নেত্রকোণার লোকসাহিত্য
আস্তে রাঁন্ধো ধীরে খাও, তবে বস্তুর মজা পাও।
নেজা সাহিত্য জার্নাল ডেস্কঃ
লোকমুখে প্রকাশিত (উচ্চারিত) ও প্রচারিত সাহিত্য কে বলা হয় লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের স্বপ্নদ্রষ্টা বা প্রবক্তা পল্লীগ্রামের লোক।
পল্লীগ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষের বাস্তব উপলব্ধি থেকে যে কথা বা সাহিত্যের উৎপত্তি হয়ে লোকমুখে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়, তাকে বলে লোকসাহিত্য।
গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত ও হতদরিদ্র মানুষের কাব্যিক মনোভাব বা সাহিত্য কর্ম কোন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় না কিন্তু তাদের সাহিত্য কর্ম খুবই জীবনমুখী তাই তাদের সাহিত্যকর্ম পাঠক প্রিয়তা লাভ করে, হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। কালের বিবর্তনে স্বরণীয় হয়ে থাকে সেই লোকসাহিত্য।
অস্বীকৃতি প্রাপ্ত পল্লীগ্রামের লোককবি ও লোকশিল্পী মনের খুশিতে সৃষ্টি করে তাঁর সৃষ্টিশীল সাহিত্য এবং মনের খুশিতেই কাজের ফাঁকে বিনোদন হিসেবে পাঠক বা শ্রুতার কাছে উপস্থাপন করে আর শ্রুতারা তাহা মনে রাখে, এভাবে এক জনের মুখ থেকে আরেক জন শুনে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে পরবর্তীতে বিলুপ্ত হয়ে যায় রচয়িতার নাম। লোকমুখে প্রচারিত এমন সাহিত্য কে লোকসাহিত্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।যেমন –
মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে…
আমি আর বাইতে পারলাম না।
শহুরে সাহিত্যকে বাগানের ফুল হিসেবে তুলনা করিলে লোকসাহিত্যকে বলা যায় বনফুল।লোকসাহিত্যে নেত্রকোণা পরিপূর্ণ, নেত্রকোণাকে লোকসাহিত্যের ভান্ডার বলা চলে। নেত্রকোণার মানুষ স্বভাবতই সাহিত্যমনা তাই নেত্রকোণার লোকসাহিত্য ও তার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। ময়মনসিংহের গীতিকা গ্রন্থের বেশির ভাগ নেত্রকোণার কীর্তি। নেত্রকোণার লোকসাহিত্য বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত।
নেত্রকোণার মানুষের জীবন যাপন ও কর্ম ধারার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় লোকসাহিত্য।
বৃষ্টির দিনে,বৃষ্টি পড়া দেখে গ্রামের শিশু কিশোরের মুখেও শুনা যায় লোকসাহিত্যের লোকছড়া –
উগার তলে দাড়ি,
মেঘ আয় বাড়ি।
উগার, দাড়ি, বাইছনা এসব নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। এখানে উগার শব্দের অর্থ মাচা এবং দাড়ি শব্দের অর্থ চাটাই। আবার বৃষ্টি থেমে গেলে তাদের মুখে শুনা যায় আরেক লোকছড়া-
উগার তলে বাইছনা,
মেঘ আইছ না।
এখানে বাইছনা শব্দের অর্থ ছোট চাটাই, আইছনা বলিতে বুঝানো হয়েছে এসো না। নেত্রকোণার গ্রামীণ পরিবেশে বিবাহিত নারীরা একত্রিত হয়ে আলাপ আলোচনা করিলে কেউ যদি আলাপে বেশি চালাকি করে তখন নিজের জিত রক্ষার্থে অন্যজন বলে ওঠে –
ভালা রাঁন্ধি বুড়া রাঁন্ধি
স্বামী যদি খায়,
পরের কথায় আমার
কি’বা আসে যায়।
রাঁন্ধি নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। এখানে রাঁন্ধি বলিতে বুঝানো হয়েছে রাঁধি,বুড়া বলিতে বুঝানো হয়েছে মন্দ। এ কথার প্রতি উত্তরে আরেক জন বলে এত আলাপ শিখছেন কই ? তখন তিনি বলেন –
যেখানে ঠেকছিলাম,
সেখানেই শিখছিলাম।
কোন দোষী লোক যখন নিজেকে নির্দোষী প্রমাণ করিতে চেষ্টা করে এবং নিজের প্রশংসা বা সুনাম নিজেই উপস্থাপন করে তখন অন্যজন প্রকাশ্যে তাকে দোষী না বলে ইশারায় বা ইঙ্গিতে বুঝানোর চেষ্টা করে –
বিনা বাতাসে নদীতে ঢেউ ওঠে না,
নির্দোষীরে কেউ দোষী কয় না।
ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলা করিতে গিয়েও অনেক লোক ছড়া বলিতে শুনা যায়। যেমন – খেলার সাথীদের একজন গাছের শাখায় ওঠে বসে বাকি খেলার সাথীরা গাছের নিচে থেকে জিজ্ঞেস করে
–গাচ্ছোয়া ভাইরে গাচ্ছোয়া ভাই
গাছে উঠছোছ কেরে ?
বাঘের ডরে
বাঘ কই ?
গাছের তলে !
তোরা কয় ভাই ?
সাত ভাই
এক ভাই দিবে ?
ছুঁইতে পারলে নিবে।
এই বলেই গাছের নিচে বা গাছের তলে অবস্থানরত খেলার সাথীরা গাছে ওঠে এবং সবাই গাছের শাখায় বিচরণ করে, গাছের খেলোয়াড় কে ছুঁইতে জানপ্রাণ চেষ্টা চালায় যখন সেই খেলোয়াড় কে দলের একজন ছুঁইতে পারে তখনই তাদের খেলার দল জয়ী হয়, গাছের সেই আরোহী খেলোয়াড় পরাজিত হয় আবার এভাবে আরেক জন গাছে ওঠে বাকিরা হয় বিরোধী বা বিপক্ষের দল।
এখানে বাঘ বলিতে, বাঘের প্রতীকী হিসেবে বুঝানো হয়েছে খেলার সাথীগণ বা বিপক্ষের দল কে কারণ খেলার সাথীদের মধ্যে থেকে যে কেউ একজন গাছে আরোহী খেলোয়াড় কে ছুঁইতে পারলেই খেলার নিয়ম অনুযায়ী সেই খেলোয়াড় কে মরা বলে ধরে নেওয়া হয়।
কেউ যদি নিজের প্রশংসা বেশি করে তাহলে অপর ব্যক্তি অতিরিক্ত প্রশংসা শুনে বিরক্তি বোধ করিলে ইশারায় সেই প্রশংসাকারীকে বুঝাতে বলে ওঠে –
যারে দেখছি না
সে খুবই সুন্দরনী,
যার হাতের খাইছি না
সে বড় রাঁন্ধুনী।
এখানে নেত্রকোণার আঞ্চলিক ভাষায় সুন্দরনী শব্দের অর্থ রূপসী আর রাঁন্ধুনী শব্দের অর্থ রাঁধুনি। কেউ যদি কোন কাজ করিতে গিয়ে বেশি তারাহুরো করে তখন তাকে আদেশ স্বরুপ মুরুব্বিরা বা বয়োজ্যেষ্ঠগণ বলে থাকেন, এতো তারাহুরো কিসের ?
