বারহাট্টার নৈহাটিতে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমদের দায়িত্ব নিল প্রশাসন
লতিবুর রহমান খানঃ
নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার নৈহাটি বাজারের একটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমদের সহায়তার দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন। বাজারটিতে ওয়াক্ফ্ এস্টেটের অধীনে বেসরকারীভাবে বসানো একটি গরুর হাটের আয়ের অংশ বিশেষ প্রাপ্ত হয়ে পরিচালিত হচ্ছিল ওইসব প্রতিষ্ঠান।
গরুর-হাটটিতে খাস-কালেকশন শুরু করায় স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রশাসনের পক্ষ হতে এই সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিগত ১২ আগস্ট ২০২৪ থেকে খাস-কালেকশন হচ্ছে গরুর হাটে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটিতে অবৈধভাবে গরুর-হাট বসিয়ে বছরে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি বিগত ১২ আগস্ট দিনভর হাটে উপস্থিত থেকে খাস-কালেকশনের মাধ্যমে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর মেজর নাজমুশ সাকিব ও সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, চিরাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৈহাটী গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম, তার ভাই আলামীন ও তাদের লোকজন স্থানীয় একটি ওয়াকফ এস্টেট ও মাদ্রাসাকে সাহায্যের নামে নৈহাটী বাজারের পাশে চিরাম মৌজার ১০২২, ১৬৫৪ ও ১৮৪৩ নং খতিয়ানের ৪৭৯৪, ৪৭৯৩ ও ৪৭৯৫ নং দাগের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ৩০-৪০ বছর ধরে গরুর হাট পরিচালনা করে আসছিলেন। এ নিয়ে মামলা হলে তারা বাজারটিকে নৈহাটি মৌজায় সরিয়ে নেয় ও টোল কালেকশনের নামে চাঁদা আদায় অব্যাহত রাখেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ ও আদালতে মামলার পরও তাদের দখলমুক্ত করা যায়নি বাজারটি। প্রতি সোমবার হাট বসে এখানে। প্রতি হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা কালেকশন হয়। এই হিসাবে বছরে দেড় কোটি টাকার বেশী আয় করেছেন তারা।
প্রশাসনের সূত্র জানায়, হাট-বাজারের নীতিমালা প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২০ ধারা অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তিমালিকানাভূক্ত জমিতে হাট-বাজার গড়ে উঠলে তাহা দায়হীনভাবে সরকারের উপর বর্তাবে বা সরকার ওই হাট-বাজার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এই বিধানমতে খাস-কালেকশনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
১৯ আগস্ট ২০২৪ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি দিনভর উপস্থিত থেকে খাস-কালেকশন তদারকি করেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর মেজর জিসানুল হায়দার, ক্যাপ্টেন সাবাব, ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম ও সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বাজারের মসজিদ, মাদ্রাসা ও সংলগ্ন এতিমখানার পক্ষ হতে বিভিন্ন দাবি পেশ করা হয়। তারা বলেন, ওয়াক্ফ্ এস্টেটের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছিল। সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাদের কথা শুনে ইউএনও কর্তৃক সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি বলেন, সরকারের বিধান অনুসরন করেই খাস-কালেকশন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ স্থানীয়রা সাহায্য করেছেন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পক্ষ হতে কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। মাদ্রাসা ও এতিমদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দুইটন চালের ব্যবস্থা করেছি। মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। ডিসি স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যারও আশ্বস্ত করেছেন। মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।