পূর্বশত্রুতার জেরে পানির অভাবে প্রায় ১০০ একর বোরো জমি অনাবাদি
জাকির আহমেদঃ
পূর্বশত্রুতার জেরে পানির অভাবে নেত্রকোণার মদনে প্রায় ১০০ একর বোরো জমি অনাবাদি রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মৌসুমের শেষ পর্যায়েও জমি রোপন করতে না পাড়ায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জমিগুলো চষাবাদের জন্য পরশখিলা গ্রামের অর্ধশত কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মদন সদর ইউনিয়নের গঙ্গানগর ও পরশখিলা গ্রামের মধ্যস্থলে পরশখিলা গ্রামের ৯৬ শতাংশ ভূমি রয়েছে। ওই ৯৬ শতাংশ ভূমির মধ্যে ২০ শতাংশ ভূমি গঙ্গানগর ঈদগাহ মাঠের নামে দান করেন। কিন্তু গঙ্গানগর গ্রামের লোকজন বাকি জমি গঙ্গানগর বাজারের নামে লিখে দেয়ার জন্য দাবি জানান।
পরশখিলা গ্রামের লোকজন দাবি না মানায় দুই গ্রামের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত ঈদুল ফিতরের আগে দুই গ্রামের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে দু’পক্ষের অর্ধশত লোক আহত হলে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গঙ্গানগর গ্রামের লোকজন পরশখিলা গ্রামের সড়ক পথে যাতায়াতের বাধা সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়েই ভয়ে তারা বিকল্প পথে চলাচল করছে।
এ দিকে দুইগ্রামবাসী মিলে দুই যুগ ধরে গঙ্গানগর গ্রামের পাশে নদীতে সেচযন্ত্র বসিয়ে হাওরে বোরো ফসল চাষ করে আসছে। কিন্তু চলমান বিরোধের জেরে এ বছর গঙ্গানগর গ্রামের লোকজন পরখিলা গ্রামের লোকজনের বোরো জমিতে সেচের পানি বন্ধ রেখেছে। ফলে পরশখিলা গ্রামের অর্ধশত কৃষকের প্রায় ১০০ একর জমি পানির অভাবে মৌসুমের শেষ সময়ে অনাবাদি রয়েছে।
পরশখিলা গ্রামের কৃষক লিমন মিয়া, জামাল মিয়া, কাসেম,শান্তু মিয়াসহ অনেকইে জানান,‘ দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রামবাসী মিলে আমাদের জমিতে সেচযন্ত্র বসিয়ে হাওরের বোরো জমি চাষাবাদ করছি। কিন্তু এ বছর গঙ্গানগর গ্রামের লোকজনের সাথে বিরোধ থাকায় আমাদের গ্রামের লোকজনরে জমিতে পানিতে দেওয়া বন্ধ রাখে। সোমবার এসিল্যান্ড স্যার ও কৃষি অফিসার পুলিশ নিয়ে এসের আমাদের জমিতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি। বর্তমানে আমরা খুবই হতাশায় আছি। জমি রোপন না করতে সংসার নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হবে।’
সেচযন্ত্রের অংশীদার গঙ্গানগর গ্রামের সাইদুর রহমান সম্রাট জানান,‘সোমবার উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এসে উভয় পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। বুধবার এই বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসন আবারো আলোচনায় বসবেন। হয়তো বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জানান,‘কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরশখিলা গ্রামের অনেক জমি পানির অভাবে এখনো অনাবাদি রয়েছে। জমিগুলো চাষাদের জন্য কাজ করছি।’
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ টি এম আরিফ জানান,‘ ইউএনও স্যারের নির্দেশে পরশখিলা ও গঙ্গানগর গ্রামের হাওর পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য বুধবার দুই পক্ষের লোকজনকে ইউএনও স্যারের অফিসে ডাকা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান,‘কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড ও কৃষি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা হবে।’