কথায় আছে –
আস্তে রাঁন্ধো ধীরে খাও,
তবে বস্তুর মজা পাও।
এটার অর্থ হচ্ছে, ধীর স্থীর ভাবে কোন কাজ করিলে, সেই কাজের ফল ভাল হয়, সুফল পাওয়া যায়। কথার ছলে অনেকেই বলে-
যে বস্তু কিনা,
তার নাই সীনা।
সীনা শব্দের অর্থ বুক কিন্তু এখানে সীনা বলিতে বুঝানো হয়েছে বিশেষ মুল্যবান কিছু। নিজের উৎপাদিত বস্তু বা দ্রব্য সামগ্রীর মতো পরিপূর্ণ তৃপ্তি কিনা(ক্রয় করা) দ্রব্য সামগ্রীতে পাওয়া যায় না। কারণ কেনা বস্তু সংক্ষিপ্ত আর নিজের উৎপাদিত বস্তু হয় পর্যাপ্ত।
কোন ব্যক্তি যখন অন্যজনের দোহাই দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে, যেমন – বড় সাহেবের দোয়াই দিয়ে কেরানী ঘুষ খায়, এমন ক্ষেত্রে অনেকেই বলে – শেয়ালের নাম ধরে বাঘে গরু খায়। এখানে শেয়াল ও বাঘ প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।
গ্রামের সালিশ যখন শুরু হয় তখন পক্ষ ও বিপক্ষের লোকজন কে জিজ্ঞেস করা হয়, তারা সালিশের রায় ( নিস্পত্তি) মানবে কি না ?
তখন বুঝাতে গিয়ে বলেন -কথা – মানলে বাণী, না মানলে চৌঙার পানি।
এখানে বাণী বলিতে বুঝানো হয়েছে মুল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর চৌঙা নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ, বাঁশের অংশ বিশেষ, যার মধ্যে পানি রাখলে,চৌঙা হেলে গেলেই পানি সহজে পড়ে যায়, কচু পাতার পানির মতো।
নিজের জিত রক্ষার্থে যখন কিছু মানুষ তর্কে লিপ্ত হয়ে কথা বাড়ায় বা কথার কাটাকাটি করে তখন তাদের ঝগড়া থামাতে, লোকজন এগিয়ে আসে এবং কথা না বলার জন্যে নিষেধ করতে গিয়ে বলে-কথায় কথা বাড়ে মার্তনে বাড়ে ঘি।
এখানে মার্তন শব্দের অর্থ মর্দন, দুধ যত মর্দন
করা যায় ততই ঘি উত্তলন হয় তদ্রূপ কথার পরে কথা বলিলে কথাও বাড়ে। ঘি ব্যবহার হয়েছে উপমা হিসেবে। নেত্রকোণার আঞ্চলিক লোকসাহিত্যের লোক প্রবাদ। ‘শত কোবে লাঙল এক কোপে চেলি।’
এখানে লাঙল ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীকী হিসেবে। একটি লাঙল বানাতে অনেক কোপ দিতে হয়, যত কোপ দেওয়া হয় ততই সুন্দর হয় কিন্তু মাঝে কোপ দিলে চেলি বা লাকড়ি হয়ে যায় তখন শত চেষ্টা করিলেও আর লাঙল হয় না। তদ্রূপ অনেক কষ্টের মুল্যবান বস্তুও অল্পতেই নষ্ট হয়ে যায় তাই আমাদের সাবধানে কাজ করা প্রয়োজন।
যখন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাথে আলাপ আলোচনা করে তখন নিজের সম্পর্কে বেশি কিছু ধারণা দেওয়ার জন্যে বলে – রং দেখছো রঙের কৌটা দেখছো না। এখানে রং বস্তু আর কৌটা রঙের উৎপত্তির স্থান, এই উপমার সাহায্যে গভীর তথ্যের দিকে ইঙ্গিত বুঝানো হয়।
যখন কোন ব্যক্তির অপরাধ গোপন রেখে, অপ্রকাশিত ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হয় তখন বিপক্ষের ব্যক্তি বলিতে বাধ্য হয়- এরে দিয়ে তারে মারো লাউ দিয়ে কুমড়া খাটে।
এখানে লাউ ও কুমড়া প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, একের দোষ অন্যের উপর চাপানোর অপচেষ্টা কে বুঝনো হয়েছে নেত্রকোণার আঞ্চলিক লোকসাহিত্যের প্রবাদে। একজন মানুষ কে বিষয় টা ভালো ভাবে বুঝানোর জন্যে বলা হয়।
বুঝলে বুজ পাতা,
না বুঝলে তেজ পাতা।
যে ঠিক মতো বুঝার চেষ্টা করে তিনি বুঝে সঠিক মতো আর যে ঠিক মতো বুঝার চেষ্টা করে না, সে সঠিক বুঝে না আর সেই না বুঝাকে তেজ পাতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
কোন মানুষ যখন ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝে না তখন বলা হয়।
কই আগর তলা,
আর কই উগার তলা।
এখানে আগর তলা একটি সুপরিচিত শহর আর উগার তলা ঘরের কোণে ক্ষুদ্র ঠাঁই, অনেক ব্যবধান। ভালো মানুষের সাথে ভালো মানুষের মিল আর খারাপ মানুষের সাথে খারাপ মানুষের মিল তাই বলা হয়।
চুরে চুরে আলি,
এক চুরে বিয়ে করে
আরেক চুরের হালি।
এখানে অসাধু ব্যক্তির সাথে অসাধু ব্যক্তির মিল বা সাদৃশ্য বুঝাতে বলা হয়। হালি নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ আর এর অর্থ শ্যালি বা শ্যালিকা। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন বুদ্ধি হারা হয়ে যায়,মাথায় কাজ করে না,সেই অর্থে বলা হয়। ‘যার মাথা নাই তার মাথার ব্যাথাও নাই।’ বিপদের সময় মানুষের মানষিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে লোকসাহিত্যের প্রবাদ বলা হয়।
যখন বন্ধুর সাথে বন্ধুর মতের অমিল দেখা দেয় তখন এক বন্ধু আরেক বন্ধু কে বলে – আমরাতো ভালাই না ভালা লইয়া থাইকো।
দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ইতি টানার অবস্থায় নেত্রকোণার মানুষের মুখে প্রচলিত এই লোকপ্রবাদ। যখন কোন ব্যক্তি অতি চলাকি করে তখন অন্য ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে বলেন –
যে জানে টিপের বাও,
তার সাথে টিপ টিপাও।
এখানে এটাই বুঝাতে চায় যে সেই ব্যক্তি এসবের মাঝে নেই। নির্ধারিত বংশ বা জাত থেকে নির্ধারিত জাত সৃষ্টি হয় এটাই চিরন্তন সত্য। যখন ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়ে তখন লোকে বলে – আম গাছে কাঁঠাল ধরে না।এটাই সত্য তারপরেও যদি ব্যতিক্রম দেখা যায় তাহলে জন্ম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে লোকে।খুবই ক্ষুদ্র কাজ কে যখন কেউ বড় করে দেখাতে চায় তখন নেত্রকোণার মানুষের মুখে বলিতে শুনা যায় –
হেঁটে যেতে ঘাম ঝরে,
সেই কামের জায় ধরে।
এখানে কাম, নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ, এর অর্থ কাজ আর জায় ধরা শব্দের অর্থ, হিসাব ধরা।
প্রয়োজন মেটানোর সাধ্য নেই কিন্তু অতিরিক্ত খরচের চিন্তাভাবনা যে করে এমন ব্যক্তি কে তিরস্কার করে বলা হয় – পান্তা খাইতে লবণ নাই তিন টুনা বড়ই।
এখানে টুনা ও বড়ই নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। বড়ই শব্দের অর্থ কুল এবং টুনা শব্দের অর্থ পুটলি। প্রয়োজনীয় পান্তা ভাত খাওয়ার জন্যে যার ঘরে লবণ নেই সে শখের বশে অনেক বড়ই খাবার লবণ যোগাতে পারবে এটা অকল্পনীয়। নিজেকে যে অনেক বড় বলে জাহির করে তখন মানুষ বলে – ছাল নাই কুত্তার বাঘ রাইশ্যা নাম।
এখানে কুত্তা নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ, যার অর্থ কুকুর আর বাঘ শব্দ টি অর্থালংকারে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। যখন কুত্তার শরীরে নিজের সামর্থ্য নেই কিন্তু বাঘের মতো খাপ ধরে তখন বেমানান দেখায়। মিলেমিশে চলিতে গেলেও যদি মনের মিলন না হয় তখন বলা হয় –
