মাওলানা আবু তাহের নেত্রকোণীঃ ইসলামি শরিয়তে গোসল হলো পবিত্রতা অর্জনের প্রথম স্তর, আর কোন ইবাদতই পবিত্রতা ছাড়া হয়না। আর এই পবিত্রতা অর্জনের জন্য অনেক নিয়মকানুন রয়েছে যা অনেকেই জানেনা। লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেসও পর্যন্ত করেন না। তাদের জন্য আজকে আমরা আলোচনা করবো গোসল নিয়ে।
গোসল চার প্রকার
১। ফরজ গোসল। ২। ওয়াজিব গোসল। ৩। সুন্নাত গোসল। ৪। মুস্তাহাব গোসল।
ফরজ গোসলঃ
➤ যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়:
◉ ১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
◉ ২. সহবাসে (সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক)
◉ ৩. মেয়েদের হায়েয-নিফাস শেষ হলে।
➤ গোসলের ফরজ তিনটি:
◉ ১. গড়গড়াসহ কুলি করা, যাতে পানি গলার হাড় পর্যন্ত পৌছে। (যদি রোজাদার না হয়)
◉ ২. হাতে পানি নিয়ে নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
◉ ৩. সমস্ত শরীর উত্তম রুপে ধৌত করা।
➤ ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম:
*গোসলের নিয়ত করা,
*‘বিসমিল্লাহ’ বলে গোসল শুরু করা।
*দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোওয়া (বুখারী–২৪৮)।
*পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা (বুখারী–২৫৭)।
*বাম হাতটি ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নেওয়া (বুখারী–২৬৬)। *নামাজের ওজুর মতো ভালভাবে পূর্ণরূপে ওজু করা।
এক্ষেত্রে শুধু পা দুটো বাকি রাখলেও চলবে, যা গোসলের শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে। (বুখারী–২৫৭, ২৫৯, ২৬৫)।
*মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজানো। (বুখারী–২৫৮)।
*পুরো শরীরে পানি ঢালা; প্রথমে ডানে ৩বার, পরে বামে ৩বার, শেষে মাথার উপর ৩ বার। (বুখারী–১৬৮)। (যেন শরীরের কোন অংশ বা কোন লোমও শুকনো না থাকে।
*পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজতে হবে।
*নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় অবশ্যই পানি ঢালতে হবে)।
*গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধোওয়া।(বুখারী–২৫৭)। এটাই হচ্ছে গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি।
উল্লেখ্য, এইভাবে গোসল করলে এর পরে নামায পড়তে চাইলে আলাদা করে ওযু করতে হবেনা, যদি না গোসল করার সময় ওযু ভংগের কোনো কারণ ঘটে থাকে।
পুনশ্চঃ গোসলের পরে কাপড় চেঞ্জ করলে বা হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভাংবেনা, এটা ওযু ভংগের কারণ না।
ওয়াজিব গোসলঃ
গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহঃ-
১। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের উপর ওয়াজিব। (ফিকহুল মুয়াস্সার-৪৪)
২। বিধর্মী ইসলাম গ্রহণ করলে যদি তার শরীর নাপাক থাকে তাহলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৩০১)
সুন্নাত গোসলঃ
১। জুমার নামাজের জন্য গোসল করা।
২। দুই ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা।
৩। ইহরামের পূর্বে গোসল করা।
৪। আরাফার ময়দানে অবস্থানের আগে গোসল করা।
মুস্তাহাব গোসলঃ
১। শাবানের পনের তারিখ রাতে।
২। কদরের রাতে।
৩। গোনাহ থেকে তওবা করার পূর্বে।
৪। সফর থেকে ফিরে আসলে।
৫। মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশের পূর্বে।
৬। মক্কা মুকাররমায় প্রবেশের পুর্বে।
৭। মুজদালিফায় যাওয়ার পূর্বে।
৮। তওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে।
৯। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পরে।
১০। নতুন কাপড় পরিধানের পূর্বে।
১১। অতিরিক্ত গরম পরলে।
১২। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজের জন্য।
১৩। এস্তেসকা (বৃষ্টির) নামাজের জন্য। ১৪। ভয় পেলে।
১৫। পাগলামী থেকে সুস্থ্য হলে।
১৬। বেহুঁশ কিংবা মাতাল ব্যক্তি হুঁশ হওয়ার পর।
১৭। পবিত্র অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করার পর গোসল করা মুস্তাহাব। তবে নাপাক অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা ওয়াজিব।
১৮। প্রবল বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময়।
১৯। অধিক অন্ধকারের সময়। (জামেউস সুনান, ফিকহুল মুয়াস্সার)
গোসল করার সুন্নাত তরীকা
১। গোসলের পূর্বে পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হলে সেরে নেওয়া।
২। গোসলের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া।
৩। গোসলের নিয়ত করা। অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করতেছি এই নিয়ত করা।
৪। গোসলের শুরুতে উভয় কবজি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া।
৫। শরীরে নাপাক থাকলে নাপাক স্থান তিনবার ধুয়ে নেয়া। লজ্জাস্থান বাম হাত দ্বারা তিনবার ধুয়ে নেয়া।
৬। গোসলের শুরুতে সুন্নাত তরীকায় অজু করে নেয়া।
৭। তারপর মাথায় পানি ঢালা এবং চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো।
৮। অতঃপর ডান কাধে পানি ঢালা।
৯। তারপর বাম কাধে পানি ঢালা।
১০। সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো।
১১। সবশেষে গোসলের জায়গায় যদি পানি জমে থাকে তাহলে সেখান থেকে সরে দুই পা ধুয়ে নেয়া। আর গোসলের জায়গায় পানি না জমলে সেখানে পা ধুয়া।
১২। গোসল সেরে রুমাল ব্যবহার করা বা না করা, উভয়টি প্রমাণিত আছে। সুতরাং যার যেটা সুবিধা সে সেটা করবে।
(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-২০৭, মায়ারিফুল হাদীস)
➤ আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ফরয গোসল করার ও এ জ্ঞান সকলের কাছে পৌছে দেয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, নেত্রকোণা - ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার মোড়, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা-২৪০০। ফোনঃ ০১৭৩৫-০৭৪ ৬০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫-৮৮ ৪০ ৫০, ই-মেইল: netrokonajournal@gmail.com
সম্পাদক কর্তৃক এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত..... [সর্বাধিক পঠিত নেত্রকোণার একটি আঞ্চলিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম]