
ইসলামিক জার্নাল ডেস্ক :
আমি লজ্জিত আমি ব্যথিত আমি চির অনুতপ্ত আমি নির্বাক আমি হতবাক আমি অবাক সারাহপ্ত। আমি নিন্দিত আমি বঞ্চিত আমি কলঙ্কে হই তিক্ত, আমি তৃষিত আমি পীড়িত আমি সব হারিয়ে রিক্ত। আমি তিমির আমি বধির আমি অস্থির পরিতাপে, আমি শান্ত পুড়ে ক্লান্ত আরো পুড়ছি ধাপেধাপে।
আমি মজলুম বলছি; হে জালেম! তোমার অত্যাচারে আমার জন্ম। তোমার নিপীড়নে আমার বেড়ে উঠা। ভেতরে জ্বেলেছো যে শোকানল, তাতে শুকিয়ে গেছে আমার অশ্রু ফোটা। ফলে ভুলে গেছি স্নানাহার। ভুলে গেছি সোনালি অতীত ও ভাবী স্বপ্নচার। তোমার নির্যাতনে নিষ্পেষিত হয়েও আমি বাঁচতে চেয়েছি। বুকের ব্যথা আর চোখে অশ্রু নিয়ে দিবারাত্রি তোমার থেকে পরিত্রাণ চেয়েছি।শেষ রক্ষা হয়নি।এ জুলুমের বিনিময়ে মহান মালিকের কাছে শত বঞ্চনার প্রাপ্তি আশা করি ।
একদিন তুমি থাকবে না আমিও থাকবো না । দাঁড়াবো একই সাথে সুমহান ইনসাফগার মহান স্রষ্টার আদালতে। সেদিন তোমার থেকে আমার প্রাপ্য ফিরিয়ে নেবো । সেদিন আল্লাহর ফয়সালা আমাকে সন্তুষ করে দিবেন আর তুমি হবে সেদিন চির অনুতপ্ত, চির বঞ্চিত এবং চির ধিকৃত।
সেদিন আমার হৃদয়ে তোমার জন্য করোনা হবে। আফসোস করে বলবো আহ্! কেন তুমি দুনিয়াতে বুঝলে না! কেন আমার অধিকার ও স্বাধিনতার মূল্য দিলে না! কেন আমার উপর দয়া করলেনা! আমাকে ফাঁসিয়েছো মিথ্যা অপবাদে , আমাকে হত্যা করেছো বিনা অপরাধে । এতীম করেছো আমার সন্তান , আমার স্ত্রীকে করেছো বিধবা আর বাবা-মাকে করেছো সন্তান হারা । তাদের কান্না আহাজারিতে দুনিয়া কেঁদেছে শুধু কাঁদোনি তুমি । কতো পাষাণে গড়া তোমার হৃদয়।
কি ক্ষমতা, কি দাপট, কী সুবিধা তোমার ভুবনে। কতো ধনবল, কতো জনবল, কতো সম্মানি তুমি সবখানে। আদালত তোমার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে না , মোড়ল মাতব্বরগণ পোষা পাখির মতো তোমার শেখানো কথার বাইরে কিছু বলে না । কী আশ্চর্য তোমার অস্থায়ী জীবনের সুখাসন । বলো সত্যি করে বলো ! তুমি যা করছো, শেষ বিচারে কোন জবাব কিবা কোন প্রস্তুতি কি আছে তোমার!
বল প্রয়োগে অন্যের জমি দখল করেছো, নির্ধারিত কাজের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দিয়েছো, অহেতুক কাউকে শাস্তি দিয়েছো, অবিচার করেছো, নিয়োগকৃত শ্রমিককে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে, নির্ধারিত সময়ে মজুরি না দিয়ে কতো জুলুম করেছো। তোমার কর্ণকুহরে কি পৌঁছেনি সে বানী? নবী করীম (সা.) বলেন, জুলুম জালিমের জন্য কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে আসবে। -বুখারী১৩৭৫
একজন মানুষ যতই নেককার হোক, যতই নামাজ-রোজা তাসবীহ-তাহলীল করুক, যদি সে জুলুমকারী হয় তবে তার জন্য শাস্তি অনিবার্য। সে পৃথিবীতে ও পরকালে লাঞ্ছিত হবে। জুলুম অত্যাচার যে জঘন্যতম অপরাধ, তা তোমার অভিধানে কেন সেইভ করলেনা।
হে জালেম যতো সৎকর্মই তুমি করো না কেন তা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শেষ বিচারের দিনে শাস্তি প্রদান থেকে বাঁচাতে পারবে না।
যে জুলুম করে সে-ই জালেম। দুনিয়ায় জালেমের কোনো ধর্ম নেই, তারা মানবতার শত্রু। জালেমের শাস্তি আল্লাহ খুব দ্রুত দেন, কেননা মজলুমের অভিশাপ আল্লাহর কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়। আর আল্লাহ জালিমকে অভিশাপ দেন। সে লাঞ্ছিত হয় পৃথিবীতে, সে লাঞ্ছিত হয় পরকালে। রাসূলে করীম (সা.) এ জন্য আমাদের সবাইকে জুলুম তথা আল্লাহর অভিশাপের ব্যাপারে সাবধান করে বলেন, সাবধান,জিলুম থেকে বাঁচো, জালিমের ওপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ।-বুখারী ১৩৭১
এমনকি হজ্বে আরাফার দিনেও আল্লাহ জুলুমকারীকে ক্ষমা করবেন না। ইয়াওমে আরাফার দিনে তার উম্মতের ক্ষমার জন্য নবী সা. প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ উত্তরে বললেন- আমি জুলুমের অপরাধ ব্যতীত অন্যদের অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি জালেমের কাছ থেকে নির্যাতিতের পক্ষে যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিয়েই ছাড়বো। (তিরমিযি)
হে জালিম আরো শুনো! অত্যাচারী আচার-আচরণে যতই ধার্মিক মনেহোক না কেন আল্লাহর অভিশাপ তার উপর পড়বেই। জালেম যতই পূণ্যের ভাণ্ডার জমা করুক না কেন তার কোন মুক্তি নেই। কেননা আল্লাহ কিয়ামতের দিন মজলুমের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবেন। যার বিরুদ্ধে আল্লাহ স্বয়ং দাঁড়িয়ে যাবেন সে কিভাবে মুক্তি পেতে পারে!
লেখক :মুফতি আতাউল্লাহ বাশার
শিক্ষক, দারুসসালাম মাদ্রাসা বাজিতপুর কিশোরগঞ্জ