বাংলা ভাষা রক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক : ভাষা সৈনিক সানাউল্লাহ নূরী

১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তাকে “একুশে পদক” দেয়া হয়। 

প্রকাশিত: ২:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২৩
প্রচ্ছদ: অসীম

নেজা ডেস্ক :
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের ইতিহাসে সানাউল্লাহ নূরীর অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি ছিলেন ভাষা সৈনিক। ১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তাকে “একুশে পদক” দেয়া হয়।

জন্ম:
১৯২৮ সালের ২৮ মে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর ফলকন গ্রামে। তার বাবা মাওলানা সালামত উল্লাহ ও মাতা -মা মনসুরা বেগম । তার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

শিক্ষাজীবন:
বাড়ির কাছের অ্যাংলো-অ্যারাবিক মাদরাসা থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উ”চতর নিউ স্কিম মাদরাসায় ভর্তি হন। বাবা ইসলামিক ওয়াজ মাহফিল করবার জন্য বছরের বেশিরভাগ সময়ই নেত্রকোনায় থাকতেন।তাই   তার বাবা তাকে নেত্রকোনায় নিয়ে আসেন ১৯৪২ সালের দিকে এবং নেত্রকোনা শহরের আঞ্জুমান হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। জনাব নুরী  আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। জনাব নুরী নেত্রকোনাতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে একমাত্র শহীদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলীর বাবা জনাব আক্তার আলীর বাড়ী ইসলামপুর গ্রামে থেকে পড়াশোনা করেন। এ বাড়ী থেকেই নেত্রকোনায় তেভাগা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ত দিয়েছেন  তমদ্দুন মজলিসের নেত্রকোনা শাখার সভাপতি জনাব নুরী। জনাব নূরী মেহের আলীকে যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে গড়ে তুলেন। তিনি স্কুল ছাত্র মেহের আলীকে নিয়ে বিভিন্ন মিছিল   মিটিং এ অংশগ্রহন করতেন্। ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিসের কাজে জড়িয়ে পড়ায় জনাব নুরীর লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। পরবর্তীতে জনাব নূরী ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে বিএ পাস করেন।

কর্মজীবন:
সানাউল্লাহ নূরী ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘লুসি গ্রে’ এবং কিটসের ‘ফায়ারিং সং’ কবিতা অনুবাদ করেন। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আন্ধার মানিকের রাজকন্যা উপন্যাস লিখেছেন। তিনি বিভিন্ন সময় তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক, মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক মিল্লাত, মাহে নও, মাসিক সওগাত ও দৈনিক নাজাতে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সিলভার বার্ড নামে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থার ঢাকা শাখার পাঠ্যপুস্তক বিভাগের খণ্ডকালীন সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের ঢাকা শাখার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানের জন্মলগ্নে তিনি এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭৯ পর্যন্ত এ পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ দৈনিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৪ দৈনিক জনতার সম্পাদক এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত  দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ছিলেন। সানাউল্লাহ নূরী ছিলেন নিরলস, দক্ষ ও নির্ভীক কলমসৈনিক। চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে আমৃত্যু সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে কাজ করেছেন। তার লিখিত গ্রন্থগুলো দেশের সুধী মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।

সমাজসেবা:
সানাউল্লাহ নূরী ছিলেন একাধারে সম্পাদক, ঔপন্যাসিক, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, সংগঠক, কলামিস্ট। ১৯৮৮ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস’ গঠন করেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতি ছিলেন ১৯৭৭ থেকে আমৃত্যু। তিনি বিভিন্ন সময় ৬০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছিলেন।

পুরষ্কার ও সম্মানণা:
১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে শিল্পাচার্য পদক ও ১৯৯৫ সালে প্রদত্ত দীনেশ সেন স্বর্ন পদকে ভূষিত হন। ২০০১ সালের ১৫ জুন ইন্তেকাল করেন। ভাষা আন্দোলন ও সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য “Bangladesh Muktijudho Research Institute Silver Award-2023” সম্মাননা প্রদানের জন্যে মনোনীত করা হয়।

লেখকঃ আহমেদ সমিরুদ্দীন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, প্রাবন্ধিক।
[প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ননী গোপল সরকারের প্রবন্ধ অগ্নিযুগের সূর্যসৈনিক : বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলী, মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক : ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী , প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা, মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনী, হায়দার জাহান চৌধুরীর প্রবন্ধ “শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস “, “ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ , মহেষখলা ক্যাম্প, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খালেকদাদ চৌধুরী ও মেহের আলী প্রসঙ্গ ,নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমানের মুক্তিসংগ্রামে নেত্রকোণা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসানের গ্রন্থ “ মুক্তিযুদ্ধে মোহনগন্জ-মহেষখলা ক্যাম্প ও ডাঃ আকলাখ হোসেন আহমদ “, ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “,অসমাপ্ত গল্প, ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলো”-আমাদের ময়মনসিংহ, জাতীয় সাহিত্যিক একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক সানাউল্লাহ নূরী  সাহেবের বিবৃতি “ নেত্রকোণায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেহের আলীর স্মরণসভায় সানাউল্লাহ নূরী-  ২৬-০৬-১৯৯৪ দিনকাল, বিভিন্ন জাতীয় ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎাকার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎাকার, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, টিভি সংবাদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও, অডিও ও মেহের আলীর ডায়েরী অবলম্বনে লেখা হয়েছে।]

  1. এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন……
    বাংলাদেশে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রতীক : বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম
  2. ইতিহাসের সাক্ষী : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  3. মানব সেবার অগ্রদূত ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক : বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু
  4. লোক সাহিত্য গবেষক ও ক্রান্তিকারীঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান