বারহাট্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও রোগীরা সেবা পাচ্ছে ৩১ শয্যার

প্রকাশিত: ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৪

লতিবুর রহমান খানঃ
নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি। ২০২২ সালে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়। পরবর্তীতে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনও পায়। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় চালু হয়নি ৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবা।

উন্নতমানের ৫০ টি বেড ও সমানসংখ্যক ডাইড থাকার পরও রোগীরা পুরাতন বেড ও ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি, এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান। পুরুষ রোগীদের ইসিজি করেন ওয়ার্ড বয় তবে মহিলা রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে ইসিজি করতে হয়। তাই কাগজে কলমে ৫০ শয্যা হলেও এটি চলছে ৩১ শয্যার জনবল ও চিকিৎসক দিয়ে।

উপজেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কমপ্লেক্সটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে সেই লক্ষ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় দুই লাখ জনগোষ্ঠী। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল দ্রুত নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নিয়মানুযারী একটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে মোট ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং একজন করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু, গাইনি, কার্ডিওলজি, অ্যানেসথেশিয়া, দন্ত, চক্ষু, ইউনানি, চর্ম ও যৌনসহ ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এ ছাড়া ১৭ জন মেডিকেল অফিসার, ৩১ জন সেবিকা (নার্স), তৃতীয় শ্রেণির ৭৩ এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৮ জন কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তুু বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন ১৭ জন ডাক্তার। তার মধ্যে দুইজন ডাক্তার ডেপুটেশনে আছেন অন্য হাসপাতালে। নার্স কর্মরত আছেন ২২ জন তার মধ্যে এক জন নার্স ডেপুটেশনে আছেন অন্য হাসপাতালে । তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক পদই খালি পরে আছে বহুদিন ধরে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এর আগে নেত্রকোণা সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন এই উপজেলার মানুষ। বারহাট্টা উপজেলার জনসংখ্যা এবং ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় এনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নিত করা করা হয়। তবে দীর্ঘ সময়ে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি। ফলে ৫০ শয্যার আধুনিক ভবন চালু না হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০ শয্যার আধুনিক ভবনটির বেড ও ক্যাবিন সহ বেশ কিছু কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আলেয়া বেগমসহ অন্তত দশজন রোগী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট ও রোগ নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। নারী ও শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা আরও নাজুক। কমপ্লেক্স থেকে কিছু ওষুধ পাওয়া গেলেও বাকি সব বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও বেড সংকট থাকার কারণে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনবলের অভাবে ৫০ শয্যার নতুন বিল্ডিংয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের পরও আমরা সেখানে যেতে পারছি না। জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই সংকট কেটে যাবে।তিনি আরো জানান কম জনবল নিয়েও ভালো মান সম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।