প্রতারণা করে বিদেশ নিয়ে টাকা হাতানোর অভিযোগে মামলা, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামের সাবাদুলকে প্রতারণা করে সৌদি আরব পাঠিয়ে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই ফুফাত বোন মোছা. মুন্নী আক্তারসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় সাবাদুলের স্ত্রী মোছা. রুমা আক্তার বাদী হয়ে গত ১৮ জানুয়ারী নেত্রকোণা বিজ্ঞ মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল মামলা করেন।
ট্রাব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক গত রোববার নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে আগামী ২৪ মার্চ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পি.বি.আই নেত্রকোনাকে নির্দেশ দেন। পিবিআই নেত্রকোনা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির গতকাল মঙ্গলবার আদালতের নির্দিশ পাওয়ার বিষয়টি জানান।
অভিযোগে জানা গেছে, নেত্রকোনা সদর উপজেলার সাজিউড়া গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে সাবাদুল জেলার কেন্দুয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত জহিরুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. মুন্নী আক্তার নাজমা সম্পর্কে ফুফাত বোন। আত্মীয়তার সুবাদে সাবাদুলকে সৌদি আরব পাঠানোর ভিসা আছে বলে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন মুন্নী। ভাল বেতন পাওয়া যাবে বলে জানান। পারিবারিক সুসম্পর্কের সুবাদে সাবাদুল মুন্নীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। পরে গত ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর মুন্নী অপরিচিত ২জনকে নিয়ে সাবাদুলের বাড়িতে যান। পাসপোর্ট, ট্রেনিং সার্টিফিকেট, মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও ছবি এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা নিয়ে তিন চার মাসের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানোর অঙ্গীকার করেন।
গত বছরের ১০ এপ্রিল ফ্লাইট বলে মুন্নী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে আরও ৪ লাখ টাকা নিয়ে সাবাদুলের হাতে পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজ বুঝিয়ে দেন। সাবাদুল ওইদিন সন্ধ্যায় দেশ ত্যাগ করেন। পরে কোন ধরণের অসুবিধে হবে না বলে সাবাদুলের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্থ করেন। এর ১৫- ২০দিন পর অজ্ঞাত এক মোবাইল থেকে ফোন করে সাবাদুল কান্নাকাটি করে জানান প্রতারণা করে ৯০ দিনের ভিসায় তাকে পাঠানো হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির জিম্মায় আটক আছেন সাবাদুল। টাকার জন্য সাবাদুলকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হয় এবং জোর করে তার পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে নেওয়া হয়। মুন্নীর মাধ্যমে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তা না হলে সাবাদুলকে জেল হাজতে অথবা অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রুমা আক্তার কয়েকজনকে নিয়ে মুন্নীর কাছে যান এবং তার স্বামীর কোথায় আছে জানতে চান। সাবাদুলকে বিদেশে পাঠানোর কথা মুন্নী অস্বীকার করেন এবং কোথায় আছে জানেন না বলে জানান।
পরে এ ঘটনায় সাবাদুলের স্ত্রী মোছা. রুমা আক্তার গত ১৮ জানুয়ারী বিজ্ঞ মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল নেত্রকোনায় মামলা করেন। মামলার বাদী মোছা. রুমা আক্তার এ প্রতিনিধিকে বলেন, জায়গা জমি বিক্রি
করে একটু সুখের আশায় স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সরলতার সুয়োগ নিয়ে আমার স্বামীকে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমি এখন একটি ছোট্ট বাচ্ছা নিয়ে খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার
চাই।
নেত্রকোণা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ মো. শাহীনুর কবির বলেন, আদালতের নির্দেশা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বাদীর সাথে কথা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।