বদনজর বা চোখলাগা কী: এসম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলামিক জার্নাল ডেস্কঃ
নজর অর্থ চোখ বা দেখা বা দৃষ্টিপাত। যখন কেউ কোন ব্যক্তি বা জিনিসের প্রতি আশ্চর্য হয়ে কিংবা মজা করে অথবা হিংসা করে দৃষ্টি নিক্ষেপকরত: “বারাকাল্লাহ ফীকা” বা “বারাকাল্লাহ ফীহ্” বা “মা-শাআল্লাহ” দোয়া না বলে মনে মনে বা স্বশব্দে তার গুণাগুণ বর্ণনা করে, তখন শয়তান সে সময় বর্ণিত ব্যক্তি বা জিনিসের মঝে ঢুকে আল্লাহর কাওনী তথা সৃষ্টিগত অনুমতিক্রমেই ক্ষতি করে। চোখ বা দৃষ্টিশক্তি স্বয়ং নিজে কোন ক্ষতি করতে পারে না; তাইতো অন্ধ মানুষের দ্বারাও নজর লাগে।
সূরা ইউসুফের ৬৭ নম্বর আয়াতে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যখন তাঁর পুত্রদের মিশরে পাঠাচ্ছিলেন, তখন বাড়তি করে বলে দেন যে— ‘এবং তিনি বললেন, ‘আমার প্রিয় সন্তানেরা! শহরে প্রবেশকালে তোমরা এক দরোজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরোজা দিয়ে প্রবেশ করবে’।
তাফসিরকারকগণ নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ‘এক দরোজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরোজা দিয়ে প্রবেশ করবে’— কথাটা থেকে এই অর্থ নিয়েছেন যে— ছেলেদের ব্যাপারে তিনি বদ-নজরের আশঙ্কা করেছিলেন। কারণ নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সকল সন্তানেরাই ছিলো অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান, সুঠাম দেহের অধিকারী এবং অধিকন্তু অত্যন্ত সু-দর্শন। লোকজন যখন জানবে যে এই সবগুলো (ইউসুফ আলাইহিস সালাম ব্যতীত বাকি এগারোজন) একই পিতার সন্তানাদি, তখন বদ-নজর লেগে যেতে পারে। তাই ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আগ থেকেই সন্তানদের সাবধান করে দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق
বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।
আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
استعيذوا بالله من العين فإن العين حق
তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)
ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا
বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
“তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য।” (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)
“বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর।” (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)
“কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল”
“বদ নজর সত্য তা যেন মানুষকে উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়। ”
“বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে”
“আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে।” (বুখারী)
বদ নজর সম্পর্কে মনীষীদের মতামতঃ
ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, বদ নজরের প্রতিক্রিয়া হওয়া সত্য যা আল্লাহর নির্দেশেই হয়ে থাকে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)
হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, বদনজরের মূল বিষয় হল কোন উত্তম বস্তুকে কোন নিকৃষ্ট চরিত্রের ব্যক্তি হিংসার চোখে দেখে । যার ফলে সেই মানুষ অথবা যে কোন প্রাণী, যে কোন ধরণের বস্তুর ক্ষতিসাধিত হয় । (ফতহুল বারীঃ ১০/২০০)
সংকলন:
মাও: আবু তাহের নেত্রকোণী
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখক, ইসলামিক জার্নাল বিভাগ
নেত্রকোণা জার্নাল