মদনে সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২:১৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণার মদনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেই চলছে নির্মাণ কাজ।

এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে চাঁদাবাজির অপবাদ দেয় ঠিকাদারের লোকজন। অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পূণঃনির্মাণের আশ্বাস দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-খালিয়াজুরী সড়কের মদন উপজেলার জয়পাশা গ্রামের পাশে বয়রাহালা নদীর ওপর একটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ সেতুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে যশোরের মইন উদ্দিন বশীর লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ ৬১ হাজার ৪১০ টাকা।

২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

জেলা সদর নেত্রকোনার সাথে মদনের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ব্যস্ততম এ সড়কটি। পাশের উপজেলা আটপাড়ার একাংশ ও খালিয়াজুরির লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে থাকে। ওই রাস্তায় জয়পাশা গ্রামের পাশে বয়রাহালা নদীর ওপর ১৯৯৫ সালে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। বেইলি সেতুটি অধিক ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম করছেন ঠিকাদার।

নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার, এপ্রোচে বালুর সাথে মাটি মিশ্রণ করা হচ্ছে। এপ্রোচের প্রটেকশনে ব্যবহৃত ব্লকগুলো নিম্নমানের, আকারেও বিভিন্ন ধরেণর ও ভাঙাচোরা। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই স্থানীয়দের চাঁদাবাজির অপবাদ দেয় ঠিকাদারের লোকজন।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার সরজমিন গেলে দেখা যায়, মূল সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এপ্রোচ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এপ্রোচের ব্লক নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরগুলো ময়লাযুক্ত ও নিম্নমানের। ভাঙাচোরা ব্লক বসিয়ে প্রটেকশনের কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শফিক মিয়া, হাইউল মিয়া, সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকেই জানান,‘পুরো কাজেই অনিয়ম করেছে ঠিাকাদার। অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই ঠিকাদারের লোকজন চাঁদাবাজির অপবাদ দিয়ে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনিয়ম ধামাচাপা দিয়েই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণে কোন অনিয়ম করা হয়নি। চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্ন সময় স্থানীয় কিছু লোকজন নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়ে সময়ক্ষেপন করেছে। তাই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা হবে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম মিত্র বয়রাহালা সেতুর এপ্রোচ নির্মাণের পরিদর্শনে এসে ভাঙাচোরা ব্লক ব্যবহার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটা অনিয়ম। ভাঙা ব্লক পরিবর্তন করার জন্য ঠিাকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল নূর সালেহীন জানান, নির্মাণ কাজে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। যদি অনিয়ম করে থাকে আমি সরজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’