্রতি অনিহা এখন চরমে, কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ ছাড়া তরুণদেও কৃষিতে ফিরিয়ে কঠিন । হাওর কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন কর্মসূচী জোড়দার করার দাবী জানান, কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী হাতে নেওয়ার জন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এক জোট হয়ে কাজ করার বিনিীত অনুরোধ জানান ।

নানামূখী সামাজিক ও বাজার ব্যবস্থাপণার বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষিখাত । শিক্ষিত তরুণদের কৃষি পেশার প্রতি যথেষ্ট অনীহা আছে ।এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে অথবা কৃষিকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যাতে শিক্ষিত তরুণেরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয় । বর্তমানে যারা কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের আয় বাড়াতে এবং তারা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে । তাহলে কেবল তারা স্বাচ্ছন্দে নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারবে এবং কৃষি কাজের প্রতি ঐ সন্তানের একটা আগ্রহ তৈরী হবে । যুবকদের তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, এছাড়া তাদেরকে শুল্কমুক্ত ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে । আর এগুলো পেলেই তারা কৃষিখাতে কাজ করতে আগ্রহী হবে । নেত্রকোণার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে হাওর ।  এখানে অধিকাংশ জমিতে বছরে একবার শুধু বোর মৌসুমে প্রচুর পরিমান ধান জন্মানো হয় । মে মাসের মাঝামঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় সব জমি জলাবদ্ধ থাকে । জলবায়ু পরিকর্তনের প্রভাবে হাওরের জীববৈচিত্র, কৃষি ও জীবনযাত্রা নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে । দিনে দিনে হাওরে পলি ভরাটের ফলে একদিকে যেমন পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাছে অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন (যেমন-হঠাৎ হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি আকষ্মিক বন্যার সৃষ্টি করছে, নদী/খাল গুলিতে পানি না থাকার ফলে সেচের পানির অভাব দেখা দেয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যায়)

করণীয়/জোর সুপারিশ:
 স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ
 হাওর প্রকল্প গ্রহণ ( কৃষিতে অভিযোজন বিষয়ক)
 এডিবি বরাদ্দ কৃষিতে নিশ্চিত করা
 এনজিও সম্পৃক্তকরণ
 যেকোনো মূল্যে দেশীয় বীজের সক্ষমতা ও পর্যাপ্ততা বাড়াতে হবে ।
 একই তথ্য সবাইকে দিলে হবে না । কৃষককে তাঁর অঞ্চলভিত্তিক তথ্য দিতে হবে ।
 কৃষি পণ্যেও বহুমূখী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেী গুরুত্ব দেওয়া জরুরী ।
 অঞ্চল ভিত্তিক গ্রামীণ ভাষায় প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরী ও প্রচার করা
 জলবায়ু পবির্তন মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কৃষকদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা
 মাঠ মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মাটিতে জৈব পদার্থ বৃদ্ধির সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করা
 ২০০৫ সাল থেকে ইনক্লুসিভ বিজনেজ ধারণাটি প্রবর্তন করা হলেও আমাদের এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে এখন পর্যন্ত সেই মোতাবেক উৎপাদন, ব্যবসা, ভোক্তা বা শ্রম এসবের কোন একটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি, যা বাস্তবায়নের জোড় দাবী জানাচ্ছি

পরিশেষে:
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে দেশে ৩ কোটি ৪৩ লাখ দরিদ্র মানুষ আছে । তাদের মধ্যে পৌনে দুই কোটি মানুষ হত-দরিদ্র । করোনা পরবর্তী সময়ে আরও অনেকেই দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাওয়া ঝুঁকিতে আছে। তাই করোনা- পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে মূলত ভ’মি ও কৃষিই প্রধান চালিকা শক্তি। বিশ্বব্যাপী করোনার আঘাত দেশের কৃষির জন্য অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে । সামনের চ্যালেঞ্জ হলো নির্বিঘ্নে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পণ্যের ন্যায্য মূল্য ও সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিকরণ ।