প্রার্থীর পক্ষে শিক্ষকের ভোটের প্রচারণা, বিভাগীয় মামলা
কামরুল ইসলাম রতনঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনার বারহাট্টায় প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারণা সভায় বক্তব্য দেওয়ায় নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম এস এম সাজ্জাদুল হক (সবুজ)। তিনি বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
সোমবার বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর মামলার বিষয়ে কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে এসে পৌছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. ইলিয়াসের বাড়ি বারহাট্টা উপজেলার নুরুল্লার চর গ্রামে এক নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার লোকজনসহ তার কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে ইলিয়াসের পক্ষে বক্তব্য প্রদানকালে কাজ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজ।
ওই নির্বাচনী সভায় উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ইলিয়াস (ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী) খুব ভালো ছেলে। তাকে ধরে রাখতে হবে। ইলিয়াসের জন্য সবাই কাজ করবেন।’
ওই বক্তব্যের ভিডিও জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদ পারভেজের নজরে আসে। পরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নেত্রকোণা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি। এ ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক আলাদা ভাবে তিনটি শোকজ করা হয় ওই শিক্ষককে।
এছাড়াও ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। পরে তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক সাজ্জাদুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক ।
তবে মামলার কাগজ পৌছার আগেই অসুস্থতার জন্য এক মাসের ছুটির আবেদন করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন শিক্ষক এসএম সাজ্জাদুল হক। এমনকি অফিসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি তিনি।
এদিকে নির্বাচনী উঠান বৈঠকে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. ইলিয়াস নিশ্চিত করলে অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি- ওই সভায় থাকা এক হুজুরের কাছ থেকে তিনি বাচ্চাদের জন্য তাবিজ আনতে গিয়েছিলেন। কোন নির্বাচনী বক্তব্য দেননি।
উপজেলার অন্তত এক ডজন প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সাজ্জাদুল হক এর আগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অশালীন আচরণ করে বরখাস্ত হয়েছেন। ধর্ষণ মামলায় জেলহাজত খেটেছেন। হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। এমনকি প্রতারণা সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু এসবে তাঁর কিছুই হয়নি। উল্টো প্রমোশন হয়েছে। দূর সম্পর্কের এক কর্মকর্তার আশকারায় সাজ্জাদুল হক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সাজ্জাদুল হক কখনো কোন চিঠি রিসিভ করেন না। এখনো তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোন দিলে রিসিভ করেন না। তাই মামলার কাগজপত্র ওই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক রিসিভ করে নিয়েছেন। সাজ্জাদুল হক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে চলে গেছেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। পরে তিনি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।