মন মিল্লে খেলা,
না মিল্লে একলাই ভালা।
এখানে মিল্লে, এটা নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। মিল্লে এর অর্থ মিলিলে ।
কোন কাজ করিতে গিয়ে লোকসান হলে মনের দুখে অনেকেই বলে-
আক্কলে খাইয়া মাটি,
বাপে-পুতে কামলা খাটি।
এখানে পুত,শব্দের অর্থ পুত্র। মাটি শব্দ টি লোকসানের প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।
খুবই বিপদে পড়লে মানুষ চায় যেকোন ভাবে মুক্তি পেতে, এমন মূহুর্তে বলে ওঠে –
ছাড় মা কাইন্দা বাঁচি।
এটা নেত্রকোণার আঞ্চলিক লোক প্রবাদ।
এখানে বুঝানো হয়েছে, কাইন্দা বাঁচি যার অর্থ দাঁড়ায় যেকোন মুল্যে মুক্তি লাভ।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেত্রকোণার বয়াতিগণ
জারিগানে তাদের প্রতিবাদী কন্ঠে গেয়েছিলেন অনেক তেজোদ্দীপ্ত গান,সেই গান এখন লোকসাহিত্যের ভান্ডারে সমৃদ্ধ ।
যেমন –
তোরা কে যাবে আয় রে…
তোরা কে যাবে আয়।।
যুদ্ধে যাব দেশ বাঁচাব
জলদি করে আয়।। (ঐ)
হানাদারের অত্যাচারে
অশান্তি আজ ঘরে ঘরে
সোনার বাংলা ছারখার করলো
বেঈমান ইয়াহিয়ায়।। (ঐ)
টিক্কা রে জ্বালাই দাও ভুট্টোর মাথায়
মগজ টা গলিয়ে পড়ুক পায়খানার রাস্তায়।। (ঐ)
তামাক খাবার হুঁকায় যেমন খল্কিতে এক ধরনের টিক্কা ব্যবহার করা হয়, টিক্কা খান কে সেই খল্কির টিক্কা হিসেবে ভুট্টোর মাথায় জ্বালিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারার কথা ব্যক্ত করেছেন গানে।
অনেক জ্ঞানী ও গুণীজন বলে থাকেন, নেত্রকোণার মাটি, লোক সাহিত্যের ঘাটি। কথাটি চিরন্তন সত্যি কারণ নেত্রকোণার মানুষের প্রত্যেক কর্মকাণ্ডের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবেই লোকসাহিত্য জড়িত। নেত্রকোণার পরতে পরতে খুঁজে পাই লোকসাহিত্যের রসদ। নেত্রকোণার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় খুঁজে পাই,লোকসাহিত্যের লোক ছড়া, লোক গীতি,লোক প্রবাদ, লোক কবিতা। নেত্রকোণার প্রত্যেক এলাকায় লোকসাহিত্যে ভরপুর। নিত্যদিনের কাজের সাথে মিশে আছে লোকসাহিত্য, এক কথায় বলা যায় নেত্রকোণা লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার।
লেখকঃ
মাজেদুল হক, পুর্ণ নাম- শেখ মোহাম্মদ মাজেদুল হক ওরফে মাজেদ, সাহিত্যাঙ্গণে সু-পরিচিত নাম- মাজেদুল হক, ” বিরহী কবি ” হিসেবে সমধিক খ্যাত ও সমাদৃত। বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোণা জেলার সদর উপজেলায় ৩ জুলাই (১৯আষাঢ়) ১৯৭৭ ইং পাটলী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা – এস এম কিতাব আলী, মাতা – বেগম আয়েশা খাতুন। পড়াশোনা – বি,এ । পেশা – লাইভস্টক ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর (এল,এফ,এফ) প্রাণিসম্পদ দপ্তর। প্রকাশিত গ্রন্থ – ১। চোখের জলে নদী ২। কাব্য বলাকা ৩। স্বপ্ন দিগন্ত ৪। স্বদেশের মায়া ৫। ফুলঝুড়ি ৬। নেত্র চয়ন ৭। নির্বাচিত একশো কবিতা। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, উপন্যাস,কবিতা,ছড়া ও প্রবন্ধের পাণ্ডুলিপি।