বেগম রোকেয়া পদক (মরণোত্তর) পাচ্ছেন কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা
নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
এবার নেত্রকোণা থেকে নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় মরণোত্তর বেগম রোকেয়া পদক পাচ্ছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু’র সহধর্মিণী এবং জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর, ২০২৪) সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ পদক তুলে দিবেন।
এর আগে চলতি বছরের ১লা জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০ টা ২০ মিনিটে ৬৪ বছর বয়সে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা কিডনী জনিত সমস্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতালে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি একাধারে ক্রীড়াবিদ, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা নেত্রকোণা জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, নেত্রকোণা জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য, দি হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেন এর অধ্যক্ষ, নেত্রকোণাস্থ বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, ডায়েবেটিক সমিতি, পাবলিক লাইব্রেরি, রাইফেলস ক্লাব এবং শিল্পকলা একাডেমীর আজীবন-সদস্য ছিলেন।
এছাড়াও এবছর সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখায় এবার পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩’ দেয়া হচ্ছে।
অন্যান্যের মধ্যে নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য পদক পাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম (ঢাকা জেলা)। তাকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করা হচ্ছে। এছাড়া নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার (রংপুর জেলা), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার (লক্ষ্মীপুর জেলা) ও পল্লী উন্নয়নে অবদান রাখায় পদকটি পাচ্ছেন রনিতা বালা (ঠাকুরগাঁও জেলা)।
পদকপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করবেন। তাদের ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, প্রত্যেককে ৪ লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র উপহার দেয়া হবে।
উল্লেখ যে, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। আমৃত্যু তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। নিজের গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোয় সেই স্বপ্নের কথাই তিনি লিখে গেছেন। কাজ করে গেছেন নারী শিক্ষার প্রসারে।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৩” উদযাপন এবং “বেগম রোকেয়া পদক” প্রদানের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। দিবসটি উপলক্ষে নারী জাগরণের অগ্রদূত ও মানবমুক্তির অগ্নিশিখা মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও উদ্যোগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখবেন—এটাই সবার প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর দুঃখ-দুর্দশা ও সমান অধিকারের দাবি বেগম রোকেয়ার সাহিত্যে জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। নারী জাগরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের কন্যাগুলিকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন আধুনিক নারী। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তার এ উপলব্ধি ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আমি বাঙালি নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এ বছর যারা “বেগম রোকেয়া পদক” পেয়েছেন আমি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীকে সম্পৃক্ত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা ১৯৯৭ সালে প্রথম জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষণা করি। ২০০৯ সালে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা দেশে নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করছি। বাল্যবিবাহ নির্মূলের জন্য বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে।’