পূর্বধলার সার্চ ইঞ্জিনখ্যাত অর্ধ লক্ষ মানুষের সাহায্যকারী ফেসবুক গ্রুপ ‘পূর্বধলা হেল্পলাইন’

সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানানোর মতো ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে 'পূর্বধলা হেল্পলাইন'

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৩

মোঃ আমিনুল ইসলাম মন্ডল:
পূর্বধলার ‘সার্চ ইঞ্জিন’ হিসেবে পরিচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রুপ ‘পূর্বধলা হেল্পলাইন’ ৫ বছর পেরিয়ে ৬ষ্ঠ বর্ষে এসে ৫০ হাজার সদস্য পূর্ন হয়েছে।

এখান থেকে নানা ধরনের সেবা-সমাধান মেলায় অর্ধ লাখ সদস্যের এ ফেসবুক গ্রুপটি ইতিমধ্যে পূর্বধলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আস্থা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে।

ফেসবুক আর ইন্টারনেট যখন মানুষের কাছে দিন দিন নেতিবাচক শব্দ হয়ে উঠছে ঠিক তখনই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই ফেসবুককেই মানুষের সাহায্যের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে পূর্বধলা হেল্পলাইন।

পূর্বধলা হেল্পলাইনের মূল প্রতিপাদ্য সাহায্যের হাত ছড়িয়ে যাক। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে একে অপরকে তথ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে পূর্বধলা হেল্পলাইন।

শুরুটা করেন সমাজসেবী ক্রিয়েটিভ মানুষ কেবিএম নোমান শাহরিয়ার। সমাজের ভালো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্য স্থানীয় প্রযুক্তির প্রেমি কয়েকজন যুবক মিলে ২০১৮ সালের ১৫ই মার্চ শুরু করে “পূর্বধলা হেল্পলাইন” নামে ফেসবুক স্থানীয় গ্রুপ যার উদ্দেশ্য একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যম তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলা, এর মুল শক্তি/প্রাণ গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপ এডমিন/মডারেটর সমন্বয় করেন।

২০১৯ সালে পূর্বধলা হেল্পলাইনের ইউনিয়ন মডারেটর যুক্ত করা হয় প্রায় প্রতিটা ইউনিয়নে মেধাবী সেচ্চাসেবী দের যুক্ত করা হয়।

পূর্বধলা হেল্পলাইনের সরাসরি উদ্যেগগুলির মধ্যে রয়েছে করোনাকালীন মুমুর্ষ রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট, পূর্বধলা বিভিন্ন স্তরের গুনীমানুষদের কর্মময় জীবন নিয়ে গ্রুপে লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন, বন্যার্থ মানুষের পার্শ্বে দাড়ানো, ক্রীড়ামুধী যুব সমাজকে উৎসাহ যোগানো, অন্যায় দূর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো, সহযোগিতা প্রার্থী মানুষকে সহযোগিতা পেতে মাধ্যম তৈরি করে দেয়া, স্থানীয়/জাতীয় যেকোন জরুরী বার্তা প্রচার করা, জাতীয় দিবসে শিক্ষর্থীদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন, গুণী মানুষদের সংবর্ধনা দেয়া, লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়ক ডাক্তারের পরামর্শ দেয়াসহ নানাবিদ সামাজিক কার্যক্রম।

পূর্বধলা হেল্পলাইন আজ ৫০ হাজার সদস্যের সুবিশাল পরিবার। এ পরিবারে সফলতার গল্প অসংখ্য, রক্তদান সহযোগিতা, হারানো পণ্য হারানো মানুষ ফিরে পাওয়া, যাতায়াত সহযোগিতা, জরুরী … নাম্বারটা দরকার, অসুস্থ, দূর্ঘটনা অবস্থায় লোকটিকে চিনতে সহায়তা, আমার অব্যবহৃত জিনিসটি আপনার দরকার বিক্রয় সহযোগিতা, এমন শতশত টপিক সফলতার সাথে সমাধান পাচ্ছেন ৫০ হাজার সদস্যের “পূর্বধলা হেল্পলাইন” পরিবার সদস্যদের মাধ্যমে।

গ্রুপের সার্চ অপশনে গিয়ে পূবর্ধলা সম্পর্কিত যেকোনো কিছু লিখে সার্চ করেই সকল তথ্য পাওয়া যায়। পূর্বধলা হেল্পলাইন এখন একটি তথ্য ভাণ্ডার বা সার্চ ইঞ্জিন হয়ে গেছে পূর্বধলাবাসীর জন্য ।’

বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২০০/৩০০ পোস্ট জমা পড়ে এই গ্রুপে। সমাধানও পাওয়া যাচ্ছে। ২০২০ সালের ৪ জুলাই একটি পোস্ট হয়েছিল কালো রং এর একটি বকনা গরু হারানো, সে সময় এই পোস্টের কমেন্টে নেগেটিভ কমেন্ট তাকলেও ১০ মিনিটের ভিতরে একজন কমেন্টে জানান “একটা গরু আমাদের এলাকায়” কমেন্টদারীর সূত্রধরেই তার ১ ঘন্টার পর পোস্টধারী কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কমেন্ট করেন তিনি তার গরুটি পেয়েছেন।

আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়, পূর্বধলা হেল্পলাইন এর মাধ্যমে ১৮ বছর পর হারানো মাকে ফিরে পায় সন্তানরা। ২০২১ সালের ১৫ মে জারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এমদাদুল হক এমদাদ পূর্বধলা হেল্পলাইন এ পোস্ট করেন ‘প্রায় ১৮ বছর যাবত একজন মহিলা জারিয়া বাজারে আছেন। সে পাগল, উচ্ছৃঙ্খল নয়, সে কোরআন এবং বাংলা পড়তে পারে তবে এলোমেলো। তার বয়স এখন আনুমানিক ৭০/৭২ হবে। নাম ময়ফল বিবি।’ পোস্ট করার পরের দিনই ময়ফল বিবির নাতি মেহেদী হাসান মিরাজ যোগাযোগ করেন ২০২১ এ বৃষ্টিস্নাত ভোরে ময়ফল বিবির মেয়ে পূর্বধলার জারিয়া বাজারে এসে পৌঁছায়। আবেগ আপ্লুত এবং আনন্দ অশ্রুর মধ্যে দিয়ে ময়ফল বিবি স্বজনদের সাথে প্রায় ১৮ বছর পর ফিরে গেলেন নিজ ঠিকানায়। সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানানোর মতো ঘটনাটির স্বাক্ষী হয়ে আছে ‘পূর্বধলা হেল্পলাইন’ । ময়ফল বিবি-কে তার কন্যা ও নাতি নাতনি ফিরে পেয়ে পূর্বধলা হেল্পলাইনে ফলোআপ পোস্ট করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

পূর্বধলা হেল্পলাইনের এর ক্রিয়েটর এডমিন জনাব, কেবিএম নোমান শাহরিয়ার বলেন, আমরা শুধুমাত্র ভার্চুয়াল জগতেই নয়, অফলাইনেও বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের টিম করে যাচ্ছেন নানা সচেতনতামূলক কাজ, করোনাকালীন সময়ে আমাদের টিম মুমুর্ষ রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট সেবা দিয়েছে জীবনের ঝুকি নিয়ে। আমরা এখন পর্যন্ত ৬০ বার অক্সিজেন সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। অসহায় ও গরীব রোগীদের বিনামূল্য সেবা দিয়েছি। আমাদের টিম বিভিন্ন সময়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিপদগ্রস্ত কিংবা অসহায় মানুষের। এছাড়াও পূর্বধলাবাসীর নানা সমস্যার প্রতিকারেও তারা কাজ করে যাচ্ছে সমানতালে। আসুন আমরা সবাই মিলে একে অপরকে সহায়তার হাত বাঁড়িয়ে দেই। আপনি যা জানুন তা অন্যদের জানিয়ে সহায়তা করুন। একে অপরকে সহায়তার মধ্যে দিয়ে আধুনিক পূর্বধলা গড়ে তুলি।

এ বিষয়ে মডারেটর শাজাহান আকন্দ বলেন, সকল সময়ে সকলের পাশে থেকে সকলকে সহযোগিতার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি প্লাটফর্ম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে পূর্বধলা হেল্পলাইন। আর এর মূল কৃতিত্ব অবশ্যই কেবি,এম নোমান শাহরিয়ার ভাইয়ের।